সাইফুল ইসলাম বাবুল, পেকুয়া:
পেকুয়ায় সাবমেরিন নৌঘাঁটিতে চলছে কাটা তার নির্মাণ কাজ। সাবমেরিন নৌঘাঁটি স্থাপন কাজ জোরদার হচ্ছে পেকুয়ায়। একটি অত্যাধুনিক সাবমেরিন নৌঘাঁটি স্থাপনের লক্ষে সরকার পেকুয়া উপজেলার উপকুলবর্তী মগনামা ইউনিয়নে প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ ত্বরান্বিত করছে। কুতুবদিয়া চ্যানেল সংশ্লিষ্ট মগনামা ইউনিয়নের পশ্চিম ও দক্ষিন অংশে সাবমেরিন নৌঘাঁটি স্থাপন প্রক্রিয়া চুড়ান্ত হয়েছে। সরকারের প্রতিরক্ষা বিভাগ ২০১৪ সাল থেকে নৌঘাঁটি স্থাপনকাজ বাস্তবায়ন করছে। আন্তর্জাতিক মানের সাবমেরিন ষ্টেশন স্থাপনের উদ্যোগ নেয় সরকার। এতে করে মগনামা ইউনিয়নের নির্জন স্থানকে সাবমেরিন নৌঘাঁটির জন্য বাছাই করা হয়েছে। আন্তসংযোগ পরিদপ্তর(আইএসপিআর) সাবমেরিন নৌঘাঁটি স্থাপন কাজ বাস্তবায়ন করছেন।
২০১৫ সাল থেকে সাবমেরিন স্টেশনকাজ বাস্তবায়নে জরিপকাজ পরিচালিত হয়েছে। সমীক্ষা শেষে মগনামার পশ্চিম অংশের চ্যাপ্টাখালী নাশির দক্ষিন দিকের বিস্তীর্ণ ভূমিকে সাবমেরিন ষ্টেশন স্থাপনে চুড়ান্তকরন করা হয়। ২০১৫ সালের শেষের দিকে কুতুবদিয়া চ্যানেলের নিকটবর্তী মগনামার পশ্চিম ও দক্ষিন অংশ থেকে ভূমি অধিগ্রহন কাজ আরম্ভ হয়। ২০১৫ ও ২০১৬ অর্থবছরে সাবমেরিন নৌঘাঁটি স্থাপনে সরকার জমি অধিগ্রহন করে। সুত্র জানায়, আইএসপিআর এর পক্ষে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ভূমি অধিগ্রহন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহন শাখা নৌঘাঁটি স্থাপনে ভূমি অধিগ্রহন করে। ২০১৬ সালে কক্সবাজারের বিদায়ী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আলী হোসেন সাবমেরিন স্থাপনে জমি অধিগ্রহনকৃত ভূমির মালিকদের নিকট চেক হস্তান্তর কার্যক্রম শুভ সুচনা করে। সে বছর মগনামায় পরিদর্শন যান ডিসি। মগনামা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে এক সমাবেশ অনুষ্টিত হয়। এ সময় জেলা প্রশাসক উপস্থিত থেকে জমির মালিকদের নিকট চেক বিতরন করেন। সুত্র জানায়, ৩৩৩.৭৩ একর জমি অধিগ্রহন করা হয়েছে। এ বিশাল ভূমিতে সাবমেরিন নৌঘাঁটি স্থাপন কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে। ২০১৭ সালের দিকে অবকাঠামোকাজ বাস্তবায়ন চলছে। ওই বছর সরকারের প্রতিরক্ষা বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি টীম মগনামায় সাবমেরিন নৌঘাঁটি পরিদর্শন করেছেন। বাংলাদেশ নৌবাহিনী প্রধানও সাবমেরিন নৌঘাটির স্থানটি পরিদর্শন করেছেন। সাবমেরিন নৌঘাঁটি স্থাপনকাজ দ্রুত ত্বরান্বিত হচ্ছে। গত ২ বছর ধরে অবকাঠামো নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে। কাজ তদারকি করছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। ওই বাহিনীর চৌকস জোয়ানরা ওই স্থানে অবস্থান করছে। তারা মগনামায় নৌঘাঁটি সংরক্ষিত এলাকায় পাহারা চৌকি তৈরী করেছেন। একজন কর্মকর্তার সমন্বয়ে নৌ সৈনিকরা সাবমেরিন ষ্টেশনের নিরাপত্তা জোরদার করছেন। সুত্র জানায়, সম্প্রতি সাবমেরিন অধিগ্রহনকৃত এরিয়ায় নৌবাহিনী কাটা তারে বেড়া নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে। কালারপাড়ার উত্তর অংশ থেকে শুদ্ধখালী পাড়া হয়ে বেদেরবিলপাড়ার উত্তর অংশ পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটারে কাটা তারের বেড়া নির্মাণকাজ সমাপ্ত করেছে। অপরদিকে কালারপাড়ার পশ্চিম দিক থেকে ঢলণ্যাপাড়া হয়ে প্রায় দেড় কিলোমিটারে কাটাতারের বেড়া নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করে। সাবমেরিন স্টেশনের সংরক্ষিত এলাকায় কাটাতারের বেড়া নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নাধীন। তবে সাবমেরিন নৌঘাঁটি স্থাপনে ৩৩৩.৭৩ একর জমিতে মাত্র ১ একর ২০ শতক ভূমিতে অধিগ্রহনে আপত্তি দাখিল হয়েছে। ওই ১ একর ২০ শতক জমিতে প্রায় ১০টির অধিক বসতবাড়ি স্থিত। মানুষের বসতি নেই এমন স্থান চুড়ান্ত করন হয়েছে নৌঘাঁটি স্থাপনে। তবে ওই ১ একর ২০ শতক ভূমি মানুষের বসবাসের একমাত্র অবলম্বন। কালারপাড়ার লোকালয় ওই স্থান থেকে সম্প্রসারিত।
বিগত ৬০ বছর আগে থেকে ওই স্থানে এ সব পরিবারের একমাত্র বসতি। বাড়ির মালিক এ জমি অধিগ্রহন মুক্ত রাখতে জেলা প্রশাসক কক্সবাজার ও অধিগ্রহন শাখায় আপত্তি পৌছায়। কালারপাড়ার মৃত হাফেজ আহমদের ছেলে হাজি মোজাহের আহমদ গংদের বসতি ওই স্থানে তারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বসতবাড়ির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আপত্তি পৌছায়। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এল, এ শাখাকে দায়িত্ব অর্পন করা হয়। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহন শাখা-০৫ এর অধিগ্রহন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল মুমিন এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়। এ সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্তসহ প্রতিবেদনের জন্য অধিগ্রহন শাখার কানুনগো ¯্রাগ্য মারমাকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। সার্ভেয়ারসহ অধিগ্রহন অফিসে কানুনগো আপত্তির বিষয়ে সরেজমিনে যান। তারা সেখানকার বাস্তব চিত্র ও ট্রেস ম্যাপসহ প্রনয়ন করে। এ সময় আপত্তিকারীদের পরিবারের বসবাসের পক্ষে জোরালো যুক্তি উপস্থাপিত হয়। ৮টি বসতবাড়ি প্রতি পরিবারের পুকুর, গাছপালাসহ বসবাসের স্বপক্ষে মতামত প্রদত্ত হয়। তবে ১ একর ২০ শতক বসতবাড়ির এ ভূমির প্রতিবেদনে কানুনগো অংকতে ভূল লিপিবদ্ধ করে। ১ একর ২০ শতকে তিনি উল্লেখ করেছেন ০.৩০ একর জমিতে স্থিতি বাড়ি পুকুর ও গাছপালা আছে মর্মে প্রতিবেদন দেয়।
এল,এ মামলা নং ০২/১৫-১৬ এ প্রতিবেদন অসাবধনতাবসত ভূল প্রতিবদেন দাখিল করে। ওই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ফের আপত্তি রুজু করে। বাড়ির মালিক মোজাহের আহমদ গং কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অধিগ্রহন শাখায় এ মামলার আপত্তি এখনো অমীমাংসিত। এ দিকে মোজাহের আহমদ গংদের ৮ টি বসতবাড়ি উচ্ছেদ নিয়ে স্বাসরুদ্ধকর অবস্থা দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা জানায়, তারা অত্যন্ত অসহায়। ওই বসতভিটায় তারা ৫ ভাই ও ২ বোন বসবাস করেছে। প্রায় ৫০ জনের অধিক সদস্য এ সব পরিবারে। নৌঘাঁটির অধিগ্রহন অংশে মোজাহের আহমদ গংদের প্রায় ৪ একর জমি রয়েছে। এ সব জমিতে এদের কোন আপত্তি নেই ও ছিল না। তবে একমাত্র মাথাগোঁজার ঠাইটুকু হারালে তারা যাবে কোথায়। ভাই সুজা আকবর কালু, নাছির উদ্দিন, জসিম উদ্দিন, আবুল হোসেন জানায়, আমরা উন্নয়নে বিশ্বাসী। তবে নীড় হারালে আমরা যাব কোথায়। কোথায় গিয়ে বসতি করব। জমি ৪ একর মত দিয়েছি। আমরা ভূ-স্বামী। সাবমেরিন হওয়ায় হয়েছি ভূমিহীন। তবুও মাথা গোঁজার ঠাই রক্ষার এ অধিকার আমাদের আছে। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিস্ট সকলকে আহবান করছি আমাদেরকে রক্ষা করার জন্য। না হয় মরে যাওয়া ছাড়া আর কোন পথ রইল না। বসতবাড়ি দালান রক্ষায় তারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ২০১৬ সালের ২৫ জুলাই আবেদন জানায়। মামলা নং -২ এর বিষয়ে প্রতিকার সহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে জনপ্রতিনিধি রাজনৈতিক বর্গ সুপারিশ আকারে ডিসির কার্যালয়ে এ আবেদন পৌছায়। এরপর এ বিষয়ে কয়েকদফা সরেজমিন তদন্তসহ সার্ভে হয়েছে। তবে ভূল প্রতিবেদনে অমীমাংসিত থেকে গেছে সেটি। মোজাহের আহমদের পরিবারে তারা ৫ ভাই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিষয়ে স্বাক্ষরিত এক নোটিশে তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরনের আদেশ দেয়।