ডেস্ক নিউজ:

দুই ধাপে কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে বিএনপি। প্রথম ধাপে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারামুক্তি, দ্বিতীয় ধাপে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানাবে দলটি। দ্বিতীয় ধাপের কর্মসূচির আগে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৃহত্তর ঐক্যের বিষয়টিও জড়িয়ে আছে। শেষ পর্যন্ত ঐক্য স্থাপন না হলে কর্মসূচি এক রকম, আর ঐক্য গড়ে ওঠলে কর্মসূচির ধরণ পাল্টে যাবে। তবে ইতোমধ্যেই খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কর্মসূচি দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটি ও সিনিয়র একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, সেপ্টেম্বরে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত অনেকটাই পাকা করেছেন স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। এই মাসের যেকোনও দিনই কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। কর্মসূচির ক্ষেত্রে প্রথম ধাপে ইস্যু রাখা হয়েছে খালেদা জিয়ার মুক্তি। দ্বিতীয় ধাপে আবার কর্মসূচি দেবে বিএনপি।

কর্মসূচির ধরন নিয়ে স্থায়ী কমিটির দু’জন সদস্য প্রায় কাছাকাছি মন্তব্য করেন। একজন বলেন, ‘বিক্ষোভ, অবস্থান, সমাবেশ থাকবে। পর্যায়ক্রমে কর্মসূচির ধরন পাল্টানো হবে। এ ছাড়া, ঢাকাসহ সারাদেশে কর্মসূচি দেওয়া হবে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কঠোর বা নরম নয়, কর্মসূচি আসবে। প্রথম দফায় দলের প্রধানের মুক্তির দাবিতে কর্মসূচি দেওয়া হবে।’

বিএনপির নীতি-নির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে, ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি, আগামী নির্বাচন নিরপেক্ষ করার দাবিতে কর্মসূচিও পালিত হবে, নির্বাচনেও অংশ নেবে বিএনপি। এক্ষেত্রে দলের সব সাংগঠনিক সক্ষমতা দেখানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অতি দ্রুত খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর পরে কর্মসূচি দেওয়া হবে। তবে কী ধরনের কর্মসূচি দেওয়া হবে, তা এখনই বলতে চাই না।’

বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, সম্প্রতি বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্যের জন্য দলীয় প্রচেষ্টা অগ্রাধিকার পেলেও এখন সামনে এসেছে দলীয় প্রধানের মুক্তির বিষয়টি। একইসঙ্গে শনিবার অনুষ্ঠিত ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশে প্রায় সব নেতাই খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে তাদের অবস্থান জানিয়েছেন। আর এ বিষয়টিই স্থায়ী কমিটির সদস্যদের কাছে গুরুত্ব পেয়েছে।

রবিবার রাতে স্থায়ী কমিটির একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য বলেন, ‘দলের চেয়ারপারসনের মুক্তি এবং নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতেও কর্মসূচি দেওয়া হবে। এমনকি আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নির্বাচনেও অংশ নেবে বিএনপি। আর বৃহত্তর ঐক্যের চেষ্টাও অব্যাহত থাকবে। তবে, বৃহত্তর ঐক্যের আগে কর্মসূচি না দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা না থাকলেও এবার নিজেদের মনোভাব পাল্টেছেন নেতারা।’

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ঘনিষ্ঠ একজন দায়িত্বশীল বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্যের আগে চেয়ারপারসন ইস্যুতে কর্মসূচি দেওয়া হবে আগে। জাতীয় ইস্যুতে কর্মসূচি দেওয়া হবে ঐক্যের পর। সেটা ভিন্ন ধরনের, সেটা অন্যান্য দাবি ও অন্যান্য দলের সঙ্গে সমন্বয় রেখেও হতে পারে। চেয়ারপারসনের মুক্তির দাবিতে দেশব্যাপী, ঢাকায় কর্মসূচি দেওয়া হবে।’

জানা গেছে, সেপ্টেম্বর মাসে খালেদা জিয়া ও তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনের ইস্যুতে কর্মসূচি দেবে বিএনপি। দলটির কোনও-কোনও নেতা বলছেন, কর্মসূচির আগে দলের বিভিন্ন ফোরামে আলোচনা করা হবে। দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখনও কর্মসূচি নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। সাধারণত যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক পর্যায়ে আলোচনা হয়। এবার এখনও হয়নি।’

দলের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সম্পাদক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দলের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। কর্মসূচির মধ্য দিয়ে রাজপথে ঐক্য গড়ে উঠবে। ঐক্য হওয়ার পর নির্বাচন ইস্যুতে কর্মসূচি দেওয়া হবে।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিএনপি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিশ্বাসী। তবে আগামীতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ধারা বজায় রেখে কঠোর আন্দোলনে যাওয়া হবে। আর কখনও সময় বেঁধে আন্দোলন হয় না। বিএনপির এখন প্রধান দাবি দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি। সেই দাবিতে আমরা দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসছি। কিন্তু আগামীতে দলীয় চেয়ারপারসেন মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে কর্মসূচি দেওয়া হবে।’

শনিবার (১ সেপ্টেম্বর) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশে আসা নেতাকর্মীরাও বলেছেন, তারা খালেদা জিয়া ও আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ করতে কর্মসূচি চান। আন্দোলন ছাড়া সরকারও বিএনপির দাবি মেনে নেবে না বলে জানান অনেক নেতাকর্মী। এই আন্দোলনের বিষয়েই দু’টি মত ছিল বিএনপিতে। কোনও-কোনও সিনিয়র নেতা ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচির পক্ষে থাকলেও সিনিয়র কেউ-কেউ তা মেনে নেননি। এক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিটিকেই মুখ্য করে তুলতে চান তারা।

স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলছেন, ‘এখন পর্যন্ত বৃহত্তর ঐক্য হওয়ার আশা ছাড়া বাকি কোনও অগ্রগতি নেই। এক্ষেত্রে শুধু ঐক্যের ওপর বসে থেকে সংগঠনের কাজকর্ম থামিয়ে রাখার কোনও জো নেই।’

রংপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক রইচ আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা লাগাতার শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চাই। তবে নির্বাচনের আগ মুহূর্তে হরতাল বা অবরোধের মতো কর্মসূচিও দেওয়া যেতে পারে। আমরা কেন্দ্রের যেকোনও নির্দেশনা পালন করতে প্রস্তুত আছি।’

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কর্মসূচির বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। দ্রুতই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে। এটা মহাসচিব জানাবেন আপনাদের।’