ফেসবুকওয়ালঃ

আজ হতে চির উন্নত হল শিক্ষাগুরুর শির, সত্যই তুমি মহান উদার বাদশাহ আলমগীর। “শিক্ষকের মর্যাদা” কবিতা। প্রায় পাঁচশত বৎসর পূর্বের ঘটনাকে উপজীব্য করে কবিতা। কবিতার বিষয়বস্তু আজও অম্লান। দিল্লীর মহান বাদশাহ্ আওরঙ্গজেব।পাঁচশত বছর পুর্বে শিক্ষক সমাজকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে আসীন করেছেন। এটা আজো তর্কাতীতভাবে প্রতিষ্ঠিত। আমাদের সমাজেও শিক্ষকের রয়েছে আলাদা কদর, আলাদা মর্যাদা । এখনো শিক্ষকের কদমবুসি করে ধন্য হয় ছাত্র কিংবা ছাত্রী। শিক্ষক ছাত্রকে পাঠদান করবেন,স্নেহ করবেন, প্রয়োজনে শাসন করবেন। এটাই রীতি। অনেক ক্ষেত্রে, ছাত্রের কল্যাণের জন্য শিক্ষক মৃদু বেত্রাঘাত কিংবা ভর্ৎসনা করেন।অভিভাবকও কৃতজ্ঞতাচিত্তে সেটাকে সাধুবাদ জানিয়ে থাকেন। কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের ভর্সনার কারনে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা। অতঃপর জেলে প্রেরণ। এ যেন রীতিমত ভয়ংকর, অনভিপ্রেত, অনাকাঙ্ক্ষিত । বিষয়টি নজীরবিহীনও বটে। আর সেই বিরল কাজটি করলেন,অভিভাবক নামধারী কতিপয় দুষ্কৃতকারী। কক্সবাজার শহরের নামী ইংরেজি শিক্ষক হেলাল উদ্দিন। ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রীধারী। তাঁর সহোদর রাহাত ইকবাল, আরেক খ্যাতিমান ইংরেজি শিক্ষক। দুই ভাইয়ের কক্সন মাল্টিমিডিয়া নামে রয়েছে এক প্রসিদ্ধ স্কুল। ব্যতিক্রমী এক স্কুল। অমিত সম্ভাবনাময় এক স্কুল। স্কুলের স্টুডেন্টরা আবার ইংরেজি কথোপকথনে বিশেষ পারদর্শী। যা মফস্বলে বিরল। স্কুলটি আবার অবহেলিত সমিতি পাড়ায়। শিক্ষক ভাতৃদ্বয় অবহেলিত সমিতি পাড়ায় শিক্ষার আলো জ্বালিয়ে যাচ্ছেন আরো বহু বৎসর পুর্বে হতেই। একনিষ্ঠ ও নিরলসভাবেই। এটাই হল তাঁদের কাল। কিছু স্বার্থান্বেষী স্টাব্লিশমেন্ট এর সেটা পছন্দমত হয়নি। ষষ্ঠ শ্রেনীর এক ছাত্রী পাঠে অনিয়মিত ও অমনোযোগী হওয়ায় শিক্ষক হেলাল সাহেব তাকে ভর্ৎসনা ও মৃদু বেত্রাঘাত করেন। তাও হাতে। এতে ছাত্রীর অভিভাবক ও স্বার্থান্বেষী মহলের অহমে লাগে। ব্যাস, ছাত্রীর অভিভাবক নামধারী গুন্ডারা তান্তব চালায় শিক্ষকের টিউটরিয়ালে। শতশত ছাত্রছাত্রীদের সামনে তাঁকে অপহরণের চেষ্টা চালায়। কিন্তু বিধিবাম! এলাকাবাসীর প্রতিরোধে পিছু হটে অভিভাবক নামধারী গুন্ডারা। পথিমধ্যে শিক্ষকের ছোট ভাইকে একা পেয়ে করে নৃশংস মারধর। আর মোবাইলে অশ্লীল, অশ্রাব্য গালিগালাজ,হুমকি তো আছেই। বিষয়টি এখানেই থেমে থাকেনি। পরের ঘটনা আরো হিস্র ও ন্যাক্কারজনক! এবার শিক্ষকের বিরুদ্ধে সরাসরি মামলা। Attempt to murder. দ:বি ৩০৭ ধারার চার্জ। ছাত্রীকে হত্যার চেষ্টা??? গোয়েবলীয় থিওরি ও চরম মিথ্যাচার। মামলা রেকর্ড হল,ত্বড়িত গতিতে। কালো টাকা ও অপরাজনৈতিক প্রভাবে। গ্রেফতার হলেন, শিক্ষক,আরো দ্রুত, যেন রকেট গতিতে। শিক্ষক যেখানে বিচারপ্রার্থী , ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, হয়ে গেলেন আসামী। নির্দোষ নিরপরাধ, কিন্তু ক্ষমতাহীন শিক্ষককে নিক্ষেপ করা হল,শ্রীঘরে। দাগী আসামীদের সাথে। অপরাধ, ছাত্রীকে মানুষ করতে চেয়েছেন, দায়িত্বে অবহেলা না করেই। প্রতিদানে পেলেন জেল,জুলুম,নির্যাতন, প্রাণনাশের হুমকি। অভাবনীয় উন্নয়ন দেশের! আর আইনের শাসনের এই হাল ! তবে আমরা বিচলিত হয়নি। ন্যায়বিচার ও ন্যায়বিচারক দেশে এখনো রয়েছেন। শুনানী আদালতে উঠল।শিক্ষকের আইনজীবিগন জামিনের স্বপক্ষে আইন, যুক্তি প্রদর্শন করলেন। প্রতিপক্ষ ও জামিনের বিরোধিতা করে পাল্টা যুক্তি তুলে ধরলেন। বলা হয়ে থাকে Judges represent Almighty Allah. Man is unjust and Almighty Allah is just. Finally justice triumph. অবসান হল দীর্ঘ প্রতীক্ষার। রুদ্রশ্বাস ২৪ ঘন্টার। অবশেষে জয় হল সত্যের। জয়ী হল ন্যায়বিচার। অবরুদ্ধ অবস্থা হতে আপাতত মুক্তি পেল নিরীহ এক শিক্ষক। ধন্যবাদ, সবাইকে।

 

-সাজ্জাদুল করিম, সিনিয়র আইনজীবী

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত।