মুহাম্মদ শামসুল হক শারেক:
’সবর কর খবর হবে’। এটি হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা আহমদ শফীর ঐতিহাসিক উক্তি। এক দূর্যোগ মূহূর্তে বাংলাদেশের আল্লাহ প্রেমিক-রসূল প্রেমিকদের প্রতি তিনি বলেছিলেন ‘সবর কর খবর হবে’। হাদিস শরীফে আছে, রসূলে পাক সঃ এর সময় একবার সাহাবী হযরত আউফ বিন মালেক রাঃ’র এক সন্তানকে কাফের মুশরিকরা গুম করে ফেলেছিল। বিষয়টি রসূল পাক সঃ এর নিকট জানানো হলে তিনি তাদেরকে ধৈর্য্য ধরে আল্লাহর কাছে ইসতিগফার বা ক্ষমা চাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন।
২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ৫মে ঢাকার শাপলা চত্ত্বরে হেফাজতে ইসলামের ঐতিহাসিক সমাবেশে সরকারের ক্রাক ডাউনে অসংখ্য নেতা-কর্মী, হাফেজ, আলেম-ওলামা গুম-খুন ও হতাহত হওয়ার প্রেক্ষিতে আল্লামা আহমদ শফীকে এর বিরুদ্ধে কর্মসূচী দেয়ার পরামর্শ দেয়া হলে তিনি রসূল পাক সঃ এর অনুসরণে বলেছিলেন ‘সবর কর খবর হবে’! সূরায়ে আল আসরের ৩নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন ‘অতওয়াসাউ বিল হাক্বি, অতওয়াসাউ বিস সাবরে’। (তোমরা) একজন অন্যজনকে হক্ব কথার ও (এর উপর কোন বিপদ আসলে) সবর করার উপদেশ দিতে থাক। আল্লামা আহমদ শফী এই পদ্ধতীতে ঈমান ও ইসলাম হেফাজতের অরাজনৈতিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এই অন্দোলন সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
বাংলাদেশ একটি সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলিম দেশ হলেও এখানে সরকারী পর্যায়ে ইসলামী শরিয়াহ চালু নেই। কিন্তু দল-মত নির্বিশেষে দেশের অধিকাংশ মানুষ ব্যক্তিগত জীবনে, পারিবারিক ও সামাজিকভাবে আল্লাহর আনুগত্য ও রসূল সঃ এর অনুসরণে ইসলামী শরিয়াহ মেনে চলতে চেষ্টা করে থাকেন। কালিমা, নামাজ, রোজা ও হ্জ্জ-জাকাতের ব্যাপারে এই অঞ্চলে ইসলাম প্রবেশ থেকে তথা হাজার বছর আগে থেকে এখানকার মানুষ অনুগত এবং শ্রদ্ধাশীল। ‘বিশ্বনবী সঃ এর মদিনা হিজরতেরও আগে (তৎকালীন বাংলা অঞ্চল বর্তমান) বাংলাদেশের এই অঞ্চলে ইসলাম প্রচারের কাজ শুরু হয়েছিল। রসুল পাক সঃ এর এক চাচাত মামা সাহাবী (হযরত সায়াদ রাঃ এর পিতা) আবি ওক্বাসের নেতৃত্বে একদল ইসলাম প্রচারক এই অঞ্চলে ইসলাম প্রচারে এসেছিলেন’। এই অঞ্চলে তরবারী কিংবা ক্ষমতার জোরে ইসলাম প্রচার হয়নি। মসজিদ-মাদ্রসা, খানাকা, আলেম-ওলামা, দায়ী, পীর-মশায়েখদের মাধ্যমে এখানে ইসলামের প্রসার ঘটেছে। তাই এই অঞ্চলের ইসলাম প্রিয় মানুষ উগ্রবাদী বা তথাকথিত জঙ্গীবাদী নয়। হাজার বছর ধরে এই প্রক্রিয়ায় এই অঞ্চলে শান্তিপূর্ণভাবে ইসলাম প্রচারের কাজ চলছে’। তবে মুহাম্মদ বিন কাসেমের সিন্দু বিজয়, ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বখতিয়ার খিলজির বঙ্গ বিজয় এখানকার মুসলমানদের রাজনৈতিক নিপীড়ন থেকে বাঁচিয়েছে, ইসলামী জীবনাদর্শ মেনে চলতে সাহস যুগিয়েছে।
তাই ইসলামের বিরুদ্ধে কোন আঘাত আসলে এখানে প্রতিরোধ হয়েছে ক্ষণে ক্ষণে। বালাকোটে সৈয়দ আহমদ শহীদ ও শাহ ইসমাইল শহীদ, মুজাদ্দিদে আলফে সানী শায়খ অহমদ সরহিন্দী, এই অঞ্চলের বীর শ্রেষ্ঠ শহীদ তিতুমীর, হযরত শাহজালাল, শাহ মখদুমসহ অসংখ্য আলেম ওলামা পীর মশায়েখ, ইসলামী ব্যক্তিত্ব ইসলাম বিরোধী সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলেছিলেন যুগে যুগে। এখানে হয়েছে হাজী শরিয়াত উল্লাহর নেতৃত্বে ফরায়েজী আন্দোলন এবং ওহাবী আন্দোলনের মত ঈমান রক্ষার আন্দোলন। চলে আসছে ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ইসলামী চিন্তানায়ক মাওলানা মওদূদীর নেতৃত্বে সমাজের সর্বস্থরে ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলন।
আমরা দেখেছি বাংলাদেশে খতীবে আজম আল্লামা ছিদ্দিক আহমদের নেতৃত্বে, হাফেজজি হুজুরের নেতৃত্বে দেশ রক্ষা, ঈমান রক্ষা ও ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলন হয়েছে। আর এখনো চলছে আল্লামা শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বে ‘হেফাজতে ইসলাম’র ব্যানারে ঈমান ও ইসলাম রক্ষার আন্দোলন। এছাড়াও ইসলাম প্রতিষ্ঠায় মাঠে সক্রিয় আছেন দেশের আলেম ওলামা পীর মশায়েখদের নেতৃত্বে ডজন খানেক ইসলামী দল।
আমরা পারিবারিকভাবে শুধু নয় বংশ পরম্পরায়ও ইসলামী জীবনাদর্শের প্রতি অনুগত। তবে অমাদের পরিবারে কোন কুসংস্কার, হিনমন্যতা এবং গোড়াঁমী নাই। ঈমান ও ইসলাম রক্ষার এই সকল আন্দোলনকে আমরা সর্বোতভাবে সর্মথন করি। আল্লার মেহেরবানীতে আমি ১৯৭৯-৮০ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের ‘উম্মুল মদারেস’ বা মাদ্রাসা সমূহের মা বলে খ্যাত চট্টগ্রামের হাটহাজারী বড় মাদ্রাসা থেকে ‘সিহা ছিত্তা’ বা ৬নির্ভরযোগ্য হাদিস গ্রন্থের উপর অধ্যয়ন করে কাউমী মাদ্রাসার সর্বোচ্চ ডিগ্রী ‘দাওরায়ে হাদিস’র সনদ লাভ করি। (অবশ্য কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী নেয়া হয়েছে এর পরে।) ওই সময় বর্তমান ‘হেফাজতে ইসলামের’ আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী সাহেব হুজুর ছিলেন ওই মাদ্রাসায় সরাসরি আমার শিক্ষক। তাঁর কাছে রসূলে পাক সঃ এর সীরাতের উপর ঐতিহাসিক প্রমান্য হাদিস গ্রন্থ ‘শমায়েলে তিরমিজী’র সবক গ্রহণ করার সুযোগ হয়েছে আমার। তাই সরাসরি হেফাজতে ইসলামের কার্যক্রমের সাথে আমি জড়িত না হয়েও হুজুরের একজন ছাত্র এবং সাংবাদিক হিসেবে শুরু থেকেই এর প্রতি তিক্ষ্ম নজর রেখে আসছিলাম। মুক্তিযুদ্ধ করে অর্জিত আমাদের প্রিয় এই মাতৃভূমি বাংলাদেশ আমাদের গর্ব। এর উন্নয়ন, স্থিতিশীলতা আমাদের কাম্য। নিজ নিজ ধর্ম, কৃষ্টি কালচার নিয়ে আমরা সব ধর্ম ও মতের মানুষ স্বাধীনভাবে বসবাস করতে চাই এখানে। আমরা যেমন চাইনা ধর্মীয় উগ্রতা, তেমনি মানতে চাইনা কোন ধরনের ধর্ম দ্রেুাহিতাও।
মহান আল্লাহর শিক্ষা হচ্ছে ‘বল হে নবী তোমরা আল্লাহকে ভালবাসতে চাইলে আমার আনুগত্য কর। আল্লাহও তোমাদের ভালবাসবেন। মহান আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়াবান। (সূরা আলে ইমরান,আয়াত নং ৩১)। মুসলমানদের ঈমানকে নবী প্রেম ও রসূল সঃ এর ভালবাসার সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। সকল ভালবাসার উপর আল্লাহ ও তার রসূল সঃ এর ভালবাসাকে অগ্রাধিকার দেয়ার মাধ্যমেই পূর্ণাঙ্গ মুমিনের পরিচয় ও ঈমানের স্বাদ পাওয়া যায়। হযরত আনাস রাঃ বর্ণিত হাদিসে রসূল পাক সঃ এরশাদ করেন ‘ততক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের কেউই পূর্ণাঙ্গ ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি (মুহাম্মদ) তার নিকট তার পিতা, সন্তান-সন্ততি এবং অন্যান্য সকল মানুষের চেয়ে প্রিয়তম হব’। (বুখারী ও মুসলিম)।
নিখিল বিশ্বের স্রষ্টা মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষের কল্যাণে যুগে যুগে অসংখ্য নবী এবং রসূল পাঠিয়েছেন। এই সিলসিলার সর্বশেষ নবী এবং রসূল হলেন হযরত মুহাম্মদ সঃ। এর পরে আর কোন নবী-রসূল পাঠানোর পথ আল্লাহ তায়ালা বন্ধ করে দিয়েছেন। মুহাম্মদ সঃ এর পর কেউ নবী-রসূল বলে দাবী করলে সে হবে ভন্ড-প্রতারক। গোড়া থেকেই ইহুদীদের একটি প্রত্যাশা ছিল শেষ নবী বনী ইস্রাঈলের অথবা ইহুদীদের কেউই হবেন। কিন্তু না শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সঃ হযরত ইসমাইল আঃ এর বংশধর থেকে হওয়ায় ইহুদীরা আশাহত হয়েছে। তারা জানতো হযরত মুসা আঃ এর উপর অবতীর্ণ আসমানী কিতাব তৌরাতকে তারা ইচ্ছে মত পরিবর্তন পরিবর্ধন করে সুবিধা ভোগ করে আসছিল। মুহাম্মদ সঃ ও কুরআনের উপর ঈমান আনলে সেই সুযোগ তো আর ভোগ করতে পারবে না। তাই তারা আল্লাহর রসূল সঃ এর আগমনের শুরু থেকেই শত্রুতা পোষণ করে আসছিল। ইহুদীরা তৎকালীন মক্কার কাফেরদের সাথে মিলে রসূল সঃ এর বিরুদ্ধে কত না ষড়যন্ত্র করেছে। খাবারে বিষ দিয়ে, পাথর চাপা দিয়ে বিশ্বনবীকে হত্যা করতেও চেয়েছিল তারা। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা বিশ্বনবী সঃকে পাঠিয়েছেন ‘বিশ্ববাসীর জন্য রহমত স্বরূপ’। তাই বিশ্বনবী সঃ এর সম্মানকে তার সৃষ্টির পরতে পরতে বুলন্দ করেছেন ‘অ রফানা লাকা জিক্রাক’ বলে (সূরা আন নাশরাহ, আয়াত নং-৪)। ইহুদীরা বিশ্বনবী সঃ এর প্রতি শত্রুতা পোষণ করে ‘মগদোব’ বা আল্লাহর গজব কুড়িয়েছে। আর বিশ্বনবী সঃ এর আদর্শ গ্রহণ না করে খ্রিষ্টানরা হয়েছে পথভ্রষ্ট। হেদায়াত পাওয়ার জন্য সূরায়ে ফাতিহার শেষ আয়াতে আল্লাহ পাক এই দুই জাতির অনুসরণ থেকে ঈমানদার মুসলমানদের সতর্ক করেছেন ‘গাইরিল মগদোবি আলাইহিম অলাদ্দোয়াললিন’ বলে।
কিন্তু না যুগে যুগে কিছু কুলাঙ্গার বিশ্বনবী সঃ এর শানে বেআদবী করার ধৃষ্টতা দেখিয়ে আল্লাহর গজব আর বিশ্ববাসীর ঘৃণা কুড়িয়েছে। কেউ ব্যাঙ্গ চিত্র এঁেক, কেউ কবিতা লিখে, কেউ কাল্পনিক গল্প সাজিয়ে বিশ্বনবী সঃ ও উম্মুহাতুল মুমিনিনদের চরিত্রের উপর কালিমা লেপনের দুঃসাহস দেখাতে চেষ্টা করেছে। এদেরকে কি বলব পথ ভ্রষ্ট, ইহুদী-নাসারাদের প্রেতাত্মা, না সামন্য টাকার গোলাম, নাস্তিক, মুরতাদ? সাম্প্রতিক সময়ে এরকম কিছু কুলাঙ্গার ইন্টারনেটের বিভিন্ন ব্লগে বিশ্বনবী সঃ এর মহান চরিত্র নিয়ে আজে-বাজে লেখে ঈমানদার মুসলামানদের মনে কষ্ট দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু না যখনই এই রকম কোন প্রয়াস ঈমানদার মুসলমানরা দেখেছে তখনই জীবন বাজি রেখে তারা প্রতিরোধ গড়ে তোলেছে। তা বিশ্বের যে প্রান্তেই হউক মুসলমান মাত্রই নবী প্রেমের প্রমান দিয়েছে। ওসব কুলঙ্গারদের রুখে দাঁড়িয়েছে। আল্লামা ইক্ববাল বলেছেন ‘বাতিলসে দবনেওয়ালে আই আসমা নেহি হ্যাম, সওবার করচুকাহে তো এমতিহাঁ হামারা’ আমরা মুসলমান বীরের জাতি, কোন অপশক্তির কাছে মাথা নত করতে জানিনা। হে আসমান তুমিই তো প্রত্যক্ষদর্শী (বদর, ওহুদ, খন্দক থেকে কত) শতবার আমরা তার প্রমান দিয়েছি। বাংলাদেশের ঈমানদার মুসলমানরা প্রতিরোধ গড়ে তোলেছে নাস্তিক মুরতাদ দাউদ হায়দার, আহমদ শরীফ ও তসলিমা নাছরিনসহ শয়তানের চেলা চামু-দের বিরুদ্ধে। আল্লামা আহমদ শফী ডাক দিয়েছেন ‘হেফাজতে ইসলাম’র ব্যানারে ব্লগার নাস্তিকসহ বিশ্বনবী সঃ এর বিরুদ্ধে কুৎসা রটনাকারী এবং বিভিন্ন ইসলামী বিধান নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্যকারী মন্ত্রী-এমপিদের রুখে দাড়াঁতে। দল-মত, ধর্ম-বর্ণ, পেশা-শ্রেণী নির্বিশেষে বাংলাদেশের সর্ব শ্রেনীর মানুষ সাড়া দিয়েছে আল্লামা আহমদ শফীর ডাকে। ‘হেফাজতে ইসলাম’ দেশব্যাপী নিয়মতান্ত্রিকভাবে সভা সমাবেশ, ওয়াজ-নসিহত, তায়ালিম-তাক্বিন এবং লেখা-লেখির মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
গত ২৭ ও ২৮ মার্চ ২০১৫ইং হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ কক্সবাজার জেলার উদ্যোগে কক্সবাজার কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত শানে রেসালাত সম্মেলন দেখতে এবং খবর সংগ্রহ করতে গিয়েছিলাম। সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী বলেছেন-রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশ কঠিন অবস্থার মধ্যদিয়ে অতিক্রম করছে। সংলাপ ছাড়া এ অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয়। যারা ইসলাম মেনে চলে তাদের জীবনে সংকট তৈরি হয়না। ইসলামই জনগণের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। অন্য কোন তন্ত্র-মন্ত্রে শান্তি আশা করা যায়না। আমরা যদি ইসলামকে অনুসরণ করে চলি তাহলে সমাজে হানাহানি, রক্তপাত, গুম-খুন থাকবেনা। দেশের নেতৃত্ব যাদের হাতে তাদের অন্তরে আল্লাহর ভয় না থাকার কারণে যে কোনো অন্যায়, অনাচার, পাপাচার ও জুলুম নিপীড়ন করতে তারা কুণ্ঠাবোধ করছেনা। এটা দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়। তাই মুসলমানদেরকে খোদাভীরু নেতৃত্ব সৃষ্টি করতে হবে। তিনি বলেন-নাস্তিক, মুরতাদ ও ধর্মদ্রোহীরা মহান আল্লাহ ও তার রাসূল সাঃ এর শানে বেয়াদবি করছে। আমরা তা সহ্য করতে পারিনা। আল্লাহর জমিনে নাস্তিকদের থাকার স্থান নেই। তাই নাস্তিক মুরতাদদের বিরুদ্ধে আমাদের আজীবন সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। তিনি আরও বলেন-ইসলামের মৌলকি স্তম্ভ হলো পাঁচটি। যারা এ পাঁচ স্তম্ভ মেনে চলে তারা আস্তিক। যারা মানেনা তারা নাস্তিক। নামায সকল কুসংস্কার ও অপসংস্কৃতি থেকে মানুষকে বিরত রাখে। তাই মুসলমানদের ঘরে ঘরে নামাজি সৃষ্টি করতে হবে। তাহলেই পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে শান্তি আসবে। তাই তিনি সর্বস্তরের মুসলমানদেরকে প্রকৃত মুমিন ও নামাজি হওয়ার আহ্বান জানান।
হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভায় কতিপয় ইসলামবিদ্বেষী মুরতাদ ও নাস্তিক রয়েছে, যারা ইসলামী বিধিবিধান ও মূল্যবোধের বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে বিদ্বেষপ্রসূত মন্তব্য ও বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। ইসলামের মৌলিক ফরজ বিধান পর্দা বা হিজাব পরাকে কটাক্ষ করে ইতোপূর্র্বে সমাজকল্যাণমন্ত্রী ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছে। ‘সুদে’র মতো আল্লাহ প্রদত্ত হারাম বিধানকে অবৈধ নয় বলে অর্থমন্ত্রী পবিত্র কোরআনের নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করেছে। ধর্মীয় অনুভূতিতে উপর্যুপরি আঘাত করে তারা আলেমসমাজ ও তৌহিদি জনতাকে ক্ষিপ্ত করে দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে চায়। এদেরকে প্রতিরোধ করা আমাদের সকলের ঈমানি দায়িত্ব। এইসব ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক-মুরতাদ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য দেশের সর্বস্তরের ওলামা-পীর-মাশায়েখ ও তৌহিদি জনতাকে এগিয়ে আসতে হবে। বাবুনগরী আরও বলেন-ইসলামের নামে দেওয়ানবাগী ও রাজারবাগী নামে নানা ভ্রান্ত মতাদর্শ প্রচার করে মুসলমানদের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। তিনি এসব বিভেদ সৃষ্টিকারী ভ্রান্ত মতবাদ থেকে মুসলমানদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।
শায়খুল হাদিস আল্লামা তাফাজ্জল হক বলেন, রাজনৈতিক অহমিকায় আক্রান্তরা সংবিধান থেকে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা তুলে দিয়ে জাতিকে হানাহানি ও চরম বিভক্তির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এর প্রতিবাদে টানা অবরোধ ও হরতালে দেশ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। দেশে মানবাধিকার, নাগরিক অধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার বলতে কিছুই নেই। ইসলাম সকল নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করেছে।
আল্লামা জুনায়েদ আল হাবিব বলেন, চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটকে ভিন্ন দিকে ফেরানোর জন্য নতুন করে নিরীহ আলেমসমাজ ও কওমী মাদ্রাসার ছাত্রদের জড়িয়ে কথিত অস্ত্র উদ্ধার ও গ্রেপ্তার নাটক তৈরি করে জঙ্গিবাদের কল্পকাহিনী সাজানো হচ্ছে। একশ্রেণির চিহ্নিত মিডিয়া ও একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠীর যৌথ কারসাজিতে এর আগেও অসংখ্যবার এমন অপপ্রয়াস আমরা লক্ষ্য করেছি। জঙ্গিবাদের জিকির তুলে তারা দেশের আলেমসমাজ ও মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদেরকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে কলঙ্কিত করতে এবং মাদ্রাসা শিক্ষাকে ধ্বংস করতে নানা ধরনের অভিযান ও নাটক বানিয়ে থাকে।
হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, দেশের আলেম ওলামা, মসজিদের ইমাম ও কৃষক শ্রমিক মেহনতি জনতা কারও বিরুদ্ধে কোন সন্ত্রাস ও দুর্নীতির প্রমাণ নাই। যারা দুর্নীতি করে সবাই কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী ও প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা বা দেশের এমপি-মন্ত্রী। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ইসলামী শিক্ষা না থাকার কারণে দেশের সর্বোচ্চ এসব ডিগ্রিধারীরা দুর্নীতিতে লিপ্ত হচ্ছে। তিনি তথ্য প্রকাশ করে বলেন, ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ৫মে ঢাকার শাপলা চত্ত্বরে হেফাজতে ইসলামের ঐতিহাসিক সমাবেশে সরকারের ক্রাক ডাউনে অসংখ্য নেতা-কমীর্, হাফেজ-আলেম, নবী প্রেমিক ঈমানদার মুসলমান গুম-খুন ও হতাহত হয়েছে। কিন্তু হেফাজতে ইসলাম উগ্র এবং নাশকতার পাল্টা কোন কর্মসূচী দেয়নি। ক্নো দল ক্ষমতায় আসলো আর ক্নো দল ক্ষমতা থেকে বিদায় নিল সে চিন্তাও হেফাজতের নাই। তবে নাস্তিক মুরতাদ ব্লগার যারা আল্লাহ ও নবী মুহাম্মদ সঃ এর বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে এবং ইসলামী বিধিবিধান নিয়ে বেয়াদবী করে বরাবরই তাদের সর্বোচ্ছ শাস্তির দাবী করে আসছে। হেফাজত ‘সবর করেছে এখন খবর হচ্ছে’ বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
মাওলানা সাজেদুর রহমান বলেন, ইসলামে জঙ্গীবাদের কোন স্থান নেই। আলেম ওলেমা বা মাদ্রাসার কোন ছাত্র সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত নয়। বিভিন্ন অধিবেশনে বিভক্ত শানে রেসালত সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন-হেফাজতে ইসলাম কক্সবাজার জেলা সভাপতি মাওলানা আবুল হোসেন, মাওলানা মোহাম্মদ সুহাইব নোমানী, মুফতী এনামূল হক, মাওলানা আমান উল্লাহ সিকদার, মাওলানা মোস্তাক আহমদ, মাওলানা শেখ সোলাইমান, মাওলানা মসরুর আহমদ।
একটি বিষয় এখানে উল্লেখ না করলে হয়না। ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক মুরতাদ ব্লগার যারা আল্লাহ ও নবী মুহাম্মদ সঃ এর বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে এবং ইসলামী বিধিবিধান নিয়ে বেয়াদবী করেও দিব্বী আরাম আয়েসের জীবন যাপন করে আসছে। তাদের ধন সম্পদ আর ক্ষমতারও তো কোন কমতি নেই। তাই হয়ত তাদের মনে বা কারো কারো মনে প্রশ্ন জাগতে পারে-আল্লাহ, রসূল সঃ ও ইসলাম সত্য হলে তাদের উপর হঠাৎ কোন বিপদ বা গজব আসছে না কেন? আল্লাহ তায়ালা গজব দিয়ে তাদেরকে এবং তাদের জনপদ ধ্বংস করে দিচ্ছে না কেন? এটা একটা অজ্ঞতা এবং ধৃষ্টতা। বিশ্বনবী সঃ এর জীবদ্দশায় তৎকালীন আরবের কাফির মুশরিকরাও একই কথা বলতো। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই ধৃষ্টতার জবাব দিয়েছেন কুরআন শরীফের সূরায়ে আনফালের ৩৩ নং আয়াতে। ‘হে নবী আপনি যে জনপদে আছেন সেখানে আল্লাহ গজব দেবেনা। আর ওই জনপদের মানুষকেও আল্লাহ গজব দিয়ে ধ্বংস করবে না। যে জনপদের মানুষ আল্লাহর নিকট এস্তিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করে’।
আল্লাহর নবী এখানে নাই। লাখ লাখ হক্কানী আলেম ওলামা, নায়েবে রসূল সঃ, পীর মশায়েখ, হাফেজে কুরআন, আল্লাহ প্রেমিক, নবী-রসূল প্রেমিক ঈমানদার মুসলমান এখনো বাংলাদেশে জীবিত আছেন। যারা দিনের ব্যস্ততা শেষে রাত জেগে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এই জনপদের শান্তি শৃঙ্খলা ও উন্নয়নের জন্য দোয়া করেন। এখনো বাংলাদেশের লাখো মসজিদের মিনার থেকে দিনে পাঁচবার আল্লাহু আকবর, অল্লাহ মহান ও মুহাম্মদ সঃ আল্লাহর নবী এই সাক্ষ্য দেয়া হচ্ছে। শত শত মাদরাসা থেকে লাখ লাখ শিক্ষার্থী আল্লাহ ও রসুল সঃ এর আনুগত্যের শপথ নিয়ে কুরআন-সুন্নার অলোকে বাংলাদেশকে একটি শান্তিপূর্ণ সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার মিছিলে শরিক হচ্ছে। এগুলো দেখে ইসলাম বিদ্বেষীদের বুক কাঁপছে। তাই তাদের বুকে এত জ্বালা!
দিনের আলো পেঁচার অপছন্দ বলে কি সূর্য্য উঠবে না? পেঁচাই বরং গুহায় থাকবে। তেমনি আল্লাহ, রসূল সঃ ও কুরআনের আলো যাদের অপছন্দ তারা ইচ্ছে করলে আল্লাহর এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে পারে। কিন্তু মহান আল্লাহর স¤্রাজ্য ছেড়ে কোথাও পালানোও কারো পক্ষে অসম্ভব।
আমরা দেখছি আল্লামা আহমদ শফির সেই ’সবর কর খবর হবে’ উক্তির সফল বাস্তবায়ন। রসুল সঃ এর দাওয়াতে বিরোধিতা, সন্ধি ইত্যাদি যে কয়টি প্রতিক্রিয়া হয়েছিল। ঠিক এখনো আল্লামা আহমদ শফির দাওয়াতে যারা একদিন বিরোধিতা করেছিলেন আজ তাঁরা তাঁর সাথে সন্ধি করেছেন। এটি ইসলামের বিজয়। ইসলামের এজেন্সী তো কাউকে দেয়া হয়েছে বলে আমরা জানিনা। তাই ইসলামের কাজ যে কারো মাধ্যমে হলে গা জ্বালা করবে কেন?
#এটি লেখা হয়েছিল ৩০.০৩.২০১৫ খ্রিষ্টাব্দ
# মোবাইল ০১৮১৯- ১৭ ০১ ৯০
ইমেইল-inqilab.cox@gmail.com