ইমাম খাইর, সিবিএন:
কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা ইউনিয়নের পূর্বখরুলিয়া নয়াপাড়া। ২শতাধিক পরিবারে হাজারের কাছাকাছি মানুষের বসবাস এখানে। অনুন্নত গ্রামটিতে শিক্ষার আলো তেমন নেই বললে চলে। এলাকাটি পার্শ্ববর্তি তিনটি ইউনিয়নের সাথে মিলেছে। পূর্বে ঝিলংজা, পশ্চিমে রামুর চাকমারকুল এবং উত্তর মাথায় পড়েছে মিঠাছড়ি। মধ্যখানে ছোট্ট একটি খাল।
সম্প্রতি ইয়াবা, গাজা ও হেরুইনসহ নানা প্রকারের মাদকের কারণে অজপাড়াটি বেশ সমালোচিত। খুচরা কিংবা পাইকারী সব রকমের ব্যবসা চলে নয়াপাড়ায়। গোপনে নয়, প্রকাশ্যে হাটবাজারের আদলে চলে মাদকের বিকিকিনি। মাদকের টাকায় কিছু মানুষ ‘আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ’ বনে যাচ্ছে। গড়ে উঠছে অট্টালিকা। অলিগলি সর্বত্র হাত বাড়ালেই মেলে মাদক। মাদকের ভয়াল ছোবলে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে যুব সমাজ। বিশেষ করে নারীরা মাদক ব্যবসায় বেশী জড়িয়ে পড়েছে। নয়াপাড়ার প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষই মাদকের সাথে জড়িত।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীর সখ্যতা রয়েছে। মাসিক মাসোহারায় চলে মাদক ব্যবসা। সে কারণে মাদক নির্মূলে সুফল আসছেনা। বাড়ছে ভয়াল থাবা।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, মাদকের মামলায় কারান্তরীণ শামসুন্নাহারের মেয়ে বাবুইজ্জানি ও নাসিমা আক্তার প্রথম শ্রেনীর মাদক কারবারী। প্রতিদিন লক্ষ টাকার মাদক হাত বদল করে। তাদের নেটওয়ার্ক টেকনাফ থেকে ঢাকা পর্যন্ত। অন্তত ২০ জন লোক নেটওয়ার্কে কমিশন ভিত্তিক কাজ করে। প্রশাসন ম্যানেজ করার মতো ৫/৬ জন লোকও রয়েছে। সেখানে স্থানীয় একজন ইউপি সদস্য জড়িত থাকার কথা অনেকের মুখে শুনা গেছে।
অনসন্ধানে জানা গেছে, খরুলিয়ায় মাদকের ব্যবসা শুরু করে দেলোয়ার হোসাইন (কারান্তরীন), লিয়াকত আলী (মাদকসহ ৯ মামলার আসামী), নুরুল ইসলাম নুরু, ইমাম শরীফ, জোহর আলম, জিয়াউর রহমান, সাইফুল ইসলাম, মনিয়াসহ আনুমানিক ১৫ জনের একটি সিন্ডিকেট। তাদের হাত ধরে ইয়াবা, গাজা, হেরোইনসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য পুরো খরুলিয়ায় ছড়িয়ে গেছে। রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিস্তার করছে ভয়াল থাবা। বিশেষ করে নয়াপাড়া ও কোনারপাড়ার ভয়াবহ অবস্থা। নয়াপাড়ার মাদক ব্যবসায়ীদের গড়ফাদার বাদশা মিয়া, সালাম মিয়া। তারা স্বস্ত্রীক মাদকের কাজে জড়িত। বাবুইজ্জানি, নাসিমা আক্তার বাদশা মিয়া, সালাম মিয়ার নেতৃত্বে গড়ে ওঠেছে শক্তিশালী মাদক সিন্ডিকেট। সেই সিন্ডিকেটের কাছে স্থানীয়রা, এমনকি প্রশাসনও অসহায়।
স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম জানান, একটি গ্রামে এভাবে মাদকের ছোবল পড়বে তা কেউ কল্পনা করেনি। এখানে দিনরাত বৈধ ব্যবসার মতো মাদকের হাট বসে। মাদক কারবারীরা বেপরোয়া। প্রতিবাদ করলে উল্টো প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়। যে কারণে ‘দেখেও না দেখার ভান’ করে থাকে স্থানীয়রা।
সরেজমিন কথা হয় স্থানীয় জাফর আলম, নজির হোসেন, মকতুল হোসেনসহ অন্তত ২০ জনের সঙ্গে। তারাও দুঃখ ও আক্ষেপের সঙ্গে বলেন একই কথা। বর্ণনা দেন মাদক ব্যবসায়ীদের কারণে এলাকার করুণ দশা। প্রজন্ম বাঁচাতে যেভাবেই হোক তারা মাদকের নির্মূল চায়। অন্যথায় মাদক ঠেকাতে আইন হাতে তুলে নিতে বাধ্য হবে বলেও জানান ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী।
ইউপি চেয়ারম্যান টিপু সুলতান জানান, ক্যান্সারের মতো ছড়িয়ে পড়েছে মাদক। চিহ্নিত একটি সিন্ডিকেট মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। বেশ কয়েকবার মাদক বিরোধী অভিযানও চালানো হয়েছে। এরপরও মাদক কারবারীরা থামছেনা। সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় মাদক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছেনা। আগামী প্রজন্ম বাঁচাতে কঠিন প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত জরুরী বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জেলা ছাত্রলীগ নেতা স্থানীয় বাসিন্দা হোছাইন মোরশেদ জানান, সাম্প্রতিক সময়ে মাদকের আগ্রাসনে খরুলিয়ার যূব সমাজ হুমকির মুখে। অবাধে ইয়াবা, গাজা বিক্রি হচ্ছে। বেশ কিছু জায়গা প্রতিদিন হাট বসে। মাদকের আগ্রাসন থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করতে কঠোর ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান এই ছাত্রলীগ নেতা।
কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাবিবুল হাসান জানান, মাদকের বিরুদ্ধে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে আছে। খরুলিয়ায় বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়ে দণ্ডও দেয়া হয়। তিনি জানান, শুধু পুলিশ কেন, সবাইকে সচেতন হতে হবে। মাদক কারবারীদের তথ্য দিয়ে সতায়তা করতে হবে। যে যার অবস্থান মাদকের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুললে মাদক ব্যবসায়ীদের কোন অস্থিত্ব থাকবেনা বলে মনে করেন ইউএনও হাবিবুল হাসান।
যে গ্রামের ৯০ ভাগ মানুষ মাদকজীবী
পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে
