ঘূর্ণিঝড়ে কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা পরিমাপ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ২৫ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে রাস্তা-ঘাট বন্ধ থাকায় এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার অবনতি হওয়ায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

কৃষিভিত্তিক সাগায়ান প্রদেশে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। মাংখুটের প্রভাবে ছয় মিটার উঁচু জলোচ্ছ্বাসের পূর্বাভাসে উপকূলীয় অঞ্চলের হাজার হাজার লোককে তাদের ঘরবাড়ি থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

Typhoon

টাইফুনের প্রভাবে ৯০০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টিপাত এবং শক্তিশালী ঝড়ো বাতাস বয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে এটি ঘন্টায় ৩০ কিলোমিটার বেগে পশ্চিমমুখে চীনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

ফিলিপাইনের প্রধান দ্বীপ লুজনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বাগাও এলাকায় স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৪০ মিনিটের দিকে টাইফুনের প্রভাবে ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে।

টাইফুনের পথে রয়েছে পঞ্চাশ লাখ মানুষ। ফলে লাখ লাখ মানুষের ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ১ লাখের বেশি মানুষ অস্থায়ী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে।

Typhoon

এক সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কাগায়ানের প্রাদেশিক রাজধানী তুগেগারাও শহরের প্রায় সব ভবনই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বিভিন্ন এলাকার মধ্যে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

শনিবার ফিলিপাইনের রেড ক্রসের চেয়ারম্যান রিচার্ড গর্ডন জানান, দেশটি এখনও বিপদ থেকে নিরাপদ নয়। তিনি বলেন, ঝড়ের পর বৃষ্টি শুরু হয়েছে। তাই এখন আমাদের সামনে পরবর্তী সমস্যা বন্যা। এসব এলাকা পানিতে প্লাবিত হতে পারে।

প্রেসিডেন্ট রোদ্রিগো দুতের্তের রাজনৈতিক উপদেষ্টা ফ্রান্সিস তোলেনতিনো জানান, কৃষিভিত্তিক রাজ্যগুলোতে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ের মৌসুমে ফিলিপাইনে প্রায়ই ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। তবে চলতি বছরের শক্তিশালী এই টাইফুন ২০১৩ সালে আঘাত হানা ফিলিপাইনের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সুপার টাইফুন হাইয়ানের স্মৃতি মনে করিয়ে দিয়েছে।

Typhoon

হাইয়ানের আঘাতে সাত হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। তবে ওই ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পর থেকে ফিলিপাইনে ঘূর্ণিঝড়ের প্রস্তুতি এবং দুর্যোগের আগে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া উন্নত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। টাইফুন আঘাত হানার আগেই ফিলিপাইনে সতর্কতা জারি করা হয়েছে, ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে এবং বিভিন্ন স্থানে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।

পশ্চিম দিক হয়ে দক্ষিণাঞ্চলের দিকে অগ্রসর হওয়া মাংখুট এখনও শক্তিশালী রয়েছে। ফলে ১৪৫ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো বাতাস বয়ে যাচ্ছে। রোববার বিকালের দিকে এটি হংকংয়ের পাশ দিয়ে বয়ে যাবে তবে সরাসরি হংকংয়ে আঘাত হানবে না বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। সেখানে কর্তৃপক্ষ ৯ মাত্রার সতর্কতা জারি করেছে এবং লোকজনকে বাড়িতেই অবস্থানের পরামর্শ দিয়েছে।

Typhoon

হংকংয়ের তাইও গ্রামের অ্যান্তইনি লি নামে ইমার্জেন্সি সেন্টারের এক কর্মকর্তা বলেন, এই ঝড়কে লোকজনের অবমূল্যায়ন করা উচিত নয়। এই টাইফুন খুব বিপজ্জনক হবে। যখন সবাই ঘুমিয়ে থাকবে এমন সময়ে এটি আঘাত হানতে পারে। তখন পালিয়ে যাওয়ার মতো সুযোগ থাকবে না। তাই অন্ধকার নেমে আসার আগেই আমরা লোকজনকে গ্রাম ছেড়ে নিরাপদে আশ্রয় নিতে বলেছি।

হংকংয়ে বেশির ভাগ দোকান এবং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। পাঁচশোর বেশি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। ফলে ১ লাখ যাত্রী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে মঙ্গলবার মাংখুট দুর্বল হয়ে ক্রান্তীয় নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।