ডেস্ক নিউজ:
♦ মিত্রদের নিয়ে শক্তি সুসংহত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ
♦ বিএনপির জোটের বাইরে থাকা দলগুলোকে কাছে টানার চেষ্টা
আওয়ামী লীগের ওই নেতারা জানান, ১৪ দলের শরিক দলগুলো ও জাতীয় পার্টি যেন সঙ্গে থাকে সেদিকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চলছে আওয়ামী লীগ। এরশাদকে নিয়ে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের অনেকের মনেই নানা সন্দেহ আছে। নির্বাচনের আগ মুহূর্তে এরশাদ যেন তাঁর অবস্থান বদলাতে না পারেন সেদিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ১৪ দলকেও আরো সক্রিয় করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
বহুল আলোচিত একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায় আগামীকাল বুধবার। গুরুত্বপূর্ণ এ মামলার রায়ের আগে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে। সম্ভাব্য সহিংসতা বা নাশকতা দমনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর ভূমিকা নেবে। গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন সময়ে সহিংসতার পুরনো মামলাগুলোর আসামিদের গ্রেপ্তার করার যে অভিযান চলছে, তা অব্যাহত থাকবে। বিএনপির যেসব নেতাকর্মী নাশকতা চালাতে পারে বলে সন্দেহ আছে তাদের নজরদারিতে রাখা হবে। এরই মধ্যে পুলিশের পক্ষ থেকে সব জেলায় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচনী মাঠেও যেন বিরোধীরা সুবিধা করতে না পারে সে জন্য এখন থেকে নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ এবং এর নেতৃত্বাধীন ১৪ দল। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সাত দিনের নির্বাচনী গণসংযোগ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। বিভিন্ন জেলায় সমাবেশ করার কর্মসূচি দিয়েছে ১৪ দল। চলতি সপ্তাহে রাজশাহী, নাটোর, খুলনায় সমাবেশ হবে। চলতি মাসেই ঢাকায় মহাসমাবেশ করার পরিকল্পনা রয়েছে ১৪ দলের। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমতি দিলেই মহাসমাবেশের তারিখ চূড়ান্ত করা হবে।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, বিএনপি জোটের বাইরে যেসব রাজনৈতিক দল আছে তাদের কাছে টানার জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টসহ বিএনপি জোটের বাইরে থাকা ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে আসন সমঝোতাও করতে পারে আওয়ামী লীগ। হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সরকার সুসম্পর্ক তৈরি করেছে। এটি আরো সুদৃঢ় করা হবে।
সূত্র মতে, ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাকে একটি আসন ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা রয়েছে ক্ষমতাসীনদের। নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময়ের পরামর্শ দিয়েছে ১৪ দলের শরিক দলগুলো। গত শনিবার ১৪ দলের এক বৈঠকে এ পরামর্শ দেওয়া হয়। বিএনপি জোটের বাইরে থাকা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সব শক্তিকে স্বাধীনতাবিরোধী ও তাদের মিত্রদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করবে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি সাম্যবাদী দলের এক আলোচনাসভায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের বামদলগুলোকে ন্যূনতম এই ইস্যুতে সর্বোচ্চ ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিএনপির সঙ্গে জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া ও যুক্তফ্রন্টের ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এরা তো আগে থেকেই বিএনপির সঙ্গে নানা বৈঠক করে আসছিল। এখন তারা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। অতীতে তাদের ভূমিকা মানুষ দেখেছে। তাদের নিয়ে মোহিত হওয়ার কিছু নেই। এ দেশ সাহসীদের দেশ। এখানে কাপুরুষদের বন্দনা করার দেশ না। বি চৌধুরী, ড. কামাল আর তারেক রহমানের ঐক্য হলো তিন পলায়নপর নেতার ঐক্য। এই ঐক্যের মধ্য দিয়ে এ দেশের মানুষের কিছু এসে যায় না।’
ওই ঐক্য নিয়ে সরকারের দুশ্চিন্তা বাড়ল কি না জানতে চাইলে মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘কিসের দুশ্চিন্তা? আমাদের কোনো দুশ্চিন্তা নেই।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুহম্মদ ফারুক খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা যেকোনো নতুন জোটকে স্বাগত জানাই। রাজনৈতিক জোটটি দুটি উদ্দেশ্য নিয়ে হতে পারে। একটি হলো তারা ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে গিয়ে ভালো করার চেষ্টা করবে। দুই, তারা সকলে মিলে ষড়যন্ত্র করার জন্য জোট বেঁধেছে। আশা করব, তারা একটি সুন্দর, স্বচ্ছ নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে জোট করেছে। তবে যেহেতু তাদের অতীত আমরা জানি সে জন্য তাদের নিয়ে আশঙ্কা থেকেই যায়। আমরা আশা করব, তারা আগামী নির্বাচন ভণ্ডুল বা নস্যাৎ কিংবা সহিংস করার লক্ষ্যে জোটটি করেননি।’
এক প্রশ্নের জবাবে ফারুক খান বলেন, ‘নতুন এই জোটটির দাবিগুলো দেখে আমরা তাদের সন্দেহ করছি। তাদের প্রায় সব দাবিই তো সংবিধান পরিপন্থী। যেহেতু তারা সংবিধানের পথে হাঁটতে চাইছে না সুতরাং তারা চক্রান্তের পথে যেতে পারে এমন আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ সমস্ত আন্দোলন করে সরকারকে টলানো যাবে না। এই সরকারের জনভিত্তি রয়েছে। তাই এক মঞ্চে থেকে তাদের (বিএনপি, যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া) আন্দোলনে উদ্বিগ্ন নই। দেশে সব সময় দুটি ধারা বিদ্যমান—একটি আওয়ামী লীগের পক্ষে আরেকটি আওয়ামী লীগের বিপক্ষে। বিপক্ষ শক্তিকে মোকাবেলা করেই আওয়ামী লীগ এসেছে এবং এখনো টিকে আছে, ভবিষ্যতেও টিকে থাকবে। নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের এক হওয়ায় কিছু আসে যায় না। কারণ তারা জনবিচ্ছিন্ন।’