উসমান গণি ইলিঃ
কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সামনে দক্ষিণ বাহারছড়া গোলচক্কর মাঠে চতুর্থ জাতীয় উন্নয়ন মেলার সফল সমাপ্তি ঘটেছে।
সাগর পাড়ের তীর ঘেসে, স্থানীয়দের সাথে দেশিবিদেশিদের পর্যটকদের পদচারণায় দেশের অন্য সব উন্নয়ন মেলা থেকে একটু আলাদা করে দেখেন দর্শণার্থীরা।
৪ অক্টোবর শুরু হওয়া ৩ দিনব্যাপি মেলার শেষ দিন দর্শনার্থীদের পদভারে মুখরিত ছিল। স্কুল, কলেজ শিক্ষার্থী থেক সব শ্রেণি পেশার লোক মেলায় গিয়েছে। সবার মাঝে উৎসাহ উদ্দীপনা বেশ লক্ষণীয় ছিল। কম বেশি সব স্টল নজর কেড়েছে। মেলাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দৃষ্টিনন্দন স্টল সর্বস্তরের দর্শনার্থীদের বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে।
অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী” নৌবাহিনী, ব্যাটলীয়ন,পুলিশসহ এই প্রতিপাদ্য জানিয়ে রামু সেনা নিবাসের অধীনস্থ ৬৫ পদাতিক ব্রিগেড কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ বাহারছরা গোলচক্কর মাঠে মেলা চলাকালীন স্টলে বিগত এক দশকে বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর সম্পাদিত বিভিন্ন স্হাপনা ও অবকঠাগত উন্নয়ন, আধুনিকায়ন, বিদেশে শান্তিরক্ষামিশনে সেনাবাহিনীর গৌরবময় অবদান, সমরসজ্জায় কৌশলগত আধুনিকায়ন, রনকৌশল, সমরাস্ত্র সংগ্রহ ও তৈরী, অস্ত্র ভান্ডার আধুনিক ও সর্বোচ্চ মজুদ ইত্যাদি ডিজিটাল বড় স্ক্রীনের মাধ্যমে স্টলের ভিতরে ও বাহিরে সবিস্তারে তুলে ধরা হচ্ছে।
সেনাবাহিনীর স্টলে ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আত্মত্যাগ ও বীরত্বপূর্ণ অবদানকে প্রশংশনীয়ভাবে চিত্রায়িত করা হয়েছে। দেশ মাতৃকার স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, অখন্ডতা সুরক্ষায় সেনাবাহিনীর নিরলস ভূমিকাকে দৃশ্যায়ন করা হয়েছে অপরূপভাবে। আস্ত কাঁচা মুলি বাঁশের বেড়া আর জলপাই রং এর কাপড়ের নেট দিয়ে সেনাবাহিনীর এই স্টল আর্কষনীয় ও নান্দনিকভাবে সাজানো হয়েছে। স্টল নির্মাণে প্রকৃতি ও শিল্পের যেন অপূর্ব সমন্বয়। “প্রতিরক্ষা বাহিনীর কোন কিছু জনসমক্ষে আনা যাবেনা” – সাধারণ মানুষের এই ভূল ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণ করে সেনাবাহিনীর রামুস্হ ১০ পদাতিক ডিভিশনের ৬৫ পদাতিক ব্রিগেডের উদ্যোগে স্থাপিত মেলার এ স্টলে সম্ভব সবকিছু সাধারণ জনগণের জন্য উম্মুক্ত করে রেখেছে।
স্টলের ইনচার্জ ও ৬৫ পদাতিক ব্রিগেডের মেজর আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, তরুন, মেধাবী ও উদ্যমী যুবকদের বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদানে উৎসাহিত করার জন্য স্টলে লিফলেট বিতরণ, বিভিন্ন অনুপ্রেরনামূলক কার্যক্রম প্রদর্শন করা হচ্ছে।
সিএমএইচ রামু’র ৫৫ ফিল্ড এ্যাম্বুলেন্সের ৮ সদস্য বিশিষ্ট একটি মেডিকেল টিম ডায়াবেটিস পরীক্ষা (রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা), রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা, রক্তচাপ পরীক্ষা সহ দর্শনার্থীদের সম্পূর্ন বিনামূল্যে প্রাথমিক চিকিৎসা সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে। এসব সেবা ও চিকিৎসা নেয়ার জন্য সেনাবাহিনীর এ স্টলে দর্শনার্থীদের সবমসময় ভীড় লেগে থাকে। প্রাকৃতিক দূর্যোগ, সংকট ও আর্থমানবতার সেবায় সেনাবাহিনীর প্রশংসনীয় ভূমিকা যেন এ স্টলেও বেশ দৃশ্যমান। আইন শ্রিংখলা বাহিনীর ব্যাটলেয়ন পাঁচ সদস্য কে মোতায়েন করা হয়েছে সাধারণ জনগণনের নিরাপৎার জন্য কক্সবাজার উন্নয়ন মেলা মাঠে এ স্টল যেন উম্মুক্ত একটি মিনি সেনানিবাস।
সেনাবাহিনীর উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক খ্যাতির কারণে উন্নত দেশের সেনা কর্মকর্তারাও এখন বাংলাদেশের সেনা একাডেমীসমুহ থেকে শিক্ষা অর্জনে দিন দিন বেশ আগ্রহী হয়ে উঠছে।
মেজর আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, অপ্রতিরোধ্য ও অদম্য প্রেরনায় বিগত এক দশকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একটি অত্যাধুনিক ও পরিপূর্ণ বাহিনী হিসাবে গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিশ্বের জন্য এখন একটা রোল মডেল। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্বক্ষমতা ও সুনাম আজ বিশ্বজোড়া। “চির উন্নত মম শীর” জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের এই কবিতাকে বুকে ধারণ করে নিরন্তর এগিয়ে চলা এই বাহিনীর বীরত্বগাঁথা ও ঐতিহ্যমন্ডিত ইতিহাস এই দৃষ্টিনন্দন স্টলে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে আকর্ষনীয়ভাবে।
উন্নয়ন মেলার স্টলের সামনে যুদ্ধরত সৈনিকদের স্ট্যাচু এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক কর্মকান্ডের ভিডিও ও স্থির চিত্র প্রদর্শন করা হচ্ছে।
অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল সাইফুর রহমানের তদারকি ও প্রেরনায় এই স্টলটিকে নান্দনিক ও সুদৃশ্যময় করে সাজানো হয়েছে। দর্শনার্থীদের সর্বোচ্চ সেবা ও স্টলের সবকিছুকে উপভোগ্য করে তোলার জন্য ৩০ জন জোয়ান ও কর্মকর্তা সার্বক্ষণিক আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সবমিলিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মনোমুগ্ধকর এই স্টল পুরো উন্নয়ন মেলার শ্রীবৃদ্ধি, দর্শনার্থীদের সেবা প্রদানসহ সকলের বেশ আকর্ষণ ও প্রশংসা কুুড়িয়েছে। এরই মধ্য দিয়ে জাতীয় ৪র্থ উন্নয়ন মেলার সফল সমাপ্ত হলো।