মো. নুরুল করিম আরমান, লামা:

বান্দরবানের লামা উপজেলায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের কবরস্থানকে পুঁজি করে জনৈক ব্যক্তির দীর্ঘ বছরের ভোগদখলীয় জায়গা অবৈধ দখল চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, জায়গা দখলে ব্যর্থ হয়ে ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে চিউনি আনন্দ ত্রিপুরা কারবারী খ্রিষ্টান পাড়ার লোকজন একটি মনগড়া অভিযোগও করেন প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে। এতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আজিজনগর ইউনিয়নের চিউনি পাড়ার বাসিন্দা আব্দুল হকের ছেলে আব্দুল মন্নান সরকার কর্তৃক ১৯৮২-৮৩ সালে আর/১৭০১ নং হোল্ডির মূলে ৪ একর ৮০শতক জায়গা বন্দোবস্তি প্রাপ্ত হয়ে তথায় ফলজ বনজ বাগান সৃজন করে ভোগ করে আসছেন। আব্দুল মন্নানের পারিবারিক কাজে নগদ টাকার প্রয়োজন হলে ২০০৯ সালে বাগানসহ জায়গাটি পাশের আবদুস সোবহানের ছেলে মো. শওকত আলীর নিকট ছাফ বিক্রি করে দেন। মাস-দুয়েক আগে জায়গার গাছ কেটে আবারো নতুন বাগান করতে চারা লাগাতে গেলে হঠৎ আনন্দ ত্রিপুরা পাড়ার লোকজন ওই জায়গা তাদের দাবী করে ব্াঁধা প্রদান করেন। পরে গত বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বরাবরে তাদের কবরস্থান বে-দখল হয়ে যাচ্ছে বলে একটি অভিযোগ করেন আজিজগর ইউনিয়নের চিউনি আনন্দ ত্রিপুরা কারবারী খ্রিষ্টান পাড়ার কয়েকজন।

স্থানীয় আবুল কালাম, মো. হানিফসহ আরও বেশ কয়েকজন স্থানীয় লোকজন বলেন, এক মাস ধরে মো. শওকত আলীর পক্ষে নাজিম উদ্দিন বাগানের গাছ কেটে বিক্রয় করলেও ত্রিপুরা পাড়ার লোকজন কোন বাধা দেয়নি। হঠাৎ করে আনন্দ পাড়ার লোকজন নাজিম উদ্দিনের লাগানো প্রায় ১০ হাজার গাছের চারা উপড়ে ফেলে। তারা আরও বলেন, আব্দুল মন্নান জমিটি মো. শওকত আলীর কাছে বিক্রি করেন। ত্রিপুরাদের কবরস্থান সীমানা পিলারের নিচে। তাদের শশান্মে র জায়গা চিহ্নিত করা আছে। এরপরও তারা কেন শশ্নানের নাম ভাঙ্গিয়ে সীমানা অতিক্রম করে বিরোধ সৃষ্টি করছে তা বোধগম্য নয়। তারা বলেন, ত্রিপুরাদের শশ্নানের কোন কাগজপত্রও নেই। তারা মৃত লাশ যত্রতত্র কবর দিয়ে থাকেন। ইতিমধ্যে পাশের চিউনী ঝিরি রফিকুল ইসলাম খোকনের জায়গার পাশে পূর্বে তারা লাশ কবর দিয়েছে। আবার আলামিনের জায়গাতেও তারা বেশ কিছুদিন লাশ কবর দেন। পরবর্তীতে ২০১২ সালে এক স্থানীয় বৈঠকে পাড়াবাসীর উপস্থিতিতে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ৫০ শতক জায়গা দিয়ে স্থায়ী শান্তির লক্ষে সীমানা পিলার দিয়ে জায়গা পরিচিহ্নিত করে দেন। তারা সে পিলার অতিক্রম করে মো. শওকত আলীর জায়গায় গত বছর একটি লাশ কবর দিয়েছে।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো. রুকন উদ্দিন বলেন, এই ঘটনা নিয়ে বেশ কয়েকবার বৈঠক হয়েছে। আনন্দ ত্রিপুরা পাড়ার লোকজন কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। এরপরও মানবিক দিক চিন্তা করে ২০১২ সালে শালিসী বৈঠকে উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে কবরস্থানের জন্য ২০ শতকের পরিবর্তে ৫০ শতক জায়গা দেয়া হয়। দীর্ঘদিন যাবৎ মন্নান ও পরে মো. শওকত আলী জায়গা ভোগ দখলে রয়েছেন বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে জায়গার বর্তমান মালিক নাজিম উদ্দিন রানা বলেন, কাগজে পত্রে আমাদের জায়গা ৪ একর ৮০ শতক। কিন্তু আমরা দখলে আছি প্রায় ২ একর ৫০ শতকের মত। স্থায়ী শান্তির লক্ষে জায়গা কম থাকলেও আমরা মেনে নিয়েছে। আগের গাছ কেটে গত ২২ সেপ্টেম্বর নতুন করে বিভিন্ন প্রজাতির চারা রোপন করি। রাতের আঁধারে ত্রিপুরা পাড়ার লোকজন আমাদের রোপিত চারা গুলো তুলে ফেলে। ঘটনাটি স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অবগত আছেন। অভিযোগ অস্বীকার করে আনন্দ ত্রিপুরা পাড়ার বাসিন্দা বিজয় ত্রিপুরা সাংবাদিকদের বলেন, আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ ওই জায়গায় লাশ কবর দিয়ে আসছি। কাগজপত্র না থাকলেও আমরা দখলসূত্রে জায়গার মালিক।

আজিজনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন বলেন, আবদুল মন্নান থেকে জায়গাটি মো. শওকত আলী ক্রয় করে দীর্ঘ বছর ধরে ভোগ করে আসছেন। আনন্দ পাড়ার লোকজনের কোন কাগজপত্র না থাকলেও তারা জাযগটির কিছু অংশ তাদের দখলে দাবী করে অহেতুক সাম্প্রদায়ীক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা করছে মাত্র। এ বিষয়ে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ-জান্নাত রুমি বলেন, আজিজনগরের আনন্দ ত্রিপুরা পাড়ার লোকজনের একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।