বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে ৬ সন্ত্রাসী

ফরিদুল আলম দেওয়ান- মহেশখালী

চতুর্দিকে সাগর আর পাহাড় বেষ্টিত দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী। এ উপজেলায় জলদস্যু যেমন আছে তেমনি ৩০ হাজার একর বনভূমি জুড়ে ত্রাস সৃষ্টি করে আসছে ৯টির বেশী সন্ত্রাসী গ্রুপ। তারমধ্যে উপজেলার কালারমারছড়ার ৫টি ও হোয়ানকের ৪টি সন্ত্রাসী সশস্ত্র সন্ত্রাসী  গ্রুপ রয়েছে। জলদস্যুতা,চিংড়ী ঘের ও বনভূমি দখল ও আধিপত্য বিস্তারে খুন খারাবী করে বেড়ায় এসব সন্ত্রাসী বাহিনী। রয়েছে গহীন অরণ্যে অস্ত্র তৈরীর কারখানা। এখান থেকে দেশীয় তৈরী অস্ত্র চালান হতো চট্টগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। দীর্ঘদিন থেকে এই সন্ত্রাসী গ্রুপের হাতে জিন্মি হয়ে আছে এখানকার জেলে ও সাধারণ মানুষ। সাম্প্রতিক সময়ে মহেশখালী থানায় যোগদানকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ এর আন্তরিকতায় পুলিশ

প্রশাসনের একের পর এক অভিযানে এখানকার সন্ত্রাস জগতে এসেছে গত ১৬ বছেরের রেকর্ডযোগ্য আমুল পরিবর্তন। গ্রেপ্তার হয়েছে দীর্ঘ দিন অধরা পালিয়ে থাকা দাগী সন্ত্রাসী চোর ডাকাত ও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীসহ পাহাড়ী এলাকায় অস্ত্র তৈরীর কারখানা গেঁড়ে অস্ত্র তৈরীর কারিগররা। থানার রেকর্ড অনুযায়ী গত ২১ মাসে এখানে উদ্ধার হয়েছে ২৩৭টি দেশীয় তৈরী আগ্নেয়াস্ত্র, ৫০১ রাউন্ড তাজা কার্তুজ, ১০ হাজার ১শত ১লিটার মদ, ২কেজি ৫শ গ্রাম গাঁজা, ২১ হাজার ৯শত ৬পিচ ইয়াবা    সহ বিভিন্ন প্রকার মাদক ও অস্ত্রশস্ত্র। গ্রেপ্তার হয়েছে ১২৮ জন দাগী মাদক ব্যবসায়ি ও ৯৮  অস্ত্র তৈরীর কারিগরসহ শতাধিক দাগী পলাতক চোর ডাকাত জলদস্যু ও মাদক ব্যবসায়ি। ধংস করা হয়েছে ১০টির অধিক মদের মহাল।  এখন অনেকটা শঙ্কামুক্ত বলে জানান এখানকার বাসিন্দারা।

সরজমিনে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানাযায়, সন্ত্রাসী অধ্যূষিত এলাকা মহেশখালীতে ক্রমশ দূর্বল হয়ে আসছে অপরাধীদের রাজত্ব। পুলিশ বাহিনীর শক্ত অবস্থান ও পর পর অভিযানের কারণে মহেশখালী দ্বীপ ছেড়ে পালিয়ে গাঢাকা দিচ্ছে সন্ত্রাসীরা। আপর দিকে সন্ত্রাসীদদের ভয়ে দীর্ঘদিন পালিয়ে থাকা মানুষেরা ফিরতে শুরু করেছেন এলাকায়।

মহেশখালী থানার রেকর্ড অনুযায়ি জানা যায়,  ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে উদ্ধার হয়েছে ৫টি এলজি,১৪টি বন্দুক,১টি রাইফেল,১৭ কার্তুজ, ফেব্রুয়ারীতে ৭ এলজি,৩৭ বন্দুক,২০০ কার্তুজ, মার্চে ৫টি এলজি,৮টি বন্দুক,২৬টি  কার্তুজ, এপ্রিলে ৭টি এলজি,৪টি বন্দুক,৩২টি  কার্তুজ, মে জুন ২ মাসে ২০টি এলজি,১টি বন্দুক,৩৩ কার্তুজ ও জুলাইতে  ১টি বন্দুক ও ৩ কার্তুজ। যাহা গত ২০০১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত রেকর্ড পর্যালোচনায় অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসী গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ রেকর্ড।

এদিকে পুলিশ সুত্রে জানাযায়, সন্ত্রাসীদের জিন্মীদশা থেকে রক্ষায় পুলিশের অভিযানে গত ২১ মাসে মহেশখালীতে বন্দুক যুদ্ধে মারা গেছে অন্তত ৬ জন শীর্ষ সন্ত্রাসী।

২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারী বর্তমান ওসি প্রদীপ কুমার দাশ যোগদানের পর একে একে বুন্দুক যুদ্ধে যেমন নিহত হয়েছে এ ৬ জন। এদের মধ্যে স্বররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের তালিকাভূক্ত উল্লেখ যোগ্য নিহত সন্ত্রাসীরা হলেন।  ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারী বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়  হোয়ানক ইউনিয়নের মাঝের পাড়ার নুরুচ্ছফার পুত্র  আব্দুর সাত্তার(৩৩)। ২৪ মে  হোয়ানক ইউনিয়নের  পূর্ব কালাগাজীর পাড়ার আইয়ুব বাহিনীর নুরুল হক প্রকাশ বেটকার পুত্র এনাম (৩৫)। এর কয়েক দিন পরেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রাণলয়ের তালিকাভূক্ত  অস্ত্র যোগানদাতা বড় মহেশখালীর মুন্সির ডেইল এলাকার মৃত উল্লাহর পুত্র খুইল্যা মিয়া। ২০১৮ সালের মে মাসে বড়মহেশখালীর মুন্সির ডেইল গ্রামের আনোয়ার পাশার পুত্র অস্ত্রের কারিগর মোস্তাক(৩৫)।

২০১৮ সালের ১১আগস্ট  হোয়ানক পানিরছড়া এলাকার মৃত বশির আহাম্মদের পুত্র  আব্দুল মালেক ও ২০১৮ সালের ৩০ শে সেপ্টেম্বর ছোট মহেশখালী দক্ষিণ কুল গ্রামের মোহাম্মদ ইউছুপ এর পুত্র  মাহমুদুল করিম(৪০) পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে মারা যান।

অপর দিকে পুলিশ বলছে, কোন সন্ত্রাসী আটক কিংবা বন্দুক যুদ্ধে মারা গেলে পুলিশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে মামলা করে আইন-শৃংখলারক্ষাকারী বাহিনীর সন্ত্রাস বিরোধী অভিযানে বিঘ্ন ঘটার চেষ্টা চালায় সন্ত্রাসী গ্রুপের আশ্রয় প্রশ্রয় দাতা কিছু রাঘব বোয়ালরা।

অন্যদিকে মহেশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ জানান, পুলিশের পক্ষ থেকে সন্ত্রাসীদের দমনে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক জলদস্যু ও সন্ত্রাসীকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে সন্ত্রাসীদের হাতে থাকা বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র। মহেশখালীর বাকী  সন্ত্রাসীদের সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। ধরা হবে তাদের আশ্রয় দাতাদেরও।