মো: ফারুক, পেকুয়া:

এক সময় বয়স্ক, বিধবা আর প্রতিবন্ধীদের সমাজের বোঝা হিসাবে গন্য করা হত। উপেক্ষিত ছিল বীর মুক্তিযোদ্ধা আর এতিম শিশুরা। প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তি, স্কুল কলেজ আর মাদ্রাসা পর্যায়ে উপবৃত্তি, বিনামূল্যে বই আর মাতৃত্বকালীণ ভাতা কল্পনাই করা যেত না। নিংগৃহিত ছিল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন। পূর্নবাসন ছিলনা বসতহারা লোকজনের। ভিক্ষুক আর পদ শিশুদের স্থান ছিলনা সোনার বাংলায়। দূর্যোগকালীণ এলাকাবাসীর জন্য ছিলনা প্রয়োজনীয় সাইক্লোন সেল্টার। অসহায় অবস্থায় ছিল সাধারণ জনগণ। খাদ্য আর নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর মূল্য ছিল আকাশচুম্বি। ইন্টারনেট, মোবাইল নেটওয়ার্ক আর ব্যাংক সুবিধার জন্য দৌঁড়াতে হত জেলা অথবা মহানগরে। সেই শূন্য অবস্থান থেকে বর্তমান ২০১৮ সালের শেষ সময়ের অবস্থান শতভাগ এগিয়ে। শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে জনগণের ভাগ্য ফিরিয়ে আনার সম্ভাব্য সব সংগ্রামের ফলপ্রসুর অংশ হিসাবে পেকুয়াবাসী সকল ভাতা ও সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন। অনাগ্রসর লোকজন এখন আর পরিবারের বোঝা নয়। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প ও সমবায় সমিতির মাধ্যমে হাজার হাজার সাধারণ জনগণ উপকৃত হচ্ছেন। এছাড়াও পেকুয়া উপজেলায় শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেওয়া সব প্রকল্প দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। অতিত সরকারের আমলে সাধারণ জনগণ যা কল্পনাও করতে পারেনি সেই সকল সুবিধা পেকুয়াবাসীর হাতের নাগালে। বিভিন্ন দপ্তরের মাধ্যমে জনগণের জন্য সরকারী আর্থিক সুবিধা অতিত ইতিহাসের রেকর্ড সৃষ্টি করলেও প্রচারের অভাবে তা ঢাকা পড়ে যাচ্ছে।

উপজেলা সমাজ সেবা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে পেকুয়া উপজেলায় বয়স্কভাতা পাচ্ছে ৫৭০৮ জন সাধারণ নারী পুরুষ। যার আর্থিক ব্যয় ১ কোটি ৭১ লাখ ২৪হাজার টাকা। বিধবাভাতা পাচ্ছে ১৫৫৬ জন বিধবা মহিলা। যার আর্থিক ব্যয় ৪৬লাখ ৬৮ হাজার টাকা। প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছে ১৪৪৫ জন। যার আর্থিক ব্যয় ৬০ লাখ ৬৯ হাজার টাকা। প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তি পাচ্ছে ১৫৭জন। যার আর্থিক ব্যয় ১০লাখ ২২হাজার ৪শ টাকা। পেকুয়ার ২২জন বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রতিমাসে পাচ্ছে ১০হাজার টাকাসহ বোনাস। তাদের জন্য দেওয়া হয়েছে নিজস্ব ভবন। প্রতিবছরে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আর্থিক ব্যয় ২ কোটি ৬৪লাখ টাকা। ১১টি এতিম খানার ১৭১জন এতিম শিশু প্রতিমাসে ১হাজার টাকাসহ সকল সুবিধা ভোগ করছেন। প্রতি বছরে এতিম শিশুদের জন্য আর্থিক ব্যয় ২০লাখ ৫২হাজার টাকা। দলিত/জেলে সম্প্রদায়ের ৪০জন পাচ্ছে সরকারী ভাতা। প্রতি মাসে ৫শ টাকা করে প্রতিবছরে তাদের জন্য আর্থিক ২লাখ ৪০হাজার টাকা। ২জন হিজরাকে প্রতিমাসে দেয়া হয় ৫শ টাকা করে। রোগী কল্যাণ সমিতির উদ্যোগে প্রতিবছরে ১লাখ ১০হাজার টাকা ব্যয় করা হয় অস্বচ্ছল রোগীর কল্যাণে। ৮টি সেচ্ছাসেবী প্রতিষ্টানকে অনুদান দিয়ে সেবামূলক কার্যক্রম চালু রয়েছে। এছাড়াও কম সুদে ২টি মাতৃকেন্দ্রে ১লাখ, এসিডদগ্ধ ১২লাখ ৭১হাজার ৫শ, আর.এস.এস এর মাধ্যমে ৫৬লাখ ৯৮হাজার টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে।

উপজেলা সমবায় সমিতি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ৬০টির অধিক সমবায় সমিতি কার্যকর রয়েছে পেকুয়া উপজেলায়। যেখানে ১২ হাজারেরও অধিক লোকজন উপকৃত। ৬টি আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ৬শ বসতহারা পরিবারকে বসতবাড়ি করে সকল সুবিধা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও পল্লী উন্নয়ন কার্যালয় এর মাধ্যমে অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের দেয়া হয়েছে কম সুদে সাড়ে ৪লাখ টাকার ঋণ। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের কার্যালয়ের মাধ্যমে গর্ভবর্তি মহিলাকে মাতৃত্বকালীন ভাতা, মহিলাদের সেলাই প্রশিক্ষণ দিয়ে এলাকাবাসীকে স্বাবলম্বী করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুদান থেকে ইতিমধ্যে গৃহহীনকে বসতবাড়ি ও পাহাড়ি লোকজনকে সেলাই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু রয়েছে। যুব কল্যাণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে ১হাজার স্থানীয় জনগণ উপকৃত হচ্ছেন।

একটি বাড়ি একটি খামার ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের মাধ্যমে ৬৩টি সমিতি আর ৩য় পর্যায়ের ৫৪টি গ্রাম সমিতির মাধ্যমে সাড়ে ৫হাজার অধিক স্থানীয় লোকজন উপকৃত হচ্ছেন। প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকা স্থানীয় জনগণকে কম সুদে ঋণ দিয়ে এ কার্যক্রম চালু রয়েছে। সরকারও পল্লী ব্যাংকের মাধ্যমে নিদৃষ্ট হারে একটি অংশ জনগণের সুবিধার্থে সঞ্চয় দিয়ে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন। এছাড়াও মৎস্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে বিভিন্ন পুকুর ও জলাশয়ে বিনামূল্যে মাছের পোনা বিতরণ, কৃষি অধিদপ্তরের মাধ্যমে এলাকায় ও প্রতিষ্টানে গাছ রোপন করে সবুজ সবুজে সমারোহ করেছেন। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার মাধ্যমে শেখ হাসিনার বিশেষ উপহার হিসাবে ঈদ উপহার ও সাধারণ জনগণকে ত্রান দিয়ে কোটি কোটি ব্যয় করছেন সরকার। প্রতিটি গ্রাম ও মহল্লায় ব্রীজ/কালভার্ট আর রাস্তা করে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করেছে। ইউনিয়ন পরিষদ ও জেলা পরিষদ থেকে বরাদ্ধ দিয়ে গ্রামীণ অবকাঠামোর আমূল পরিবর্তন করা হয়েছে। ডিজিটাল করা হয়েছে উপজেলা ভুমি অফিসকে। দ্রুত সময়ে সেবা দেয়া হচ্ছে জনগণকে। শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে বই, উপবৃত্তির টাকা, স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজ ছাত্রীর জন্য রয়েছে উপবৃত্তি। যে টাকা দিয়ে লেখাপড়ার সমস্ত খরচ বহন করে আরো সঞ্চয় করা যায়।

বয়স্ক, বিধবা ভাতা পাওয়া কয়েকজনের সাথে কথা বললে তারা বলেন, এ রকম সরকার আর পাওয়া যাবে না। আমরা সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করছি। জনগণের জন্য ভাতার অভাব নাই। অতিতে এগুলো আমরা কল্পনাও করতে পারেনি। মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি প্রধানমন্ত্রীর হায়াত দীর্ঘায়ু করুক।

এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের মো: ইকরামুল হক, একটি বাড়ি একটি খামার ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক কার্যালয়ে মণিরুল ইসলাম, উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা নুরুজ্জামান চৌধুরী, সমবায় সমবায় কর্মকর্তা ওসমাণ গণি বলেন, সরকারী সমস্ত প্রকল্প পেকুয়ায় যতাযত বাস্তবায়ন হয়। সাধারণ জনগণ অনেক উপকৃত। সামনের দিনগুলোতে সকল শ্রেনীর লোকজনের জন্য অনেক প্রকল্প বাস্তবায়নের অপেক্ষায়।

জেলা পরিষদ সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিএনপি-জামায়াত সরকার আমলে দূর্নীতি আর সেচ্ছাসারিতায় অতিষ্ট ছিল সাধারণ জনগণ। জনগণের নেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর সাধারণ জনগণের জন্য সকল সুবিধা উম্মুক্ত করেছেন। পেকুয়াবাসীর মাঝে কোন অভাব নাই। ইতিমধ্যে সাব-মেরিন ষ্টেশনের কাজ শুরু হয়েছে। পেকুয়া হবে স্বপ্নের নগরী। নৌকায় ভোট দিয়ে আবারো জননেত্রীকে ক্ষমতায় আনলে সারা বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করবেন। এরই ধারাবাহিকতায় পেকুয়ায়ও উন্নয়নের রাজধানী হিসাবে পরিণত হবে।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ রাজু বলেন, সরকারী দেয়া বিভিন্ন ভাতা জনগণ সঠিক ভাবে পাচ্ছে। উন্নয়নেরও পিছিয়ে নেয় পেকুয়া। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে ইনশাল্লাহ।