সিবিএন ডেস্ক:
রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফিরিয়ে নিতে কতটা অগ্রগতি হলো, তা পর্যালোচনার জন্য মঙ্গলবার ঢাকায় আলোচনায় বসছেন দুই দেশের কর্মকর্তারা। এমন এক সময়ে এ আলোচনা হচ্ছে, যখন বাংলাদেশের দেওয়া আট হাজার রোহিঙ্গার তালিকা থেকে ৪ হাজার ৬০০ জনকে শনাক্ত করতে আট মাসের বেশি সময় নিয়েছে মিয়ানমার।
মিয়ানমারের কাছে দেওয়া রোহিঙ্গাদের তালিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, গত ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারকে ৮ হাজার ৩২ রোহিঙ্গার তালিকা দেওয়া হয়। এ পর্যন্ত ১৯ দফায় ৪ হাজার ৬০০ জনকে ফেরানোর বিষয়ে মিয়ানমার সম্মতি জানিয়েছে। তালিকায় থাকা ৮ হাজারের মধ্যে ৬ হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে যাচাই-বাছাই করেছে দেশটি। নানা অজুহাতে মিয়ানমার অন্তত দেড় হাজার রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে রাজি নয়। এদের মধ্যে অন্তত ৫২ জনকে সন্ত্রাসী হিসেবে অভিহিত করেছে মিয়ানমার।
এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার দুই দেশের মধ্যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের (জেডব্লিউজি) তৃতীয় বৈঠকে হতে যাচ্ছে। এতে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক। মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলের প্রধান দেশটির পররাষ্ট্রসচিব মিন্ট থোয়ে। বৈঠকের পরদিন বুধবার কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে যাবে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদল।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিয়ানমার বেশ কিছুদিন ধরে বলে আসছে, রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফিরিয়ে নিতে তারা তৈরি আছে। কিন্তু বাংলাদেশের আগ্রহের অভাবে তাদের ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার কী কী করেছে, বাংলাদেশ তা স্পষ্টভাবেই দেশটির কাছে জানতে চাইবে। বিশেষ করে শুধু ঘরবাড়িই নয়, পুনর্বাসনসহ রোহিঙ্গাদের রাখাইনে স্থায়ীভাবে রাখার উপযোগী পরিবেশের স্বার্থে মিয়ানমার কী করেছে, বাংলাদেশ তা জানতে চাইবে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য গত বছরের ২৩ নভেম্বর নেপিডোতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলরের দপ্তরের মন্ত্রী চ টিন্ট সোয়ে চুক্তি সই করেন। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৬ সালের অক্টোবরের পর যেসব রোহিঙ্গা এসেছে, শুধু তাদের ফেরত পাঠানোর জন্য বিবেচনা করা হবে। চুক্তির ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালের ১৯ ডিসেম্বর ঢাকায় পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্রসচিব মিন্ট থোয়ের বৈঠকে ৩০ সদস্যের জেডব্লিউজি গঠন করা হয়।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, রাখাইনে ফেরার পর রোহিঙ্গাদের জাতীয়তা যাচাইয়ের জন্য এনভিসি (নাগরিকত্ব যাচাইয়ের প্রাথমিক পরিচয়পত্র) কার্ড দেওয়ার কথা বলছে মিয়ানমার। এই প্রক্রিয়া নিয়ে রোহিঙ্গাদের অনীহা রয়েছে। এ সমস্যা সুরাহার জন্যও মিয়ানমারকে অনুরোধ জানাবে বাংলাদেশ। এদিকে মিয়ানমারের সঙ্গে জেডব্লিউজির পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে রোববার রোহিঙ্গাবিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্সের সভা হয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। পররাষ্ট্রসচিব বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতা শুরু করলে পরবর্তী কয়েক মাসে অন্তত সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এর আগে ২০১৬ সালের অক্টোবরে রোহিঙ্গাদের ওপর আরেক দফা নৃশংসতা শুরু করলে অন্তত ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে আশ্রয় নেয় বাংলাদেশে। জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ও বাংলাদেশ সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী কক্সবাজারের বিভিন্ন শিবিরে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।