ইমাম খাইর, সিবিএন:
গত ছয় মাস আগে জলদস্যূদের নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচার করে দেশের অন্যতম বেসরকারী টিভি চ্যানেল টুয়েন্টিফোর। তখন তারা ঘোষণা দিয়েছিলেন আত্মসমর্পণের। তার ধারাবাহিকতায় গেল ২০ অক্টোবর মহেশখালীতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করে ৬ টি জলদস্যূ ও সন্ত্রাসী বাহিনীর ৪৩ জন সদস্য। যার মধ্যে ৫টি বাহিনীর ৩৭ জন সদস্য আত্মসমর্পণ করে আকরাম হোসাইনের মধ্যস্থতায়। আকরাম হোসাইনের মধ্যস্থতায় এই আত্মসমর্পণের মধ্যদিয়ে শান্তি ফিরতে শুরু করেছে কক্সবাজার উপকূলে।
চ্যানেল ২৪ এর অনুসন্ধানী প্রতিবেদক আকরাম হোসাইনের বাড়ি কক্সবাজার জেলার পেকুয়ায়। সাংবাদিকতা পেশায় বেশী দিন না হলেও বুদ্ধিবিচক্ষণতায় অনেক দূর এগিয়েছেন।
যেসব দস্যু ও সন্ত্রাসীদের কারণে তটস্থ উপকূলের মানুষ, ওইসব মানুষগুলোকে কাবু করেছেন সাংবাদিক আকরাম। তার মাধ্যমেই অপরাধীরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগটি কাজে লাগাবে। বিগত ৩ বছর ধরে দক্ষিণ চট্টগ্রামের জলদস্যু ও সন্ত্রাসীদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন তিনি।
র‌্যাব ৭ এর অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মিফতাহ উদ্দিন আহমদ, সিনিয়র এএসপি শাহেদা সুলতানা এবং মেজর মেহেদী হাসানের একান্ত সহযোগিতায় পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা হয়। আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়া দক্ষিণ চট্টগ্রামের জন্য প্রথম হওয়ায় একটু কঠিন ছিল। তবে চট্টগ্রামের সন্তান হওয়ায় দস্যুদের বুঝানোর প্রক্রিয়াটি তুলনামূলক সহজ হয়। দক্ষিণ চট্টগ্রামের অধিকাংশ সন্ত্রাসীরা চট্টগ্রামের ভাষায় কথা বলেন। তাই তাদের সাথে আলোচনায় ভাষার মেলবন্ধন ছিল গুরুত্বপূর্ণ। আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল আকরাম হোসাইনের। ছয়টি বাহিনীর ৪৩ জনের মধ্যে আকরামের মধ্যস্থতায় আত্মসমর্পণ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ৫টি জলদস্যূ ও সন্ত্রাসী বাহিনীর ৩৭ জন সদস্য। যা একটি ইতিহাসও বটে।
এব্যাপারে আকরাম হোসাইনের কাছে জানতে চাইলে বলেন, এই অন্ধকার জগতের মানুষ গুলোর আস্থা এবং বিশ্বাস অর্জন খুবই কঠিন। দীর্ঘ প্রচেষ্টায় তাদের আস্থা অর্জন করে এতগুলো বাহিনীর একসাথে আত্মসমর্পণ উপকূলে শান্তি ফেরানোর প্রথম ধাপ পার করলাম।
তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত জলদস্যু সোনাদিয়া দীপের জাম্বুর সাথে ২০১৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি বান্দরবানে দেখা হয়। মূলতঃ স্থানীয় প্রশাসনের হাত থেকে বাচতে জাম্বু পার্বত্য জেলা বান্দরবানে অবস্থান করছিল।
ঘটনাচক্রে জাম্বু যে একজন চিহ্নিত জলদস্যূ ও প্রশাসের তালিকাভুক্ত, তা জানতে পেরে তার সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলি। সম্পর্ক গভীর করি। তার মাধ্যমে অন্যান্য দস্যূদের সাথেও শুরু হয় যোগাযোগ। এভাবে দীর্ঘদিন তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করি। তাদের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করি।
কারণ, এই অন্ধকার জগতের মানুষগুলো তাদের আপনজনকেও বিশ্বাস করে না। সেটি মাথায় রেখে তাদের মনমানসিকতা বোঝার চেষ্টা করি। পরবর্তীতে তারা আমাকে বিশ্বাস করতে শুরু করে। আমিও তাদের বিশ্বাসের বীজটা আরো গভীরে পৌঁছানোর কৌশল ধরি। অনেকটা সক্ষমও হয়েছি। দীর্ঘ প্রচেষ্টা চালানোর পর ২০১৮ সালে তারা ক্যামেরার সামনে এসে কথা বলতে রাজী হয়। এরপর তাদের নিয়ে চ্যানেল টুয়েন্টি ফোরের প্রতিবেদন তৈরির জন্যে তাদের প্রস্তাব দেই। এই প্রস্তাব দেওয়ার পর তাদের দলগত ভাবে মতপার্থক্য ছিল, অবিশ্বাস ছিল। আবার সেই অবিশ্বাস দূর করে আস্থা ফিরে আনার জন্যে সংগ্রাম শুরু করি । পরবর্তীদের তারা প্রতিবেদন তৈরিতে সম্মতি প্রকাশ করে। এর পর চ্যানেল টুয়েন্টিফোরে জল দস্যু নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদন প্রচার করা হয়। প্রতিবেদনে তাদের সুখ-দুঃখের কথা তুলে ধরা হয়।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বস্থ করা হয়, তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসলে আইনগত প্রক্রিয়ায় তাদেরকে বরণ করে নেওয়া হবে। এরপর দফায় দফায় আলোচনার মাধ্যমে তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সম্মতি প্রদান করে। তাদের আলোচনার স্থানগুলো ছিল জনবিচ্ছিন্ন দুর্গম পাহাড় আর প্যারাবন। সেখানে নিজের সাথে সাথে কাউকে নেওয়া যায় না। তাদের দেওয়া লোকের সাথে অগ্রসর হতে হয়। মোবাইল নিয়ে যাওয়াও নিষেধ।
কঠিন নিয়ম মেনেই যেতে হয় দস্যুদের আস্তানায়। কোনো কোনো সময় চোখ বেঁধে ফেলা হয়, যাতে পরবর্তীদের রাস্তা শনাক্ত করতে না পারি। ছিল অনেক গডফাদারের হুমকি আর প্রলোভন। তাদের রক্তচক্ষু আড়াল করে র‌্যাব-৭ কর্মকর্তাদের আলোচনার মাধ্যমে তাদেরকে ফিরিয়ে আনার ব্যাবস্থা করা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দেওয়া তারিখ অনুযায়ী তাদের হেফাজতে নেয় র‌্যাব।
উল্লেখ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত জলদস্যূ যে মোর্কারম হোসেন প্রকাশ জাম্বুর সাথে পরিচয় হয়েছিল সে ২০১৭ সালে র‌্যাবের সাথে গোলাগোলিতে নিহত হয়। অবশেষে শত বাঁধা ডিঙিয়ে গেল ২০ অক্টোবর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের হাতে ৫ টি বাহিনীর ৩৭ জন সদস্য অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করে। এসময় ৯৪টি অস্ত্র ৭ হাজার ৬৩৭টি গোলাবারুদ হস্তান্তর করা হয়।
শনিবার (২০ অক্টোবর) দুপুর ১২টার দিকে মহেশখালী আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে র‌্যাব এই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
সেখানে মহেশখালীর আনজু বাহিনীর ১০ জন সদস্য, ২৪টি অস্ত্র, ৩৪৫ টি গোলাবারুদ, রমিজ বাহিনীর ২ জন, ৮ টি অস্ত্র ১২০ টি গোলাবারুদ, জালাল বাহিনীর ১৫ জন, ২৯ টি অস্ত্র ৬ হাজার ৭৯৮ টি গোলাবারুদ, আইয়ুব বাহিনীর ৯ জন, ৯টি অস্ত্র ৩৭ টি গোলাবারুদ ও আলাউদ্দিন বাহিনীর ১ জন, ১ টি অস্ত্র, ৪টি গোলাবারুদ ও নুরুল আলম ওরফে কালাবদা বাহিনীর ৬ জন ২৩ টি অস্ত্র, ৩৩৩ টি গোলাবারুদ হস্তান্তর করা হয়।
এর মধ্যে রয়েছে- এসএমজি ১ টি, ব্রিটিশ ৩৪ রিভলবার ১টি, দেশি পিস্তল ২ টি, দেশি একনলা বন্দুক ৫২টি, দেশি দুই নলা বন্দুক ২টি ওয়ান শ্যুটারগান ১৯টি, থ্রি কোয়ার্টার ১৫টি ও ২২ বোর রাইফেল।
সুত্র জানায়, মহেশখালী এবং কুতুবদিয়া উপকূলের বঙ্গোপসাগরে জেলেদের ত্রাস আনজু বাহিনী। এই বাহিনীর হাতে নিয়মিত ডাকাতি ও হতাহতের শিকার হতো জেলেরা। আনজু বাহিনীর অত্যাচারে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা বন্ধ করে পেশা পরিবর্তন করেছে এমন জেলের সংখ্যা অগণিত।
আনজু বাহিনীর মত মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপকূলের ৬টি বাহিনীর ৪৩ জন সশস্ত্র জলদস্যু র‌্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। এসময় তারা ৯৪ টি অস্ত্র ও ৭ হাজার ৬৩৭ রাউন্ড গোলাবারুদ জমা দেয়।
উপকূলে দাপিয়ে বেড়ানো ভয়ঙ্কর এই ছয় বাহিনী হলো- আনজু বাহিনী, রমিজ বাহিনী, জালাল বাহিনী, আইয়ুব বাহিনী, আলাউদ্দিন বাহিনী ও কালাবদা বাহিনী। এই ছয় বাহিনীর আদ্যোপান্ত তুলে ধরা হলো-
আনজু বাহিনী:
আনজু বাহিনীর প্রধান আনজু মিয়া (৩৩)। দীর্ঘ এক যুগ আগে দস্যুতায় জড়িয়ে পড়ে আনজু মিয়া। ১২/১৫ জন সন্ত্রাসী নিয়ে গড়ে তুলে নিজস্ব একটি জলদস্যু বাহিনী। নিজের নামে গড়ে তোলা এই আনজু বাহিনী উপকূলের জন্য ভয়ঙ্কর ত্রাস। আনজু বাহিনীর গোপন আস্তানা ছিল সোনাদিয়া দ্বীপের প্যারাবনে। সেখানে অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহ করতেন তিনি। সেখান থেকে সমস্ত অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতেন। বঙ্গোপসাগরে জেলে এবং স্থলে লবণচাষীরা তার কাছে জিম্মি ছিল।
দীর্ঘ এক যুগের এই জলদস্যূ জীবনে আনজু মিয়ার বিরুদ্ধে ডাকাতিসহ বিভিন্ন আইনে ১২ টি মামলা হয়েছে। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের করা জলদস্যু তালিকায় তার নাম উঠে আসে। এরপর ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পৃথক দুই তালিকাতেও তার নাম শীর্ষ জলদস্যূ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
কিন্তু দীর্ঘদিনের দস্যু জীবন ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার চেষ্টা করে শীর্ষ জলদস্যু আনজু। তার দলের সদস্যদের নিয়ে সম্প্রতি কুতুবজোম ইউনিয়নের ঘটিভাঙা এলাকার প্যারাবনে একটি মাধ্যমে র‌্যাবের কাছে আত্মসমর্পণের দাবি জানান আনজু।
পরে শনিবার (২০ অক্টোবর) দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে অস্ত্র জমা দিয়ে ৯ জন সদস্যসহ আত্মসমর্পণ করেন। আনজু ছাড়া আত্মসমর্পণ করা তার দলের অন্য সদস্যরা হলেন- সুমন মিয়া (৩৮), মকছুদ মিয়া (৩২), মোনাফ মিয়া (২৮), মোবারক (২৭), মনজুর মিয়া (৩০), নুরুল মোস্তফা নাগু (৩০), ছৈয়দ হোসেন (৩০), নবাব মিয়া (২৯) ও ইমতিয়াজ উদ্দিন নকিব (৩১)। তারা সকলেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের তালিকাভুক্ত জলদস্যু। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আনজু বাহিনী ২৪ টি অস্ত্র এবং ৩৪৫ গোলাবারুদ জমা দেয়।
রমিজ বাহিনী:
কুতুবদিয়া উপকূলের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রমিজ বাহিনী। বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়া চ্যানেলে প্রতিদিন মাছ ধরার ট্রলার ডাকাতি করতো এই বাহিনী। এই বাহিনীর কারণে দ্বীপে চরম আতঙ্ক বিরাজ করতো।
রমিজ বাহিনীর প্রধান হলেন রমিজ উদ্দিন (৫৩)। তার বাড়ি কুতুবদিয়ার উত্তর ধুরুং ইউনিয়নের মিরাকাটা এলাকায়। তার বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা রয়েছে। রমিজ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত জলদস্যু।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অস্ত্র জমা দিয়ে বাহিনী প্রধান রমিজ উদ্দিন তার বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড ছালেহ আহম্মেদ প্রকাশ ছইল্লা ডাকাত (৪৬) নিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন। এসময় তারা ৮টি অস্ত্র ও ১২০ রাউন্ড গোলাবারুদ জমা দেয়।
জালাল বাহিনী:
জালাল বাহিনী প্রায় ১০ বছর ধরে মহেশখালীর হোয়ানক ইউনিয়নে চিংড়ি চাষ, পানের বরজ, লবণ মাঠ, ধানি জমি দখলসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। এই বাহিনী তার প্রতিপক্ষ বাহিনীর সাথে দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে অস্ত্র, গোলাবারুদ ও সন্ত্রাসী দল ভারি করত। অত্যন্ত ধুরন্ধর এই বাহিনী প্রায় ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল। র‌্যাব দীর্ঘ গোয়েন্দা নজরদারির পর গত ২০১৬ সালের ৯ জুন আটটি অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ জালাল বাহিনীর প্রধান জালাল উদ্দিনকে আটক করে। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।
জালাল বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড মো. ঈসমাইল ১৪ জন সদস্য নিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন। এসময় এই বাহিনী ২৯ টি অস্ত্র ও ৬ হাজার ৭৯৮ রাউন্ড গোলাবারুদ জমা দেয়।
জালাল বাহিনীর আত্মসমর্পণ করা সদস্যরা হলেন- মো. ঈসমাইল, মোস্তফা কামাল পারভেজ, ওসমান, আহমদ জামান, নুরুল আমিন, আবু তাহের, আব্দুল মান্নান (১), আব্দুল মান্নান (২), রাশেদ, লোকমান, জয়নাল আবেদিন, মেসা. শহিদুল্লাহ, বাদল, মাহাবুব আলম ও আতা উল্লাহ বাহারী।
আইয়ুব বাহিনী:
আইয়ুব বাহিনী হোয়ানকের আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী বাহিনী। এই বাহিনীর ৯ জন সদস্য ৯টি অস্ত্র ও ৩৭ রাউন্ড গোলাবারুদসহ আত্মসমর্পণ করেছে। আত্মসমর্পণ করা সদস্যরা হলেন- আব্দুল মান্নান কালু, মো. জসিম, রবিউল আলম, মো. রুবেল, আবু তাহের, মো. আনোয়ার, আনোয়ার পাশা, মো. ইউনুছ, মো. কামাল।
আলাউদ্দিন বাহিনী:
ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী আলাউদ্দিন একটি অস্ত্র ও চার রাউন্ড গোলাবারুদসহ আত্মসমর্পণ করেছেন।
কালাবদা বাহিনী:
মহেশখালীতে ভয়ঙ্কর ত্রাস কালাবদা বাহিনী। চিংড়ি ঘের দখল, লবণ মাঠ দখল, বাজারে আধিপত্য বিস্তার ছিল এই বাহিনীর মূল কাজ। দীর্ঘদিন ধরে এই বাহিনীর হাতে জিম্মি পুরো কালারমছড়াবাসী। কালাবদা বাহিনীর কারণে কালারমারছড়া এলাকায় অন্যকোন বাহিনী ভিড়তে পারতো না। খুন, ডাকাতিসহ বিভিন্ন আইনে একাধিক মামলা আছে কালাবদা বাহিনীর প্রধানের বিরুদ্ধে।
কালাবদা বাহিনীর প্রধান হলেন নুরুল আলম ওরফে কালাবদা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অস্ত্র জমা দেওয়ার মাধ্যমে ৫ জন সদস্য নিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন কালাবদা। এই বাহিনী জমা দেয় ২৩টি অস্ত্র ও ৩৩৩ রাউন্ড গোলাবারুদ। এরমধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অস্ত্র এসএমজি (বেলজিয়াম) একটিও আছে।
নুরুল আলম ছাড়া কালাবদা বাহিনীর আত্মসমর্পণ করা সদস্যরা হলেন- রশিদ মিয়া, মোহাম্মদ আলী, আলমগীর প্রকাশ টুইন্না, মো. আবু জাফর ও মো. আলাউদ্দিন।
আত্নসমর্পনকারীদের বিষয়ে র‌্যাব-৭ কক্সবাজার ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার মেজর মোঃ মেহেদি হাসান বলেন, যারা আত্মসমর্পণ করেছেন এদের মধ্যে এমনও সন্ত্রাসী আছেন, যার বিরুদ্ধে ৪১টি মামলা পর্যন্ত রয়েছে। প্রথম দফায় ৪৩ জন সন্ত্রাসী আত্মসমর্পণ করলেও দ্বিতীয় ধাপে আরও ২০০-২৫০ সন্ত্রাসী আত্মসমর্পণের বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। আত্মসমর্পণের পরে তাদের মামলাগুলো আইন অনুযায়ী চলবে।
তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরানোর পাশাপাশি পুনর্বাসনের বিষয়েও উদ্যোগ নেওয়া হবে। এমনকি আত্মসমর্পণ করা সন্ত্রাসীদের প্রত্যেককে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে আট লাখ করে পর্যায়ক্রমে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে বলেও জানান মেজর মেহেদী।