ডেস্ক নিউজ:
বিশ্বের উন্নত দেশের মতো বাংলাদেশের সব নাগরিকের একক পরিচয় নম্বর-ইউআইডি (Unique ID) হচ্ছে। নতুন চালু হওয়া ১০ ডিজিটের জাতীয় পরিচয়পত্রের স্মার্ট কার্ডকে ভিত্তি ধরেই এটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। শূন্য থেকে ১৮ বছরের কম বয়সী নাগরিকদের স্মার্ট কার্ডের ১০ ডিজিটের আইডির আদলে একক পরিচয় নম্বরের আওতায় আনা হবে। পাশাপাশি শিশুরা জন্মের পরপরই তাদেরও অনুরূপ ইউআইডি’র আওতায় আনা হবে।
সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তত্ত্বাবধায়নে পরিচালিত সিভিল রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড ভাইটাল স্ট্র্যাটিসটিকস (CRVS) সচিবালয়, নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন অনুবিভাগ, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধকের কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, দেশের সব নাগরিকের একক পরিচয়পত্র প্রদানের চিন্তা থেকেই ভোটারদের ১০ ডিজিটের স্মার্ট কার্ড দেওয়া হচ্ছে। দেশের নাগরিকদের মধ্যে যারা নির্বাচন কমিশনের দেওয়া ১০ ডিজিটের স্মার্ট কার্ড পেয়েছেন বা পাবেন, তাদের কার্ডের নম্বরই ইউআইডি হিসেবে পরিচিত হবে। বয়স ১৮ বা তার বেশি হলেও বিভিন্ন কারণে যারা ভোটার হতে পারেননি, তারাসহ শুন্য থেকে ১৮ বছরের কম বয়সীদের পর্যায়ক্রমে এর আওতায় আনা হবে। শূন্য থেকে ১০ বছর পর্যন্ত নাগরিকদের একক নম্বর দেওয়ার দায়িত্বটি পালন করবে সরকারের জন্ম ও নিবন্ধন রেজিস্ট্রেশন কার্যালয়। জন্ম নিবন্ধনের নম্বর বর্তমানের ১৭ ডিজিটের বদলে স্মার্ট কার্ডের মতো ১০ ডিজিটে নেমে আসবে।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে তারা যে ১০ ডিজিটের পরিচয়পত্র দিচ্ছে, তা দিয়ে প্রায় ৮৬ কোটি পর্যন্ত একক নম্বর দেওয়া যাবে। এক্ষেত্রে এই একক নম্বর কম করে দেড়শ’ বছর পর্যন্ত পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়বে না।
এদিকে ইউআইডি নম্বরটি জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের, নাকি নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে থাকবে, সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তবে বর্তমানের ১০ ডিজিটের ইউআইডি নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে থাকায় পুরোটাই তাদের হাতে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আবার নির্বাচন কমিশনের সম্মতি নিয়ে জন্ম নিবন্ধকের কার্যালয় শূন্য থেকে ১০ বছর পর্যন্ত শিশুকে ১০ ডিজিটের ইউআইডি দিতে পারে। পরে শিশুর বয়স ১০ বছর পার হলে তার নিয়ন্ত্রণ আপনা-আপনি নির্বাচন কমিশনের ওপর বর্তাবে। এ সময় তাদের থেকে বায়োমেট্রিক (১০ আঙুলের ছাপ) ও চোখের মনির প্রতিচ্ছবি নেওয়া হয়। বর্তমানের মতো ওই পরিচয়পত্রে ব্যক্তির পরিচয়ের মৌলিক তথ্য সন্নিবেশ হবে। তবে উপযুক্ত প্রমাণ দাখিলের মাধ্যমে শিক্ষা, বিবাহ, বিবাহ-বিচ্ছেদ, মৃত্যুসহ ব্যক্তির অবস্থানগত পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তার তথ্যও হালনাগাদের সুযোগ থাকবে।
জানা গেছে, পরিসংখ্যান, স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকারসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো আগে থেকেই যার যার মতো নাগরিকদের নিবন্ধন ও তথ্য সংগ্রহ করে আসলেও এতে দ্বৈততা, অসামঞ্জস্য ও বৈপরীত্যসহ বেশ কিছু সমস্যা ও জটিলতা পরিলক্ষিত হয়। যে কারণে বর্তমান সরকারের বিগত মেয়াদে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তত্ত্বাবধায়নে নাগরিকের জন্ম, মৃত্যু, মৃত্যুর কারণ, বিবাহ, তালাক, দত্তক, স্থানান্তর ও শিক্ষা সংক্রান্ত ডাটাবেজ সংগ্রহে ‘সিভিল রেজিস্ট্রেশন অ্যাণ্ড ভাইটাল স্ট্র্যাটিসটিকস (সিআরভিএস)’-এর উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর অংশ হিসেবে দেশের নাগরিকদের জীবন-প্রবাহের উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলো তথ্য-উপাত্ত আকারে সংরক্ষণ এবং তার ভিত্তিতে সব ধরনের সেবা ও সুযোগ -সুবিধা নিশ্চিত করতে একক আইডি প্রদানের চিন্তা-ভাবনা করা হয়। এই একক আইডি জন্ম নিবন্ধন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ভোটার আইডি, বিভিন্ন ধরনের লাইসেন্স প্রাপ্তি, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, ঋণগ্রহণ, কর ও ভ্যাট, আইনি সেবা, বিদেশগমন, শ্রমিক সংক্রান্ত সেবা, পুলিশ সংক্রান্ত সেবাসহ অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি সব ক্ষেত্রে ব্যবহারের সুযোগ থাকবে।
জানা গেছে, কেবিনেট ডিভিশন সিআরভিএস সচিবালয় গঠনের মাধ্যমে গত কয়েক বছর ধরে এই একক পরিচয় নম্বর প্রদানের কাজটি এগিয়ে নেওয়ার কাজ করছে। সর্বশেষ ৩০ আগস্ট তারা নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধকের কার্যালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন এ টু আই প্রকল্প, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সমাজকল্যাণসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি যৌথ সভা করেছে। ওই সভায় নাগরিকদের একক আইডি প্রদানের কাজটি এগিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠকে অংশ নেওয়া নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধি ও কমিশনের নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক (অপারেশন্স) আবদুল বাতেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নাগরিকদের ইউআইডি প্রদানে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়েছে। সেখানে কাজটি দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘কাজটি সম্পন্ন করতে যার যার মন্ত্রণালয় তার নিজস্ব দায়িত্ব পালন করবে। তবে এর ডাটা সেন্টারটি কোন সংস্থার নিয়ন্ত্রণে থাকবে, সেই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।নির্বাচন কমিশন যেহেতু ১০ কোটি ভোটারের ইউআইডি নিয়ন্ত্রণ করছে, ফলে আমাদের হাতেই এটা থাকার সম্ভাবনাই বেশি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সব নাগরিককে ইউআইডি প্রদানের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) এম এন জিয়াউল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দেশের ভোটারদের নতুন ১০ ডিজিটের যে স্মার্ট কার্ড দেওয়া হয়েছে, ওটাই তাদের ইউআইডি। আর ভোটারের বাইরে যারা রয়েছে, তাদেরও ওই আইডির নম্বরের ধারাবাহিকতায় একক পরিচয়পত্র দেওয়া হবে। এছাড়া, জন্ম নিবন্ধনের এখন যে ১৭ ডিজিটের আইডি দেওয়া হচ্ছে, সেটাও পরিবর্তন করে ১০ ডিজিটের ইউআইডি দেওয়া হবে।’
দেশের সব নাগরিকের একটি নির্দিষ্ট ইউনিক নম্বরে পরিচয়সহ সমন্বিত সেবা প্রদান ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে এই ইউআইডি দেওয়া হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।