শাহীন মাহমুদ রাসেলঃ

কক্সবাজারে বেড়েছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। জেলার, পর্যটন শহর বা গ্রামের কোথাও রেহাই নেই লোডশেডিং যন্ত্রণা। কয়েকদিন ধরে দফায় দফায় লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা পোহাতে হয়েছে গ্রামসহ কক্সবাজারের শহর বাসিকে। দফায় দফায় বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। গ্রামে দিনের প্রায় অর্ধেক সময় বিদ্যুৎ না থাকায় মানুষের মাঝে নেমে এসেছে জীবদশা। তার সাথে পাল্লা দিয়ে অফিস-আদালতের কার্যক্রমেরও স্থবিরতা নেমে এসেছে।

গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুতের নতুন নতুন লাইন হচ্ছে। প্রতি মাসে কয়েক লাখ নতুন গ্রাহককে সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তাঁরা বিদ্যুৎ পাচ্ছেন খুব কম। সেখানে কখনো একটানা কয়েক ঘণ্টা, আবার কখনো ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং হচ্ছে।

মহেশখালীর একজন গ্রাহক বলেন, গত ছয়-সাত বছরে দেশে বিদ্যুতের উৎপাদনক্ষমতা যে প্রায় তিন গুণ হয়েছে, তার প্রতিফলন গ্রামে নেই। অন্তত তাঁদের এলাকায় তো নয়ই। গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) সূত্র জানায়, দু-তিন দিন ধরে তারা বিদ্যুৎ পাচ্ছে চাহিদার তুলনায় প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট কম। বর্তমানে তাদের প্রায় দেড় কোটি গ্রাহকের সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ চাহিদা ৪ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট প্রায়। কিন্তু কয়েক দিন ধরে তারা পাচ্ছে ৩ হাজার ৮০০ মেগাওয়াটের কম।

সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগ দাবি করেছে, এ পর্যন্ত কোন লোডশেডিং হয়নি। কক্সবাজার জেলার চাহিদার সমপরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে। তবে কক্সবাজারসহ জেলার প্রত্যান্ত অঞ্চলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন থাকার কারণ সম্পর্কে তারা বলেছেন, তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুতের লোড বেড়ে গেছে। এ কারণে বর্তমান বিদ্যুৎ বিতরণের যে সিস্টেম রয়েছে তা দিয়ে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাচ্ছে না। পাশাপাশি তাপমাত্রার কারণে ট্রান্সফরমার ও বিদ্যুতের সাবস্টেশন গরম হয়ে ভেতরে কয়েল পুড়ে যাচ্ছে। লোড কমানোর জন্য মাঝে মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে।

ক্ষোভে রাগান্বিত হয়ে কয়েকজন বলেন, বিদ্যুতকে কেন্দ্র করেই জনগণ ফ্রিজে অনেক টাকার মাছ, মাংস ও অন্যান্য জিনিস সংরক্ষণ করেন। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে এ সমস্ত দ্রব্য নষ্ট হয়ে যায়। এমনকি এ সময় অসুস্থ, বয়:বৃদ্ধ, মুমূর্ষু রোগীদের জীবন মরণের ঝুঁকি বাড়ায়। বিদ্যুৎ পাবার জন্য এদেশের জনগণের ত্যাগ সর্বোচ্চ। গ্রাহক তার অতি মূল্যবান জায়গাতেও বৈদ্যুতিক খুঁটি টানা ও লাইন তার নিতে আপত্তি করে না। লাইন বা তারের সাথে গাছের সংযুক্তি হওয়া মাত্রই গ্রাহকের দীর্ঘদিনের লালিত পালিত গাছটি অফিসের লাইনম্যানরা কাটাকাটি করলেও গ্রাহক কোন অভিযোগ করে না, কোন ক্ষতিপুরণ দাবি করে না। কিন্তু কোন কারণে লাইন, খুঁটি বা তার বিষয়টি নিয়ে অফিসের সহযোগিতা চাইলে বিনিময়ে বিদ্যুৎ অফিস থেকে পাওয়া যায় অশুভ আচরণ। অথচ হওয়া উচিৎ ছিল বিপরীতমুখী। যেহেতু সাধারণ জনগণ বিদ্যুৎ পেতে সর্বদা উদগ্রীব থাকেন, পল্লী বিদ্যুৎ অফিস এই সুযোগে নানা কারসাজি ও অনিয়মের দ্বারা ইচ্ছামত বিল তৈরী ও টাকা আদায় করে থাকে।

এ দিকে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা থাকে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত। এ সময়টাকে পিক আওয়ার ধরে সর্বোচ্চ চাহিদা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু রাত ১১টার পর থেকে বিদ্যুৎতের চাহিদা কমতে থাকে। কিন্তু বিদ্যুৎতের লোডশেডিংয়ের মাত্রা কমে না। বরং দিন দিন এখন বাড়ছে। আজকাল মধ্য রাতেও লোডশেডিং করা হচ্ছে। প্রতিনিয়ত দিন শুরু হচ্ছে লোডশেডিং দিয়ে। প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় বিদ্যুৎ থাকছে না জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে। খোদ কক্সবাজার জেলাতেই লোডশেডিংয়ের এ অবস্থা বিরাজ করছে। গ্রামের কথা তো বলাই বাহুল্য। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে কক্সবাজার পর্যটন নগরবাসী।

লোডশেডিংয়ের কারণে শিশুদের পাশাপাশি বড়রাও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। ফ্রিজে রাখা মাছ, গোশত, তরিতরকারি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎতের করণে ঠিক মতো মোটর চালাতে না পেরে অনেক এলাকায় পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

জেলা বিভিন্ন এলাকা থেকে ফোন করে গ্রাহকেরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এ প্রতিবেদকের কাছে। পিএমখালী এলাকা থেকে সৌদি প্রবাসি নুর উদ্দিন সিবিএনকে জানিয়েছেন, এলাকা যেন অগ্নিগর্ভ। প্রতি ঘণ্টা পরপর বিদ্যুতের লোডশেডিং শুরু হয়। আর স্থায়ী হচ্ছে এক ঘণ্টা। অর্থাৎ এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকলে পরের তিন ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না।

এ দিকে তীব্র গরম, আর বিদ্যুৎ না থাকায় আমার পরিবার পরিজনসহ এলাকাবাসি অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। ঘন ঘন বিদ্যুৎতের লোডশেডিং করায় আইপিএসের চার্জও থাকছে না। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর বৈদ্যুতিক পাখা কিছুণ চালু থেকে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। জনি নামের একজন ক্ষোভ প্রকাশ করে আরো বলেন, সরকারের বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে উন্নয়নের দাবি বাস্তবে তারা দেখতে পারছেন না। অথচ তারা এক হাজার টাকার বিদ্যুৎ বিল চার হাজার টাকা গুনছেন।

সদরের ঝিলংজা ইউপি চেয়ারম্যান টিপু সুলতান জানিয়েছেন, সারা দিনের লোডশেডিংয়ের মাত্রা বোঝা যায় না। কারণ, অফিস চলাকালীন লোডশেডিংয়ের সময় জেনারেটর চালানো হয়। কিন্তু বাসায় গেলে বোঝা যায় লোডশেডিংয়ের মাত্রা।

তিনি জানান, হঠাৎ উত্তাপ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় তাদের টিকে থাকাই দায় হয়ে পড়েছে। গরমে শিশুদের পাশাপাশি বড়রাও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। মিঠাছড়ি থেকে রুনাদ জানান, ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। প্রতি আধা ঘণ্টা পরপর বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। লোডশেডিং স্থায়ী হচ্ছে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। সারা দিনে এদিক সেদিক কাটানো যায়। কিন্তু রাতে তো বাইরে বের হওয়া যায় না। লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণায় ঘরে থাকাও দায় হয়ে যায়। এর পাশাপাশি, মশার উপদ্রবতো রয়েছেই। সব মিলে টিকাই দায় হয়ে পড়েছে।

জেলার মহেশখালী, চকরিয়া, পেকুয়া, কক্সবাজার সদর, উখিয়া, টেকনাফের সব এলাকায়ই একই অবস্থা। খরুলিয়ার মহিউদ্দিন সোহেল জানিয়েছেন, একে তো ভ্যাপসা গরম, এর ওপর ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে ফ্রিজে রাখা জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।