সৈয়দ শাকিল :
বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রথমেই যে নাম আসে, সেটা হলো পুলিশ। বলা হয়ে থাকে পুলিশ জনগণের সেবক। পুলিশ দেশমাতার নির্ভীক সৈনিক। পুলিশ সদাজাগ্রত বীর। পুলিশ জনগনের বন্ধু। বিপদে যার কাছে আশ্রয় নেয়া যায় তিনিই বন্ধু। শুধু তাই নয় পুলিশ সমাজের ভারসাম্য রক্ষা করে। অপরাধ নিমূলে সচেষ্ট থাকে, থাকে নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্বে। এগুরু দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে চাই দেশ প্রেম। দলমতের উর্দ্ধে থেকে নিজ দায়িত্ব পালন করতে পারলেই সফল হওয়া যায়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসাইন বলেছেন, পুলিশিং শুধুমাত্র প্রফেশন নয়, এটি একটি ডেডিকেশন। সাংবাদিকরা যেমন সমাজের কাছে দায়বদ্ধ ঠিক তার চেয়েও নিবিড়ভাবে সমাজের কাছে দায়বদ্ধ পুলিশ। কোনো একটি ঘটনার শেষ পর্যন্ত থেকে সমাজ উন্নয়নে পুলিশ স্বত:স্ফূর্তভাবে কাজ করে থাকে। সাধারণ মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল পুলিশ। তাদের জনগণের সঙ্গে মিশতে হবে, ভালো আচরণ করতে হবে। তাদের প্রত্যাশা অনুসারে সেবা দিতে হবে। থাকতে হবে জবাবদিহিরও আওতায়।
কক্সবাজারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদানকারী ইকবাল হোসাইনের দুই পর্বের একান্ত সাক্ষাৎকার প্রধম পর্ব প্রকাশের পর আজ থাকছে শেষ পর্ব।
প্রতিবেদকের সাথে আলোচনার চুম্বাকাংশ তুলে ধরা হল-
আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন?
মহাণ আল্লাহ আমাকে ভাল রেখেছেন, আপনারা কেমন আছেন!
প্রশ্ন : চলতি বছরে জেলায় ১৩টির অধিক খুন হয়েছে, জনগণ মনে করছেন কক্সবাজারের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে আপনি কি মনে করেন ?
ইকবাল হোসাইন : দেখুন সব কিছুর জন্য সময় প্রয়োজন হয়, সময় দিতে হবে। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে। সম্প্রতি ট্যুরিস্ট মাডারের অন্যতম হোতা বাবুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাবুকে গ্রেফতার করতে পুলিশকে কম বেগ পেতে হয়নি। সর্বশেষ শহরে আবু তাহের হত্যার মুটিভ সহ আলামত সব নিয়ে কাজ করছে সদর মডেল থানার পুলিশ। সবকিছুর খোঁজ খবর রাখা হচ্ছে। জেলার সকল খুনের ব্যাপারে কাজ চলছে। অগ্রগতি হয়েছে অনেকখানি।
প্রশ্ন : জেলাজুড়ে দাবড়ে বেড়াচ্ছে ছিনতাইকারীর দল, দমন করা যাচ্ছেনা কেন?
ইকবাল হোসাইন : দমন করা যাচ্ছে না, এ কথা সঠিক নয়। আপনারা জানেন ছিনতাইয়ের ঘটনা সংঘঠিত হওয়ার পর ছিনতাইকারীরা আত্মগোপনে চলে যায়। এদের খুঁজে খুঁজে ঠিকই বেড় করে আইনের আওতায় আনা হয়। সম্প্রতি অনেক ছিনতাইকারী আটক করা হয়েছে। সে খবর পত্র পত্রিকায় রয়েছে। কক্সবাজারের চিহ্নিত ছিনতাই কবলিত স্থানে বিশেষ পুলিশ টিম দেয়া হয়েছে। উক্ত টিমের সদস্যরা ১৬ ঘন্টার অধিক সময় ডিউটি করছে।
প্রশ্ন : কক্সবাজারে নিয়ন্ত্রণহীন মাদকের ছড়াছড়ি এ বিষয়ে কি করছেন ?
ইকবাল হোসাইন : মাদক ব্যবসায়ী বা মাদকাসক্ত ব্যক্তির ফিরে আসার পথতো আছে। সেই পথটার দূরত্ব দূর গ্রহের কোন নক্ষত্রের মত নয়। আপনি আমি তথা সমাজের সকলে যদি এক পা করে এগিয়ে আসি তাহলে মাদক নামক ভয়াল গ্রাসের হাত থেকে এই সমাজকে রক্ষা করা সম্ভব। এই জনপদটি ইয়াবা নামক বিষ বৃক্ষের আবক্ষে নিম্মজ্জিত । মাদক ব্যবসায়ীর তালিকা হাল নাগাদ চলছে। মাদকের বিরুদ্ধে মূল অভিযান আমার এখনো শুরু হয় নাই। শীগ্রই হবে।
কক্সবাজার থেকে সারাদেশে ভয়াবহ মাদক ইয়াবা পাচার হচ্ছে। এ ইয়াবার বিরুদ্ধে গণ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সকলকে ইয়াবা সহ সকল প্রকার মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার আহবান জানান ইকবাল হোসাইন।
তিনি বলেন, ঝড়-বৃষ্টি, শীত-গ্রীষ্ম উপেক্ষা করে পুলিশ ডিউটি পালন করে নিজের নিরাপত্তার জন্য নয়। দেশের সাধারণ মানুষের স্বার্থেই আমরা মাঠে কাজ করছি। দিনে অন্তত ১৬ ঘণ্টা ডিউটি করতে হয়। ঠিক মতো পরিবারকে সময় দিতে পারিনা। এ কারণে স্ত্রীসহ সন্তানরা আমাদের উপর খুশি না। আমার মতো অনেক পুলিশ অন্যের খোঁজ-খবর রাখে ঠিকই। কিন্তু নিজের সন্তানদের খোঁজ-খবর ঠিকমতো রাখতে পারি না।
নবাগত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসাইন পেশাগত দায়িত্ব পালনে সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন।
ধন্যবাদ সময় ও সাক্ষাৎকার দেয়ার জন্য।
আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ।