পাগলা কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত গরুর মাংস বিক্রির অভিযোগে গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাজু মিয়া নামের এক কসাইকে ৬ মাসের কারাদ- দিয়েছে ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা করে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজিম উদ্দীন। জরিমানা অনাদায়ে কসাই রাজুকে আরো দুই মাসের কারাদন্ড দেয়া হয়।
কসাই রাজু গরুটি ২২ হাজার টাকায় কিনে বলে স্বীকার করেছে। পরে দ-িত কসাইকে জেল হাজতে পাঠানো হয়। এরপর থেকে ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা মাংস বিক্রি বন্ধ করে দেয়।
এদিকে, কসাই রাজা মিয়াকে ‘অন্যায়ভাবে সাজা দেয়া হয়েছে’ অভিযোগ আনে ব্যবসায়ীরা। জরিমানা মওকুপের জন্য জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দিয়েছে তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বড়বাজারের মাংস ব্যবসায়ীরা মূল্য তালিকার তোয়াক্কা করেনা। অতিরিক্ত মূল্য আদায়, ওজনে কম দেয়াসহ নানা অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিনের অভিযোগ থাকার পরও প্রশাসন সে বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়না।
অবশেষে পাগলা কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত গরুর মাংস বিক্রির বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযানকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে মাঠে নেমেছে একটি সুবিধাবাদি চক্র। তাদের এমন হটকারী সিদ্ধান্তকে খোদ মাংস বিক্রির দোকানগুলোর কর্মচারীরাও সমর্থন করেনা।

দৈনিক ৫০০ টাকা মজুরীর এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে বলেন, তারা (ব্যবসায়ী) তো টাকাওয়ালা। ব্যবসা না করলেও তাদের পরিবার চলবে। টাকার টেনশন নাই। কিন্তু আমরা গরীব লোক। দৈনিক ৫০০ টাকায় কাজ করি। সেই টাকায় পরিবারের ভরণ পোষণ চলে। কিস্তির টাকা দিতে হয়। একদিন কাজ না করলে চাল-ডাল কেনারও সাধ্য নেই।
আরেক কর্মচারী বলেন- ‘ধর্মঘট-টর্মঘট’ (তাদের ভাষায়) আমরা বুঝিনা। আমরা চাই ভাতের পয়সা। এখন আমাদের পেটের খবরও কেউ নিচ্ছেনা। পরিবার নিয়ে কষ্টে আছি।
এদিকে, ২ অক্টোবর সকালে শহরের বড়বাজারের মাংসের দোকানগুলোতে গিয়ে যায়- সেখানে অলস সময় কাটাচ্ছে কর্মচারীরা। টেবিলের উপর বসে গল্পগোজব করছে। ফেরত যাচ্ছে ক্রেতারা।
এ সময় কথা হয় মুহাম্মদ করিম, মুহাম্মদ নবী হোসেন, মুহাম্মদ নবীসহ ৬/৭ জন কর্মচারীর সাথে। তারা কাজ না পেয়ে দুঃখের কথা বর্ণনা দেন। নিজেদের পেটের খোঁজ নেয়ার দাবী তুলেন।
অভিযানকারী জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজিম উদ্দীন সিবিএনকে বলেন, রায়ে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি আদালতের শরণাপন্ন হতে পারে। কিন্তু সমালোচনা বা বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারেনা। এটা সুস্পষ্ট অদালত অবমাননা।
২ অক্টোবর জেলা প্রশাসককে দেয়া মাংস ব্যবসায়ী সমিতির স্মারলিপিতে বলা হয়- রাজা মিয়া ষড়যন্ত্রের শিকার। কোনো রকম তথ্য যাচাই না করে সাজা প্রদান করা হয়েছে। যে পশুকে অসুস্থ বলা হয়েছে ম্যাজিস্ট্রেট পশুটির মাংস পরীক্ষা করেননি। উদ্দেশ্যমূলক ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা আরো বলেন- ৭দিন অতিবাহিত হলেও মামলার নথিপত্র সরবরাহ করা হচ্ছে না। যার কারণে আপিলের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। পরিবারের একমাত্র আয়ের মাধ্যমে কারাগারে থাকায় তার পরিবারে নেমে এসেছে মানবেতর জীবন-যাপন।
সমিতির সভাপতি নূরুল আলমের নেতৃত্বে এই স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন- সিনিয়র সহ-সভাপতি নূরুল ইসলাম, সহ-সভাপতি শফিকুল ইসলাম মাঝু, সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ, বেলাল সওদাগর পুতু সওদাগর, কাদের সওদাগর, জসিম উদ্দীন আকাশ, আবদুর রহিম, রফিক উদ্দীন প্রমুখ।