হাফিজুল ইসলাম চৌধুরী :
‘পরিষ্কার হাত সুস্বাস্থ্যের উপায়’- এই প্রতিপাদ্য নিয়ে কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গাশিবিরেও বিশ^ হাত ধোয়া দিবস ২০১৮ উদযাপিত হয়েছে। মঙ্গলবার (২৩ অক্টোবর) সকাল সাড়ে এগারটায় উখিয়ার জামতলীস্থ ক্যাম্প-১৫ এ বিশ্ব হাত ধোয়া দিবসের অনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। শরণার্থী ত্রাণ প্রত্যাবাসন কমিশনের তত্ত্বাবধানে- ক্রিশ্চিয়ান এইডসহ মোট ১৫টি উন্নয়ন সংস্থা সমন্বিত ‘ওয়াশ সেক্টর’ যৌথ উদ্যোগে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। অর্থায়নে ছিল ইউনিসেফ। টি-শার্ট, ফেস্টুন ও ব্যানার সহযোগে বর্নাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে কর্মসূচি আরম্ভ হয়। দুহাজার রোহিঙ্গার অংশ গ্রহণে শোভাযাত্রাটি রোহিঙ্গা শিবির প্রদক্ষিণ করেন। পরে হাত ধোয়ার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। চলে পথ নাটক এবং হাত ধোয়ার প্রশিক্ষণ পর্বও।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামতলী ১৫-এর ক্যাম্প ইনচার্জ (সিআইসি) মোঃ শফিক উদ্দিন বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে এ ধরনের সচেতনতামূলক উদ্যোগ খুবই সময়োপযোগী একটি পদক্ষেপ। যেহেতু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী আমাদের মতোই রান্না-খাওয়ায় সাধারণত হাত ব্যবহার করে থাকে, তাই হাত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নতুবা খাদ্যগ্রহণের সময় হাতে থেকে রোগ-জীবাণু পেটে গিয়ে আক্রান্ত করবে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক সচেতনতামূলক কর্মসূচি ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে যেতে হবে। প্রকৃতপক্ষে, শুধুমাত্র দিবস পালনের মাধ্যমে মানুষের অভ্যাস পরিবর্তনের মতো বিষয়টি নিশ্চিত করা কঠিন। দীর্ঘমেয়াদী কর্মসূচিই পারে রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্যের ইতিবাচক পরিবর্তন বয়ে আনতে।
সভায় ক্রিশ্চিয়ান এইড-এর সাইট কোঅর্ডিনেটর কর্মকর্তা লাইজু বেগম জানান, ইতোমধ্যে বিভিন্ন দাতা সংস্থার সহায়তায় ক্রিশ্চিয়ান এইড প্রায় ৫৫ হাজার ৩৫০ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের মাঝে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় প্রয়োজনীয় উপকরণ বিতরণ করেছে। প্রতি তিনমাস ব্যবধানে এই উপকরণ বিতরণ চালু রেখেছে সংস্থাটি। একইসাথে, সংস্থাটি গত একবছরে প্রায় ৬৭০ টি হাইজিন সেশন বা ব্যক্তিগত ও পারিপার্শ্বিক স্বাস্থ্যচর্চা বিষয়ক পাঠদান কর্মসূচির মাধ্যমে এখনও পর্যন্ত ২২ হাজার ৭৫০জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করেছে।
সূত্র জানায়- বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস পালনের এই আয়োজনের অংশ হিসেবে আগামী ২৮ ও ২৯ অক্টোবরেও থাকবে আরো দু’টি পথনাটক। পুরোমাস জুড়েই স্বাস্থ্যবিধি ও স্যানিটেশন নিয়ে সচেতনতার লক্ষ্যে নানা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরসহ সারাদেশে। সবার সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে সারাবিশ্বে প্রতিবছর ১৫ অক্টোবর বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস হিসেবে পালিত হয়। তবে বাংলাদেশে পুরোমাস জুড়েই জাতীয় স্যানিটেশন মাস উদযাপিত হয়ে থাকে। আর তাই অক্টোবর মাসের প্রতিটি দিনকে ব্যক্তিগত ও পারিপার্শ্বিক স্বাস্থ্যবিধি ও স্যানিটেশন বিষয়ক সচেতনতামূলক দিন বলে বিবেচনা করে থাকে বাংলাদেশ সরকার। জামতলী ক্যাম্প-১৫ কর্তৃপক্ষও একইভাবে পুরোমাস জুড়ে এই প্রচারণা চালাবার উদ্যোগ নিয়েছে।
প্রতিটি মানুষের হাত ধোয়ার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা জরুরি। ইউনিসেফ-এর গবেষণামতে, শুধুমাত্র খাওয়ার আগে, রান্নার আগে ও টয়লেট ব্যবহারের পর সাবান দিয়ে হাতধোয়ার সুঅভ্যাস গড়ে তুললে সারাবিশ্বে ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত মৃত্যুহার প্রায় ৪০ শতাংশ কমিয়ে আনা যায়। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া প্রায় ৬ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মাঝে হাত ধোয়া বিষয়ে সচেতনতার অভাব লক্ষ্য করা গেছে। এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করলে, বিশেষ করে শিশুদের পানি ও মলবাহিত রোগে আক্রান্ত হবার হার অনেকটা কমে আসবে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।