# আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে টমটম গাড়ীর ভাঙ্গা কাঁচ আর ৫ টি লাঠি
# কাউকে ভাংচুর বা মিছিল করতে দেখেননি আশেপাশের ব্যবসায়ীরা তবুও মামলা


মো: ছফওয়ানুল করিম ,পেকুয়া :
দুইদিন ধরে পেকুয়া বাজারস্থ বিএনপির দলীয় কার্যালয় ঘিরে রেখেছে পুলিশ। পুলিশের ভয়ে দলীয় কার্যালয়ে যাওয়াতো দূরের কথা বিএনপি নেতা-কর্মীরা ঘরেও থাকতে পাছেনা। তবুও তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে নাশকতার অভিযোগে। ঘটনার তারিখ ১৪ অক্টোবর রাত ৯ টা। আসামি করা হয়েছে উপজেলা বিএনপির সভাপতি সহ ১৬ নেতা-কর্মীকে। মামলার এজহারে জামায়াত বিএনপির কর্মীরা সংঘবদ্ধ হয়ে নাশকতা ও গাড়ী ভাংচুরের অভিযোগ আনা হলেও জামায়াতের কোন নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়নি। ১৬ জন আসামির সবাই বিএনপির নেতা-কর্মী। ঘটনাস্থল দেখানো হয়েছে পেকুয়া বাজারস্থ বিএনপি অফিসের সামনের রাস্তা। পেকুয়া থানার এসআই ইয়াকুবুল ইসলাম ভূইয়া বাদী হয়ে মামলাটি থানায় রুজু করেন গতকাল ১৫ অক্টোবর। এদিকে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোছাইন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তাৎক্ষনিক এ ধরনের ‘গায়েবী মামলা’র তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো হয়।
মামলার এজহার সূত্রে জানাযায়, ঘটনার সময় রাত সাড়ে ৯ টার দিকে থানার এসআই ইয়াকুবুল ইসলাম জামায়াত বিএনপির নেতা-কর্মীরা সংঘবদ্ধ হয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলার রায়ের প্রতিবাদ ও সাবেক যেগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমদের বিরুদ্ধে ভারতের আদালতে দায়ের করা মামলায় সরকারের হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে বিএনপির নেতা-কর্মীদের প্রতিবাদ ও গাড়ী ভাংচুরের খবর পেয়ে ওসির নির্দেশে পেকুয়া বাজারে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে যান এবং পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীরা পালিয়ে যান। এসময় মামলার বাদী ৫ টি লাঠি, টমটমের ভাঙ্গা কাঁচ ও গ্লাস ভাঙ্গা একটি কাঁচ জব্দ করে থানায় নিয়ে আসেন। গতকাল এসআই ইয়াকুবুল ইসলাম বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ০৯ তারিখ- ১৫-১০-২০১৮ ইং। মামলায় পেকুয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি বাহাদুর শাহ, উপজেলা বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ইউসুফ রুবেল, উপজেলা যুবদলের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক কামরান জাদীদ মুকুট, সাংগঠনিক সম্পাদক জয়নাল, উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি সোহেল আজিম, সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ সহ ১৬ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। মামলার অপরাপর আসামিরা হল, বিএনপি নেতা শাহনেওয়াজ এমইউপি, মাহবুবুল করিম এমইউপি, সাজ্জাদ হোসেন এমইউপি, যুবদল নেতা আরিফুল ইসলাম বিটু, মোহাম্মদ এহসান, মাস্টার ছৈয়দ নুরের ছেলে সাজ্জাদ, আসাদ রুবেল, ছাত্রদল নেতা শওকত হোসেন বিজয়, রাশেদুল ইসলাম প্রমূখ।
এ বিষয়ে জানতে মামলার বাদী এসআই ইয়াকুবুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এজহারে উল্লেখিত বিবরণটি হুবহু তুলে ধরেন। গত ২ দিন ধরে দলীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশ মোতায়ন রয়েছে অথচ দলীয় কার্যালয়ের সামনেই ঘটনা দেখিয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগে মামলা দায়েরের বিষয়টি ‘গায়েবি মামলা’ কিনা জানতে চাইলে তিনি টেলিফোনের লাইন কেটে দেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পেকুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাকির হোসেন ভূঁইয়া জানান, “ঘটনা ঘটেছে বিধায় মামলা হয়েছে। ঘটনা না ঘটলেতো আর মামলা হতোনা।” মামলার জব্দ তালিকায় কিকি রয়েছে জানতে চাইলে তিনি জানান “এই মূহুর্তে আমি মনে করতে পারছিনা”। এজহারের উল্লেখিত জব্দ তালিকা তাকে জানালে তিনি বলেন “এজহারে থাকলে সেগুলোই জব্দ তালিকায় দেখানো হয়েছে”। আশে পাশের ব্যবসায়ীরা কেউ উল্লেখিত সময়ে এ ধরণের ঘটনা ঘটেছে কিনা বলতে পারেনি তাহলে কিভাবে আপনারা মামলা করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমাদের স্বাক্ষী প্রমাণ রয়েছে।”।
গতকাল সরেজমিনে গিয়ে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে পেকুয়া বাজারস্থ বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের পূর্ব পাশের দেয়ালের সাথে লাগানো নবীল ট্রেডার্সের মালিক গিয়াস উদ্দিনের কাছে গাড়ী ভাংচুরের কোন ঘটনা ঘটেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বিষ্ময় প্রকাশ করে বলেন, “গত দুইদিন ধরেতো আমার দোকানেই পুলিশ অবস্থান নিয়ে রাত অবদি ডিউটি করে বিএনপি অফিস পাহারা দিয়েছে। গাড়ী ভাংচুর বা মিছিল মিটিং কিছুই আমার চোখে পড়েনি।” এবিষয়ে জানতে চাইলে দলীয় কার্যালয়ের পশ্চীম পাশের কাদের কুলিং কর্ণারের মালিক মোহাম্মদ কাদের জানান, “আমি রাত সাড়ে ১০ টা পর্যন্ত দোকানে ছিলাম কিন্তু ভাংচুরের কোন ঘটনাতো এখানে ঘটেনি। পুলিশ গত ২ দিন ধরে দলীয় কার্যালয় পাহারা দিয়ে রেখেছে বলেও জানান তিনি।” এ বিষয়ে মামলার প্রধান আসামি ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি বাহাদুর শাহর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, “গত ২ দিন ধরে পেকুয়া বাজারস্থ বিএনপির কার্যালয় ঘিরে রেখেছে পুলিশ। কার্যালয়ে যাওয়াতো দূরের কথা আমাদের নেতা-কর্মীরা এক সপ্তাহ ধরে ঘর বাড়ীতেই থাকতে পারছেননা। বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীকে গতকাল গভীর রাতে বাড়ী থেকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। আজ শুনলাম পার্টি অফিসের সামনে নাশকতার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে।” তিনি জানান, সারা দেশের ন্যায় সরকারের নির্দেশে পেকুয়ায়ও বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হল। মামলা হামলায় বিএনপি নেতা-কর্মীরা ভীতু নয় বলে জানান তিনি।