তানভীর রিপন

পার্বত্য চট্টগ্রাম ডিবেট ফেডারেশন এর দ্বিতীয় আন্তঃকলেজ বিতর্কতে আমাকে অতিথি করে নিয়ে যাওয়ার সুবাধে আমার দু-কথা বলার সুযোগ হয়েছিলো।

বিচারকের দ্বায়িত্ব পালনের পর আমি প্রায় পাঁচ কি চার মিনিটের একটা বক্তৃতা দিয়েছিলাম ভরা মজলিশে। আমি তার চেয়েও বেশি বলতাম তবে চাকমা রাজা দেবাশীষ রায়ের কলটা পাওয়ার পর আমি দ্রুত তার কাছে যাওয়ার জন্যই কথা সংক্ষিপ্ত করেছিলাম।

যা বলেছিলাম সেদিন

এই সব পবিত্র সব উদ্যোগ ঝরে যায় মাত্র স্পন্সর না পাওয়ার কারনে। যে হোটেলটি এই পবিত্র আয়োজনে দুঃসাহসী ভূমিকা রেখেছেন তাকেই ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

আমরা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।আমরা বড় সেজে থাকি ছোটদের কাছে অথচ আমরা ছোটোদের শোনি না। আমি খুব অল্পসময় বলবো-এই সময়টা আমি উপস্থিত সকলের কাছে প্রার্থনা করে পেয়েছি।

আসি ভূমিকাতে –

বিতর্কের প্রতিপ্রাদ্য অনুসারে দুদলই খুব ভালো বিতর্ক করেছো। আমি শহর থেকে এসে শহরের বিতার্কিকদের মতো তোমাদের ওপর বিতর্কের নিয়ম শিখিয়ে দিতে পারব না। এখানে আমার হাতে ৩০ নম্বর আছে এই ত্রিশ নম্বরই আমার ক্ষমতা। আমি ভালো, মোটামুটি প্রমিত বাংলাতে কথা বলতে পারি বলেই আমি উচ্চারণের জন্য কর্তৃপক্ষ যে নির্দেশনা দিয়েছে সে নির্দেশনা মতে নম্বার কাটতে পারতাম। কিন্তু আমি কাটিনি?কেনো? কারন আছে। সে কারন হলো, আমাদের এখানে আঞ্চলিক প্রবনতা থাকবে এটা বৈচিত্রতা। বিতর্ক কারো আবিষ্কার না যে এখানে কারো বলে দেওয়া নিয়মকে মেনে আমার দ্বায়িত্ব পূরন করতে হবে।আমাদের আঞ্চলিক প্রবনতা আছে,থাকবে। কারন আমরা নদীয়া অঞ্চলের মানুষ৷ এই পাহাড়ের লোকেদের ভাষা বৈচিত্রা আছে সুতরাং আমার নম্বর বন্টনে আমি আঞ্চলিকতা দোষের জন্য কারো নম্বর কাটিনি। যা কেটেছি তাহলো উপস্থাপন ভঙ্গির জন্য।যারা বিতর্ক করেছো তাদের জন্যই বলছি ” বিতর্ক বিজয়ী বলতে কিছুই নাই।পার্সেপশন নিয়ে জয় পরাজয় সৃষ্টি করার মানেই হলো পৃথিবীতে সংঘাত সৃষ্টি করা,হিংসা সৃষ্টি করা। আমি হিংসা সৃষ্টির একজন কলকাটির ভূমিকাতে আছি। ভাষা-বিজ্ঞান যারা বোঝো তাদের কাছে আমার একটি শব্দ সহজ হবে সেটি হলো ” প্রোপাগান্ডা “যারা প্রোপাগান্ডা বোঝোনা তারা বিষয়টি সম্পর্কে জেনে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।আমি কাউকে পরামর্শ দিচ্ছি না, আমি সেটা দেওয়ার কেউ নই।আমি আমার অভিজ্ঞতা এবং পরিসর থেকে বলছি।জয় একটি সংঘাত মূলক প্রোপাগান্ডা।

এবার আসি বিতর্কের প্রতিপাদ্যের কথায়ঃ

সড়ক আন্দোলন নিয়ে মন্তব্য সংগ্রহের জন্য আমি বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের মন্তব্য সংগ্রহের কাজটা করেছিলাম সেখানে আমার দুটো মন্তব্য সুন্দর মনে হয়েছে। পেশাগত দ্বায়িত্বে ব্যক্তিগত পছন্দ বলতে কিছুই থাকে না। তারপরেও আমি আমার কমফোর্ট জোন থেকে যখন কাজ করি সেহেতু এই এক্সট্রা পছন্দ অপছন্দ সুবিধাটা ভোগ করতে পারি।

অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বললেন ” আইন নয় শুধু কঠোরভাবে এই আইনের প্রয়োগ করতে হবে সরকারের। “

আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ বললেন ” যার জীবন নিয়ে যে অবগত নয়,সেতো অন্যের জীবনকে যেকোনো রকম অবস্থানে ফেলে দিতে পারবে।সুতরাং শিক্ষিত ড্রাইভার জরুরী।”

বিতর্কের প্রতিপাদ্য হলো ” সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধের একমাত্র লক্ষ্য সচেতনতা “

আমি এখনো গ্রাজুয়েট নই, অনার্স পড়ছি। আমার পাশে আরো তিনজন সম্মানিত জনেরা বসে আছেন “একজন জাতীয় বিতার্কিক এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের একজন চাকরিজীবী, উনি গ্রাজুয়েট।সম্মানিত সভাপতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে গ্র্যাজুয়েট, এবং সরকারের গেজেট ভুক্ত ক্যাডার, এই কলেজের সম্মানিত শিক্ষক আরো একটা পরিচয় হলো আমি যে ডিপার্টমেন্টে পড়ি সে ডিপার্টমেন্ট চেয়ারম্যানের বন্ধুও তিনি।শেষে যিনি আছেন তিনিও একজন শিক্ষক এবং গ্রাজুয়েট। উনারা শিক্ষিত এবং সচেতন(!)আশ্চর্য বোধক চিহ্ন এই বাক্যের শেষে ভাবতে হবে।

উনাদের মতো অসংখ্য শিক্ষিত ব্যক্তি এই সমাজের এই রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদ গুলো দখল করে নিজ নিজ যোগ্যতায়। তাহলে কেনো এই সমাজ,এই রাষ্ট্রে ” স্বজনপ্রীতির মতো ভয়ংকর রোগ,দুর্নীতির মতো রাষ্ট্রীয় পাপ ঘটে?তারপরেও কেনো এই সমাজে অন্যায় হয়?অনৈতিক কর্মকাণ্ড আশ্রয় পায়? তাহলে শিক্ষিতও সচেতন হওয়া একমাত্র সমাধান নয়।

তাহলে সমাধান কি?

আত্মোন্নয়ন।

নিজেকে যখন মানুষ ভাববে।মানুষ হিসেবে মানুষের দ্বায়িত্বটা নিজে অনুভব করতে পারবে,মানুষের গুরুত্ব বুঝবে,সময় শুধু নিজের নয় অন্যেরও এতে ভাগ আছে সেসব বিষয়কে অনুধাবন করতে পারবে ঠিক তখনই একজন ড্রাইভার থেকে জনসাধারনের সেবক পর্যন্ত সকলে আরামে দাড়াও বললে আরামেই দাড়াবে এর আগে কোনোকিছুই কাজে দিবে না।

প্রত্যেকের প্রতি ভালবাসা। আমি অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে বিদায় নিচ্ছি মাঝখানে।আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আয়োজকদের,স্পন্সর যিনি করেছেন তাদের।

আমি ভালো আছি। আপনারাও ভালো থাকবেন।