সাধারণ!!

প্রকাশ: ৬ অক্টোবর, ২০১৮ ০৬:১৮

পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে



মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম


অনেক দিন লিখি নাই। সবাই নিষেধ করে। লিখা পড়ে মানুষ এত্ত বিরক্ত যে ইনবক্সে ঝাঁড়ি দিয়ে লিখতে না করে। একজন লিখল, আমি সাধারণ মানুষ এত্ত কিছু বুঝিনা, তুই উল্টো পালটা লিখবি না।

আমি ভাবি মানুষের সাধারণ – অসাধারণ ক্যাটেগরিটা কিভাবে হয়। সবাই বলার সময় বলে আমি সাধারণ মানুষ ,আমি সাধারণ মানুষ!!

আজ পর্যন্ত অসাধারণ কাউকে দেখলাম না। এটা কি বিরল? নাকি আমার কপালের দোষ? সে যাই হোক। তবে একটা জিনিস বুঝেছি, সাধারণ আর সাধারণ নাই। সাধারণ হয়ে গেছে ন্যাকামি, ভন্ডামি আর উপহাসের অসাধারণ একটি শব্দ।

এই তো কয়েকদিন আগে বিরাট বাড়ি, গাড়ি কোটি টাকার মালিক বলল – জীবনে বেশি কিছু চাই না, শুধু চাই একটা সাধারণ জীবন, আমি সাধারণ মানুষ, সাধারণভাবে পার করে দিতে চাই।

কিছুদিন আগে আমার ঘনিষ্ট স্কুল ফ্রেন্ড। যে কিনা একটা আর্থিক প্রতিষ্ঠান মোটামুটি মানের চাকুরি করে (অনেক ভয়াবহ যোগ্যতা থাকা স্বত্তেও, প্রমোশন আর জব চেঞ্জের অফার থাকা স্বত্তেও) জব চেঞ্জ করছেনা কেন? জানতে চাইলে সে বলল দোস্ত আমি সাধারণ মানুষ, সাধারণই থাকতে চাই। এত্ত কিছুর দরকার নাই।

জীবনটা পার করে দিতে পারলে বাঁচি। সেদিন এক প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ এর সাথে হল। কথা প্রসংগে তিনি বললেন, তিনি সাধারন মানুষ, সাধারন ভাবে থাকতে চান। আমার জানা মতে তিনি অসাধারন ক্ষমতা সম্পন্ন মানুষ।

আমার আরেক বন্ধু গ্রামীণফোনে জব করে। তার সম্পদ চাকুরী, প্রভাবশালী আত্মীয় এর ছড়াছড়ি। সে আমাকে দেখলে বা ফেসবুকে কথা হলে প্রায় সময় বলে আমি সাধারন মানুষ।

গেল পরশু বাড়ি ফেরার পথে রিক্সাওয়ালা চাচার সাথে গল্প করছিলাম। উনার ছেলে সেভেন এ পড়ে আর একটি ৩বছরের মেয়ে আছে।

সেদিনকার মতো আমি ওনার গাড়ির শেষ যাত্রী, গাড়ি জমা দিয়ে দেবেন। সেদিনের মত খরচ উঠে গেছে কিন্তু হাতে তখনও গাড়ি জমা দিতে দুই আড়াই ঘন্টা বাকি আছে।

আমি বললাম আপনার তো সময় আছে, আরো চালান না কেন। উনি বললেন, স্যার বাসায় যামু, বাচ্চাদের কাছে যামু। ছোট মাইয়াডা বেশি কান্নাকাটি করে,দেখলে বুকে মুখ গুছে দিয়া শুয়ে থাকে।

আমি বললাম এই সময়ে তো আরো ৩০০/৪০০ টাকা আসতে পারে। উনি বললেন, আমি গরীব মানুষ, যা পাই তাতে চলে যায়, বেশি দরকার নাই।

প্রতিত্তরে আমি পুনরায় বল্লাম, বাচ্চাদের রাতে সময় দিতে পারবেন, এখনও অনেক সময় আছে আরো কিছু আয় করে যান??

লোকটার দ্রুত উত্তর- না স্যার! এত্ত দরকার নাই। রাইতে হেরা ঘুমায় যাইবো–।

– বাসা কই??

– বাসা আর কই, বস্তিতে– হাসতে হাসতে বলেন একরুমে, কোনরহমে থাহা, বৃষ্টিও পড়ে, চানের আলো ও পড়ে।

আমি নেমে টাকা দিয়ে দিই কিছু বাড়তি সহ। উনি ঘুরিয়ে চলে গেলেন।

পরশু রাতে “সাধারণ” আর বৃষ্টিও পড়ে, চানের আলো ও পড়ে নিয়ে অনেক ভাবলাম।

আসলে যে যার যার অবস্থানে মানুষ গুলো সাধারণ, কোটিপতি তার অবস্থানকে ভাবছেন সাধারণ, দশ বিশটা গাড়ি কিংবা একশ দুশো কোটি টাকা থাকাটা সাধারন ব্যাপার। স্ব স্ব অবস্থান থেকে সকলের সাধারনের ফ্রেমে বন্দি থাকতে চায়।

মধ্যবিত্ত তার অবস্থানকে ভাবছেন সাধারন আর গরীব ভাবছে তার অবস্থানকে সাধারন। সবাই সাধারন মানুষ।

ইংল্যান্ডের রাণীর অবস্থা!! যিনি দুর্ভিক্ষের সময় তার প্রজাদের রুটি জুুঁটছেনা শুনে পরামর্শ দিয়েছিলেন কেক দিতে। উনার কাছে কেকই ছিল সাধারন।

অথচ যেখানে প্রজাদের রুটিই জুটছে না। সেখানে বিলাসী কেক। তো যাই হোক, সাধারণ মানুষ আমার লিখা পড়বে, এটা আমি প্রত্যাশা করিনা।

আমার মত মানুষের লিখা পড়ে সাধারণ মানুষের উপকার হবেনা, সময় নষ্ট ছাড়া। তবে এটা বলি নিজেকে নিজে আগ বাড়িয়ে সাধারণ বলার কি দরকার!!

অনেক সময় এতে অন্য অসাধারণ মানুষদের উপহাস করা হয়।

আসলে সবাই অসাধারণ, এত্ত অসাধারন এর ভীড়ে আলাদা করে খুঁজে পাওয়া তাই দুস্কর। সাধারন হওয়া এত্ত সহজ না, সাধারন জিনিসটা সাধন করে অর্জন করতে হয়।

সাধারন মানুষ নিজেও জানবে না সে সাধারণ। কারণ এত্ত সাধারণ – অসাধারণ বুঝা তার সাধারণ ব্রেনে আসবে না।

তারা চাঁদের আলো আর বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হয়ে যায়। তবুও বুঝবেনা তারাই সাধারণ!!!


লেখক মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম ,সিনিয়র পুলিশ কমিশনার ,সিএমপি,চট্টগ্রাম জেলা।