বিদেশ ডেস্ক : 

ইস্তানবুলের কনস্যুলেট ভবনের অভ্যন্তরে খাশোগি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার স্বীকারোক্তি দিলেও একে কয়েকজন গোয়েন্দা সদস্যের বিধিবহির্ভূত পদক্ষেপ হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে সৌদি আরব। তারা বলতে চাইছে, কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা ছাড়াই ১৫ সদস্যের গোয়েন্দা স্কোয়াড নীতিবর্জিত অবস্থান থেকে খাশোগিকে খুন করেছেন। ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল জুবেইর দাবি করেছেন, ওই গোয়েন্দা সদস্যরা ‘ভুলবশত’ খাশোগিকে খুন করার পাশাপাশি ঘটনাটি আড়াল করতে চেয়েছেন। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, জামাল খাশোগিকে হত্যার ঘটনায় দায়ীদের সাজা দিতে সৌদি আরব বদ্ধপরিকর।

খাশোগি
২ অক্টোবর ইস্তানবুলে সৌদি কনস্যুলেট ভবনে প্রবেশের পর নিখোঁজ হন সৌদি অনুসন্ধানী সাংবাদিক জামাল খাশোগি। শুরুতে সৌদি আরব দাবি করেছিল তিনি ভবন থেকে জীবিত বের হয়ে গেছেন। তুরস্ক দাবি করে, ১৫ সদস্যের একটি গোয়েন্দা স্কোয়াড কনস্যুলেট ভবনের ভেতরেই খাশোগিকে হত্যা করেছে। সৌদি আরব এই অভিযোগ অস্বীকার করে এলেও শুক্রবার (১৯ অক্টোবর) মধ্যরাতে প্রথমবারের মতো তারা খাশোগি নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করে। তবে সৌদি আরবের দাবি,খাশোগিকে হত্যার উদ্দেশ্য তাদের ছিল না। খাশোগি কনস্যুলেট ভবনের ভেতরে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন এবং ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তার মৃত্যু হয়।

আদেল আল জুবেইর বলেন, ‘এ অভিযানটি ছিল নীতিবিবর্জিত এক অভিযান। কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ও নিজেদের দায়বোধকে ছাপিয়ে গিয়ে এ অভিযান চালানো হয়েছে। কনস্যুলেটে জামাল খাশোগিকে হত্যা করে তারা ভুল তো করেছেই আবার সে কথা তারা ধামাচাপা দিতে চেয়েছে।’ খাশোগিকে হত্যার ঘটনায় সৌদি যুবরাজের সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেছেন আল জুবেইর। তিনি বলেন, ‘অভিযুক্তদের কেউই তার (সৌদি যুবরাজ) সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত নয়।’ গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ ব্যক্তিও এ ব্যাপারে কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন তিনি।

সৌদি আরব বলছে, খাশোগির মৃত্যুর ঘটনায় তারা ১৮ সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করেছে এবং কয়েকজন গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছে। তবে সমালোচকদের দাবি, যে ধরনের জটিল পরিস্থিতি তৈরি করে খাশোগিকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে তা সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের অজান্তে হতে পারে না।

জামাল খাশোগি
ফক্স নিউজের সাংবাদিক ব্রেট বাইয়েরকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল জুবেইর আরও জানান, সৌদি আরব বর্তমানে খাশোগির মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত করছে। তাদের হত্যায় জড়িত ১৮ ব্যক্তিকে যথাযথভাবে শাস্তি দেওয়া হবে। আল জুবেইর দাবি করেন, জামাল খাশোগি হত্যার ঘটনায় তাদের তদন্ত একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে আছে এবং এখন পর্যন্ত সৌদি কর্মকর্তারা জানেন না, তার মৃত্যুর যথার্থ কারণ কী ও তার দেহাবশেষ কোথায়। ফক্স নিউজের সাংবাদিক ব্রেট বাইয়েরকে উদ্দেশ্য করে জুবেইর বলেন, ‘আপনি যখন এ ধরনের পরিস্থিতিতে পড়বেন, তখন যতটা সম্ভব সঠিক তথ্যই পাওয়ার চেষ্টা করবেন।’ জুবেইর বলেন, ‘সব সত্য কথা বের করে আনতে আমরা বদ্ধপরিকর। যারা এ হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী তাদেরকে সাজা দেওয়ার ব্যাপারেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আমরা।’

ঘটনার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সৌদি আরবকে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়ী করেনি তুরস্ক। তুর্কি তদন্তকারীরা বলে আসছেন, তাদের কাছে অডিও ও ভিডিও প্রমাণ আছে, যেখানে দেখা গেছে কনস্যুলেটের ভেতরে সৌদি এজেন্টদের একটি দল খাশোগিকে হত্যা করছে। তুর্কি পুলিশ ইস্তানবুলের পার্শ্ববর্তী বেলগ্রাড জঙ্গলে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে। তাদের আশঙ্কা খাশোগিকে হত্যার পর তার মরদেহ জঙ্গলে পুঁতে ফেলা হয়েছে। সৌদি কনস্যুলেট ভবন ও সৌদি কনসাল জেনারেলের বাসায়ও অভিযান চালানো হয়েছে।

রবিবার (২১ অক্টোবর) ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাদের প্রতিবেদক এক সৌদি কর্মকতার সঙ্গে কথা বলেছে। ওই কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জানিয়েছেন, খাশোগি তাকে সৌদি আরবে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করতে চেয়েছিলেন এবং দুই পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তির সময় শ্বাসরোধ হয়ে তার মৃত্যু হয়। এরপর তার মরদেহ কম্বলে মুড়িয়ে বের করা হয় এবং তা সৎকারের জন্য ইস্তানবুলের স্থানীয় এক সহযোগীকে দেওয়া হয়। এরপর সৌদি কর্মকর্তাদের একজন খাশোগির পোশাক পরে কনস্যুলেট ভবন ত্যাগ করেন। খাশোগির মৃত্যু নিয়ে একাধিকবার সৌদি কর্তৃপক্ষের বিবৃতি পরিবর্তন হওয়ার প্রশ্নে সাফাই গেয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, ওই সময়ে অভ্যন্তরীণভাবে সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছে ‘ভুয়া প্রতিবেদন’ জমা দেওয়া হয়েছিল।