টেকনাফ সংবাদদাতা:
টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়ায় একটি ইয়াবা মামলায় স্ত্রী, ভাই-বোনসহ একই পরিবারের ১৬ জনসহ মোট ১৯ জনকে আসামী করা হয়েছে। মামলা থেকে বাদ যায়নি শ্বশুরালয়ের লোকজন, এমনকি আত্নীয়-স্বজনও। টেকনাফ মডেল থানায় দায়েরকৃত জি.আর-৫৪২/১৮ মামলা নিয়ে তীব্র সমালোচনা হচ্ছে। ওই মামলাটি সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক নিরপরাধ লোকজনকে বাদ দেয়ার দাবী ওঠেছে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ আছে, গত ২৬ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে স্থানীয় মোস্তাক আহমদের বসতবাড়ী থেকে ১০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করে বিজিবি। এ সময় পালিয়ে যাওয়ায় কাউকে আটক করতে পারেনি অভিযানকারীরা।
এ ঘটনায় পরের দিন দায়ের করা মামলায় আসামী করা হয়েছে- ওই এলাকার মৃত জাগির হোসেনের ছেলে মোস্তাক আহমদ, মোস্তাকের শ্বশুর মো. কামাল হোসেন, স্ত্রী রশিদা বেগম, ভাতিজা মো. ছিদ্দিক, চাচি ফিরোজা বেগম, ছোট ভাইয়ের স্ত্রী রেজিয়া বেগম, চাচতো বোন রেহেনা বেগম, শালা (স্ত্রীর ছোট ভাই) শফিক, মো. ইসমাঈল, মো. আজিজ, ফুফাতো ভাই মো. রাসেল, ফুফাতো শ্বশুর মো. ছিদ্দিক, মামা শ্বশুর রুহুল আমিন, স্বজন নুরুল আলম, মো. সৈয়দ আলম, মোস্তাক আহমদের একটি মামলার সাক্ষি আবদুল মান্নান।
বাকি আসামীদের মধ্যে রয়েছে- উত্তর জালিয়াপাড়ার মোহাম্মদ আলী প্রকাশ সোহেল, মোহাম্মদ হোসেন প্রকাশ হিরু, বাবুল আলম।
অনুসন্ধান করে জানা গেছে, মোস্তাক আহমদ টেকনাফ লামারবাজারে ১৯৯৭ সাল থেকে জেনারেটর সার্ভিসের ব্যবসা করে। বাজারে তার মালিকানাধীন একটি মোবাইল ও কম্পিউটারের দোকান রয়েছে। ২০০২ সালে থেকে টেকনাফ পৌরসভা (তরকারী বাজার) এর সরকারী ইজারা অংশিদার মোস্তাক। তিনি একজজন বৈদ্যুতিক মেস্ত্রি হিসেবে পরিচিত।
মোস্তাক আহমদ জানান, ২০১৭ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় স্থানীয় চৌধুরীপাড়া দোকানে বসা অবস্থায় একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী তার উপর অতর্কিত হামলা করে। এতে বেপরোয়া কোপাঘাতে তার সারা শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। সেই আঘাতের ক্ষত এখনো শুকায়নি। দু’পায়ে হাটাচলা করতে পারেনা। হাতে এখনো ব্যান্ডেজ। কোন মতে চলছে জীবন। এ ঘটনায় মোস্তাকের শ্বশুর কামাল হোসেন বাদি হয়ে টেকনাফ থানায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলা নং জি.আর-৭৩৯/১৭।
ভিকটিম মোস্তাক আহমদ আরো জানান, হামলার ঠিক এক বছরের মাথায় গত ২৬ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত ৯ টার দিকে বিজিবির পোষাক পরিহিত ৬ জন তার বাসায় ঢুকে। তাদের সাথে স্থানীয় দুইজন লোকও ছিল। তারা প্রথমে বাসায় সিসি ক্যামেরা খুলে নেয়। এরপর ১০ লাখ টাকা দাবী করে।
তার অভিযোগ, সব অপকর্মের মূল হুতা বহু মামলার আসামী সরকারী একটি বাহিনীর সোর্স পরিচয়দানকারী হাছন আলী। সে বিজিবিকে ভুল তথ্য দিয়ে তার বাসায় অভিযান চালিয়েছে। তার বাসায় কোন ইয়াবা পায়নি। পাশ্ববর্তি আরেকটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে যে ইয়াবা উদ্ধার করা হয়, তার মামলায় পরিকল্পিতভাবে তাদের স্বপরিবারে আসামী বানানো হয়েছে। নিরপেক্ষ তদন্ত ও প্রশাসনকে বিভ্রান্ত করায় হাছন আলীসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করেন ভুক্তভোগি মোস্তাক আহমদ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফ মডেল থানার ওসি রনজিত কুমার বড়ুয়া মামলার সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান। সেই সাথে কোন নিরপরাধ ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেয়া হবেনা বলেও জানান ওসি।