নুরুল কবির,বান্দরবান :
প্রতি বছরই কোটি টাকার বেশি ব্যয় করা হয় কথিত মেরামত ও সংস্কার কাজের নামে,তবু শংকা কাটছে না,বরাবরের মতই থাকছে বিপজ্জনক এবং অনিরাপদ সড়কপথ। যেকোন সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে যানবাহন চলাচল ব্যবস্থা। এটি বান্দরবান-রুমা উপজেলা সড়কের বর্তমান চিত্রের কথা।
প্রায় ৪৮কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কের নানাস্থানে রয়েছে বিদ্যমান ৪৬টি বেইলি,আধা বেইলি এবং কাঠের পাতাটনে নির্মিত ও আচ্ছাদিত সেতু। এসব সেতুর বেশির ভাগই হচ্ছে প্রায় ৩৫-৪০ বছর আগে নির্মিত। এসব ব্রীজের মেয়াদ পেরিয়ে গেছে অনেকদিন আগেই। গত ৫বছর ধরে সেতুগুলোর বেশকটি যানবাহন চলাচলের পুরোপুরি অযোগ্য হওয়ায় খানিকটা টনকনড়ে কর্তৃপক্ষের। কয়েকটি সেতুর বিধস্ত ও ভাংগাচোড়া হওয়ার পর পাতাটন জ্বালাই করে জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করা হলেও ২/৩ মাস যেতে না যেতেই সেগুলো পুনরায় ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে।
এক কথায় বলা যায়- বান্দরবান-রুমা সড়কের ওপর নির্মিত বেশির সেতু অর্থাৎ করুণদশাগ্রস্ত ২৪টি সেতুর মেরামত বা পুননির্মাণ কাজ শুরু না হওয়ায় দুর্ঘটনা বকলিত হওয়ার মহাশংকায় সর্ব প্রকার যানবাহন চলাচল করছে বর্তমানে। গত একমাস আগেও বান্দরবান সদর উপজেলার ১২মাইল অংশে ম্রো পাড়া (পোড়া পাড়া) এলাকায় পাহাড়ি ঢলের পানির চাপে একটি বেইলি সেতুর দুই পাশ বিধস্ত হয়। এ সময় ৪দিন যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে এই সড়কে। ফলে অসহনীয় জনদুর্ভোগের সস্মুখিন হন এই সড়কপথ ব্যবহারকারীরা। গতবছর বর্ষায় এই সদরের খুমিঘাট এলাকার কাছে আ¯ ’পাহাড় ধসের ফলে পারাপারের সময় ঢলের স্রোতে সড়কপথ থেকে গড়িয়ে পড়ে সরকারি কর্মকর্তাসহ ৭জনের মর্মান্তিক মৃত্য হয়েছিল। সেই বেদনা এখনও বিরাজমান স্থানীয়দের কাছে।
রুমা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংথোয়াইচিং মারমা জানান,জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহার অযোগ্য এবং মেরামত ও পুননির্মাণযোগ্য সেতুগুলোর দ্রুত কাজ করার দাবি জানানো হয়েছে সরকারের বিভিন্ন মহলে সাম্প্রতিক সময়ে বহুবার। কিন্তু কর্তৃপক্ষীয় অবহেলা এবং দায়িত্বহীনতার কারণে এসব সেতুর কাজ হাতে নেয়া হয়নি এখনও। ফলে যাত্রীদের বিপজ্জক ও জীবনের ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন যানবাহন ব্যবহার করতে হচ্ছে। এতে ক্রমেই দুর্গতিও বাড়ছে পথচারী এবং যাত্রীদের। এ সড়কের যানবাহন চালকরা বলছেন, অতিঁঝ’কিপুর্ণ সড়ক এবং সড়কের ওপর নির্মিত সেতুগুলো ব্যবহার করতে গিয়ে যানবাহনের মুল্যবান যন্ত্রাংশ বিনষ্ট এবং ভেংগে যাচ্ছে হর-হামেশায়। তবুও জনস্বার্থে এসব পরিবহন চলাচল অব্যাহত রাখা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বিক্ষিপ্ত ভাবে কয়েকটি বেইলি ও আধাবেইলি সেতুর মেরামত কাজ সাম্প্রতিক সময়ে শেষ করলেও সেগুলোর অবস্থা আবারও নড়বড়ে এবং শোচনীয় হয়ে পড়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। বর্ষায় বৃষ্টিপাতের অজুহাতে কর্তৃপক্ষ সাময়িক সময়ের জন্যে এ সড়কের মেরামত যোগ্য সেতুগুলোর মেরামত কাজ বন্ধ রাখলেও বর্তমানে পুনরায় কাজ শুরু করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন কর্তৃপক্ষ এবং জেলা সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা।
জেলা সড়ক বিভাগ সুত্র জানায়,বান্দরবান-রুমা সড়কটি অতিপুরাতন সড়ক হওয়ায় বহু সেতু মেরামত ও পুননির্মাণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এ সড়কপথের মেরামত এবং পুননির্মাণের দায়িত্ব সেনাবাহিনীর নির্মাণ প্রকৌশল বিভাগের (২০ ইসিবি)। অর্থবরাদ্দ প্রাপ্তি সাপেক্ষে এই সড়কের সেতু মেরামত এবং পুননির্মাণের কাজ শুরু করা হবে। হবে। সুত্র জানায়, বর্ষায় ভারী বর্ষণে পাহাড়ি ঢলের পানিতে সড়কের নানাস্থানে ধস নামে এবং মাটির নিচু এলাকা চুষে পানি গড়িয়ে যাওয়ায় সহজেই সড়কপথ বিধস্ত হয়ে পড়ে। এ সড়কের নানাস্থানে রয়েছে ৪৬টি বেইলি,আধাবেইলি এবং কাঠের পাতাটন মিশানো সেতু। এসব সেতুর মধ্যে ২৪টি সেতুই যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে মহাবিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে বহুদিন আগেই। ব্যবহারের প্রায় অনুপযুক্ত হওয়া সেতুগুলোর পুননির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হলেও রহস্যজনক কারণে গত ২বছর ধরেই সেই উদ্যোগের কোন বাস্তবায়ন নেই।
এদিকে একান্ত আলাপকালে পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি বলেন, জনদুর্ভোগের অবসানকল্পে জরুরি ভিত্তিতেই বান্দরবান-রুমা সড়কের মেরামত যোগ্য সেতু গুলোর পুননির্মাণ বা মেরমাত কাজ হাতে নেয়া দরকার। এই সড়কের নির্মাণ ও মেরামত কাজে নিয়োজিত কর্তৃপক্ষকে তাদের কাজের গতি আরও বাড়ানোর জন্য তিনি আহবান জানিয়েছেন।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।