মান্যবর প্রধানমন্ত্রী,

আপনার সমীপে ট্যুর অপারেটরস্ এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক) এর আকুল আবেদন।

পর্যটন রাজধানীখ্যাত কক্সবাজার জেলা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য আকর্ষনীয় ভ্রমনস্থান। কক্সবাজার জেলায় আগত পর্যটকদের ভ্রমন সুবিধা প্রদানকারি একমাত্র সংগঠন “ট্যুর অপারেটরস্ এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার” (টুয়াক) অত্র অঞ্চলে পর্যটনশিল্প বিকাশে কাজ করে যাচ্ছে দীর্ঘ ১৫ (পনের) বৎসর ধরে। কক্সবাজারে আগত ভ্রমনপিপাসু পর্যটকদের জেলার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ভ্রমন করানোসহ বৃহৎ একটি অংশকে প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন ভ্রমনের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পাদন করে থাকে ট্যুর অপারেটরগণ। এই দ্বীপকে সুপরিচিত ও পর্যটকবান্ধব করতে টুয়াকের অবদান অনস্বীকার্য। সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটনশিল্প কেন্দ্রিক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৫০০০০ (পঞ্চাশ হাজার) জনসাধারণ জীবিকা নির্বাহ করে। সেন্টমার্টিন পর্যটক পরিবহনে যে কোন বিধি-নিষেধ বিশাল এই জনগোষ্টির উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। সেন্টমার্টিন পর্যটক পরিবহনকে ঘিরে যে কোন প্রতিবন্ধকতার কারণে ৫-৬টি জাহাজ, ২০০-৩০০ বাস-মিনিবাস, ১০০ মাইক্রোবাস, ২০০ ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠান, ৪০০ টুরিষ্ট গাইড এবং দ্বীপের ১০৪ টি হোটেল-কটেজ ও ৫০ টি রেস্তোরায় কর্মরত কর্মচারী এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীগণ সম্পূর্ণ নিঃস্ব হয়ে পড়বে।
বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে পর্যটনকে শিল্প ঘোষনা করার পর হতে দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে সম্পূর্ণ বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পর্যটনশিল্প বিকশিত হয়েছে। সেন্টমার্টিনদ্বীপে পর্যটন বিকশিত হবার পূর্বে স্থানীয় জনগণ সমুদ্র হতে মাছ আহরনের পাশাপশি প্রবাল উত্তোলন, প্রবাল পাথরকে নির্মাণ কাজে ব্যবহার, মাছের অভয়ারণ্য ধ্বংস, শামুক-ঝিনুক সংগ্রহ করে নানা উপায়ে জীবিকা নির্বাহ করত। পর্যটনকে বিকল্প জীবিকায়ন হিসেবে পাওয়ার পর স্থানীয় জনগণের মধ্যে আমুল পরিবর্তন আসে এবং তারাই পরিবেশ রক্ষায় সোচ্ছার ভুমিকা রেখে চলেছে। পর্যটনকে ভালবেসে বাৎসরিক মাত্র ০৪ (চার) মাসের ব্যবসা করার ঝুঁিক নিয়ে স্থানীয় জনগণ ও উদ্যোগক্তারা বিপুল বিনিয়োগ করে কোনমতে জীবিকা নির্বাহ করে যাচ্ছে। কমিউনিটি বেইজ্্ড ট্যুরিজমকে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ২০১৬ ও ২০১৭ সালকে পর্যটনবর্ষ ঘোষনা করলে সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দারা উৎসাহিত হয়ে তাদের বাসা-বাড়ির এক-দুই রুম পরিবেশবান্ধব অতিথিশালা তৈরী করে পর্যটক সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। উল্লেখ্য যে, সেন্টমার্টিন দ্বীপকে প্রতিবেশ সংকটপন্ন এলাকা ঘোষনার পূর্বে নির্মিত ২/৩টি বিল্ডিং হোটেল ছাড়া বাকি সব স্থাপনা সেন্টমার্টিন দ্বীপের ভারসাম্য রক্ষার অনুকুলে ইকো-ট্যুরিজম ব্যবস্থাপনায় নির্মিত।
সম্প্রতি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, গত ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় পরিবেশ অধিদপ্তরের সুপারিশ সহকারে প্রতিবেদনে বলা হয়- প্রায় প্রতিদিন ২০ হাজার পর্যটক সেন্টমার্টিন দ্বীপে যাতায়াত ও রাত্রিকালিন অবস্থান করে, ২০টি জাহাজ প্রতিদিন চলাচল করে এবং রাস্তা নির্মানের কারণে দ্বীপের ক্ষতি সাধিত হয়েছে। সংবাদটি সেন্টমার্টিন দ্বীপ নির্ভর পর্যটন ব্যবসায়ী এবং স্থানীয় জনসাধারণকে উদ্বিগ্ন ও বিস্মিত করেছে। কারণ পর্যটন মৌসুমে প্রতিদিন মাত্র ৫-৬টি জাহাজের মাধ্যমে সব্বোর্চ দুই থেকে আড়াই হাজার পর্যটক যাতায়াত করে আর তার প্রায় ২০ শতাংশ রাত্রীযাপন করে থাকে। সম্পূর্ণ দ্বীপে প্রায় ২০কি.মি. রাস্তা থাকলেও মাত্র দুই থেকে আড়াই কি.মি. রাস্তা পাকা করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে অসঙ্গতিপূর্ণ তথ্যের কারণে আন্তঃমন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে- আমরা তার সাথে দ্বিমত পোষন করছি। সেই সাথে অভিজ্ঞ পরিবেশবিদ দ্বারা পরিবেশগত ভারসাম্যের সঠিক ক্ষতি নিরুপনের মাধ্যমে পুনঃরায় প্রতিবেদন তৈরীর অনুরোধ জানাচ্ছি
অপরদিকে বৈশি^ক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্র পৃষ্টের পানির উচ্চতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনে সেন্টমার্টিন দ্বীপে ভবিষ্যতে কি কি ক্ষতি সাধিত হতে পারে এবং উক্ত ক্ষতি মোকাবেলায় কোন পরিকল্পনা না করে শুধুমাত্র পরিবেশের অযুহাতে পরিকল্পিত স্বল্প মেয়াদী, মধ্য মেয়াদী ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনাসমূহ দ্বীপবাসি এবং পর্যটন ব্যবসায়ীদের জন্য কোন ষড়যন্ত্র কিনা তা আমাদের বোধগম্য নয়। ইতিমধ্যে সেন্টমার্টিন দ্বীপকে মায়ানমার তাদের মানচিত্রে প্রদর্শিত করা আমাদের দুঃচিন্তা আরো বেড়ে গেছে। আমরা দৃঢ়চিত্তে বলতে চাই দ্বীপের অধিবাসি এবং দ্বীপ নির্ভর পর্যটন ব্যবসায়ীগণ দ্বীপকে অনেক ভালবাসি তাই দ্বীপের পরিবেশগত বিষয়ে আমরা অনেক বেশী সচেতন।
বিগত বৎসর রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশজনিত কারণে আমরা মারাত্মকভাবে ব্যবসায়িক ক্ষতির স্বীকার হয়েছি। অথচ কোন প্রকার সরকারি বা অন্য কোন সংস্থা হতে সহায়তা বা অনুদান পর্যটন ব্যবসায়ীরা পায়নি। উক্ত ব্যবসায়িক ক্ষতি এখনো কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আরোকটি ধাক্কা, সেন্টমার্টিন নির্ভর পর্যটন ব্যবসায়ীদের এবং স্থানীয় সকল ব্যবসায়ীদেরকে গলাটিপে হত্যা করার সমতুল্য। দ্বীপকে ঘিরে পর্যটন ব্যবসায়ীরা দীর্ঘ মেয়াদি বিনিয়োগ করেও এখনো কোন সুফল পায়নি। তাই আমাদেরকে রোহিঙ্গা আশ্রয়দানকারী স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করে ক্ষতিপুরণ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় কক্সবাজার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার প্রতিনিধি, টুরিষ্ট পুলিশ প্রতিনিধি, বিজিবি প্রতিনিধি, টেকনাফ-সেন্টমার্টিন কোস্টগার্ড প্রতিনিধি, ডিজিএফ আই প্রতিনিধি, ট্যুর অপারেটর প্রতিনিধি, সেন্টমার্টিন হোটেল মালিক সমিতির প্রতিনিধি, সেন্টমার্টিন রেস্তোরা মালিক প্রতিনিধি, মেরিন ফিশারিজ প্রতিনিধি, পর্যটন মন্ত্রণালয় প্রতিনিধি, কক্সবাজার সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, কক্সবাজার সাংবাদিক প্রতিনিধি, রাজনৈতিক ও জন প্রতিনিধি টেকনাফ সেন্টমার্টিন জাহাজ মালিক প্রতিনিধি এই সকল প্রতিষ্ঠান/ব্যক্তিদের উপেক্ষা করে মনগড়া, কাল্পনিক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে পরিবেশ অধিদপ্তর একটি প্রতিবেদন সুপারিশ আকারে আন্তঃমন্ত্রণলয়ে উপস্থাপন করেন। যাহা পর্যটন শিল্প বিকাশে ইতিবাচক নয়।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
যদি পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক এই প্রতিবেদন বাস্তবায়ন হয় তাহলে সবার আগে কক্সবাজার শহরের নামি-দামি বিলাশবহুল হোটেল-মোটেল রেষ্টুরেণ্ট বিষয়ে কক্সবাজার জেলার পরিবেশ অধিদপ্তর পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে কি ব্যবস্থা নিয়েছে তাহা জানার আগ্রহ জন্মাবে যাহা অদুর ভবিষ্যতে পর্যটনশিল্প বিকাশে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির স¤া¢বনা রয়েছে। দীর্ঘতম ১২০ কি.মি. সমুদ্র সৈকত বাচাঁনোর জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকান্ড প্রশ্নবিদ্ধ, কারণ আমাদের জানামতে কক্সবাজারের ৩ শতাধিক হোটেল-মোটেল এর মধ্যে ৩ টি ব্যতিত অন্য কোনটিতে ইটিপি প্লাণ্ট আছে বলে আমাদের জানা নাই। এই সমস্ত হোটেলের বর্জ্য প্রতিনিয়ত সমুদ্রের পানি দুষিত করে যাচ্ছে। তাই বলা যায় কক্সবাজারের তুলনায় সেন্টমার্টিন দ্বীপ অনেক পরিবেশ বান্ধব অবস্থানে রয়েছে।
এক নজরে টুয়াক কর্তৃক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ভুল তথ্যের বিপরীতে সঠিক তথ্যসমূহ তুলে ধরা হলো। সেন্টমার্টিন দ্বীপে চলাচলরত জাহাজে যাত্রী ধারণ ক্ষমতাঃ কেয়ারী সিন্দবাদ ৩৪৬, কেয়ারী ক্রুজ ৩১০, বে ক্রুজ ২৫০, এলসিটি কাজল ২৫০, এলসিটি কুতুবদিয়া ২৫০, ফারহান ক্রুজ ৪৫০, এমভি পারিজাত ৪১০ জন। সর্বমোট ২২৬৬ জন যাত্রী পরিবহনের ক্ষমতা রয়েছে উক্ত পথে চলাচলরত জাহাজের। এছাড়া সেন্টমার্টিন দ্বীপে ১০৪ টি হোটেল কটেজ মিলিয়ে সর্বমোট ৮০০ পর্যটক রাত্রীযাপন করার ধারণ ক্ষমতা রয়েছে।
এমতাবস্থায়, পর্যটন শিল্প রক্ষায় দেশি-বিদেশী পর্যটকদের আর্কষনীয় স্থান সেন্টমার্টিন দ্বীপকে ঘিরে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনকল্পে জীবিকা নির্বাহ এবং পর্যটন ব্যবসা পরিচালনাকারী ও স্থানীয় জনগণের ক্ষতির পরিমান বিবেচনা করতঃ সংশ্লিষ্ট (কক্সবাজার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার প্রতিনিধি, টুরিষ্ট পুলিশ প্রতিনিধি, বিজিবি প্রতিনিধি, টেকনাফ-সেন্টমার্টিন কোস্টগার্ড প্রতিনিধি, ডিজিএফ আই প্রতিনিধি, ট্যুর অপারেটর প্রতিনিধি, সেন্টমার্টিন হোটেল মালিক সমিতির প্রতিনিধি, সেন্টমার্টিন রেস্তোরা মালিক প্রতিনিধি, মেরিন ফিশারিজ প্রতিনিধি, পর্যটন মন্ত্রণালয় প্রতিনিধি, কক্সবাজার সুশিল সমাজের প্রতিনিধি, সাংবাদিক প্রতিনিধি, রাজনৈতিক ও জন প্রতিনিধি), টেকনাফ সেন্টমার্টিন জাহাজ মালিক প্রতিনিধি ও পরিবেশবিদ নিয়ে পুনরায় শক্তিশালী একটি কমিটি করে সঠিক তথ্য নির্ভর প্রতিবেদন তৈরীর অনুরোধ জানাচ্ছি। এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক তহবিল হতে সেন্টমার্টিন দ্বীপকে সুরক্ষা ও ক্ষতিগ্রস্থদের পুর্ণবাসন করার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন এবং বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপুরণ প্রদান করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানাচ্ছি। পাশাপাশি পেশাজীবিদের পেশা পরিবর্তনে প্রণোদনা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহনেরও অনুরোধ জানাচ্ছি।
পরিশেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নিকট বিনীত অনুরোধ আপনার নিজ হস্তক্ষেপে ট্যুর অপারেটর, পর্যটন ব্যবসায়ী, সেন্টমার্টিন দ্বীপবাসীকে রক্ষা এবং সেন্টমার্টিন দ্বীপকে বাংলাদেশের মানচিত্র হতে হারিয়ে যাওয়ার পূর্বে সুরক্ষা করা ও পর্যটনবান্ধব নীতিমালা প্রণয়নের আকুল আবেদন জানাচ্ছি।

সেন্টমার্টিন পর্যটন ব্যবসায়ীদের পক্ষে-
তোফায়েল আহম্মেদ
সভাপতি, টুয়াক।