কক্সবাজারের উখিয়ায় সরকারি বন দখল করে পাকা বসতবাড়ী সহ বিভিন্ন স্থাপনা তৈরীর উৎসব চলছে। এ নিয়ে স্থানীয় বনবিট কর্মকর্তার যোগসাজশের অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বনবিভাগের উখিয়া রেঞ্জের হলদিয়া বিটের আওতাধীন জামবাগানের পুরো এলাকাজুড়ে কাঁচা ও পাকা-আধাপাকা সহ নানা স্থাপনা তৈরী হচ্ছে। প্রকাশ্যে দিবালোকে এসব স্থাপনা তৈরী হলেও স্থানীয় বিট কর্মকর্তা নির্বিকার রয়েছেন।
স্থানীয়রা অভিযোগে জানান, হলদিয়া বিট কর্মকর্তা সরকারি বন দখলদারদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নেয়ায় এসব স্থাপনা তৈরীতে কোন ধরণের হস্তক্ষেপ করছেন না। এতে হলদিয়া বিটের আওতাধীন জামবাগান পুরো এলাকাজুড়ে বন দখল করে স্থাপনা তৈরীর হিড়িক পড়েছে।
শনিবার কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের উখিয়া রেঞ্জের হলদিয়া বিটের আওতাধীন জামবাগান এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পুরো এলাকাজুড়ে সরকারি পাহাড় দখল করে প্রভাবশালী লোকজন সহ স্থানীয়রা নানা স্থাপনা তৈরী করছে। ইতিমধ্যে অধিকাংশ পাহাড় দখল করে নানা স্থাপনা তৈরী হয়েছে। অনেকে এসব পাহাড়ে নির্মাণ করছে পাকা দালান।
প্রকাশ্যে দিবালোকে এসব স্থাপনা তৈরী হলেও স্থানীয় বনবিট কর্তৃপক্ষের কোন ধরণের তৎপরতা দেখা যায়নি। এতে সংশ্লিষ্টদের বাধা না থাকায় নির্বিঘ্নে নানা স্থাপনা তৈরী করছে দখলদাররা।
বনবিভাগের তথ্য মতে, উখিয়া রেঞ্জের হলদিয়া বিটের আওতাধীন বনভূমি রয়েছে ২৫ হাজার হেক্টরের বেশী। যার ৯০ ভাগই ইতিমধ্যে দখলদারদের দখলে চলে গেছে। অন্য যেটুকু অবশিষ্ট আছে তাও দখল হয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে জামবাগান এলাকায় চলছে নানা স্থাপনা তৈরীর হিড়িক।
হলদিয়া বিটের স্থায়ী কোন কার্যালয় না থাকলেও বিট কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিনের ভাড়া বাসাকে অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
সরেজমিন দেখা যায়, হলদিয়া বিটের আওতাধীন জামবাগান থেকে মরিচ্যা এলাকা পর্যন্ত পাতাবাড়ী সড়কের দু’পাশের পাহাড়ে পাকা ও আধাপাকা দালান সহ নানা স্থাপনা তৈরীর হিড়িক। দখলদাররা প্রকাশ্যে এসব স্থাপনা তৈরী করলেও বনবিভাগের সংশ্লিষ্টদের কোন ধরণের তৎপরতার দেখা মিলেনি।
জামবাগান এলাকায় সড়কের পাশে ইট, বালি ও কংকর স্তুপ করে পাকা দালান নির্মাণকাজ চালাতে দেখা গেছে স্থানীয় মৃত মির আহমদের ছেলে মো. জহির (৫০), মৃত লোকমান হাকিমে ছেলে আব্দুল আজিজ (৩৫) ও দলিল আহমদ সহ আরো অনেকে।
এমনকি মো. জহির পাকা দালানের ছাদ তৈরীর কাজ দিনের মধ্যেই শেষ করতে শতাধিক শ্রমিক নিয়োগ করেছেন।
এছাড়া পাতাবাড়ী সড়কের মরিচ্যা এলাকায় পাকা দালান নির্মাণকাজ চালাচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দা আবু তাহের, মঞ্জুরুল ইসলাম ও রমজান আলী সহ আরো অনেকে।
খোদ স্থানীয় বনবিট কার্যালয় ( এক সময় বিট কার্যালয় ছিল ) পাহাড় কেটে চলাচলের পথ তৈরী করে পাকা দালানের বসতবাড়ী নির্মাণ করেছে দলিল আহমদ এবং সড়কের পাশে দোকানঘর তৈরী করেছেন আব্দুল আজিজ।
এমন কি স্থানীয় বিট কর্মকর্তার ভাড়া বাসায় উপস্থিত না থাকায় সেখানে গিয়েও সাক্ষাৎ করা সম্ভব হয়নি।
জামবাগান এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা জয়নাল উদ্দিন (৫৫) অভিযোগ করেন, স্থানীয় হলদিয়া বনবিট কর্মকর্তা অধিকাংশ সময় নিজের কর্ম এলাকায় উপস্থিত থাকেন। মাঝে মধ্যে এলেও দখলদারদের সঙ্গে লেনদেনে ব্যস্ত থাকেন। এতে দখলদারদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান না থাকায় সরকারি পাহাড় দখল হয়ে যাচ্ছে।
একই এলাকার মোস্তাক আহমদ (৩৫) বলেন, স্থানীয় বিট কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন মাঝে মধ্যে লোক দেখানো অভিযান চালিয়ে সাধারণ মানুষের কাঁচা স্থাপনা উচ্ছেদ করেন। মূলতঃ বিট কর্মকর্তার দাবি করা টাকা না দেয়ায় এ অভিযান চালানো হয়।
কিন্তু প্রকাশ্যে দিবালোকে প্রভাবশালী লোকজন পাকা দালান সহ নানা স্থাপনা তৈরী করলেও কোন ধরণের হস্তক্ষেপ করা হয় না বলে অভিযোগ করেন তিনি।
মোস্তাক বলেন, ” দখলদারদের কাছ থেকে স্থানীয় বিট কর্মকর্তার মোটা অংকের টাকা লেনদেন হওয়ায় পাকা দালান নির্মাণকারিদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না। এসব স্থাপনা নির্মাণকারিদের কাছে তিনি জনপ্রতি ৪/৫ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছেন। “
অথচ পাকা দালান নির্মাণকাজ অব্যাহত থাকা অবস্থায় বিট কর্মকর্তাকে স্থানীয়রা অভিযোগ দেয়ার পরও কোন ধরণের ব্যবস্থা নেননি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
জামবাগান এলাকার আরেক বাসিন্দা জালাল উদ্দিন অভিযোগ করেন, ” স্থানীয় বিট কর্মকর্তা অধিকাংশ সময় কর্ম এলাকায় অবস্থান করেন না। ফলে দখলদারদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্টদের কোন ধরণের তৎপরতা না থাকায় হলদিয়া বিটের আওতাধীন অধিকাংশ সরকারি পাহাড় দখল হয়ে গেছে। এতে এসব পাহাড়ে নানা স্থাপনা তৈরীর হিড়িক পড়েছে। “
দখলদারদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করেন হলদিয়া বিট কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন।
তিনি বলেন, দখলদারদের বিরুদ্ধে অভিযান না চালানোর অভিযোগটি সত্য নয়। ইতিমধ্যে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে অবৈধ দখলে যাওয়া ৮ টি পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে গড়ে উঠা স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। দখল অভিযান অব্যাহত থাকবে।
তবে বিট কার্যালয়ে শুধুমাত্র একজন মালী কর্মরত থাকার কথা উল্লেখ করে মহিউদ্দিন বলেন, জনবল সংকটের কারণে অনেক সময় অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো সম্ভব হয় না।
উখিয়া রেঞ্জের বন কর্মকর্তা কাজী তারিকুর রহমান বলেন, হলদিয়া বিটের অধীন জামবাগান এলাকায় কিছু সরকারি পাহাড় দখল করে নানা স্থাপনা তৈরীর কথা শুনেছি। এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিয়ে অভিযান চালানোর পাশাপাশি দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ইতিমধ্যে অবৈধ দখলদার মো. জহির নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে সরকারি পাহাড় দখল করে পাকা দালান নির্মাণের অভিযোগে নোটিশ দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
তারিকুর বলেন, ” অবৈধ দখলদার জহির জায়গাটি জোত বলে দাবি করেছেন। এর স্বপক্ষে তাকে এক সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট নথিপত্র দেখিয়ে প্রমানের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি যথাযথ প্রমানে ব্যর্থ হলে নির্মিত পাকা দালান অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করা হবে। “
এদিকে হলদিয়া বিট কর্মকর্তা মহিউদ্দিনের যোগসাজশে দখলে যাওয়া সরকারি পাহাড় দখলমুক্ত করার জন্য বনবিভাগের সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের ভারপ্রাপ্ত বনসংরক্ষক হক মাহবুব মোরশেদ বলেন, সরকারি পাহাড় দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট নির্দেশ দেয়া হয়েছে।