তবে কী বদি মাইনাস?

প্রকাশ: ৩০ আগস্ট, ২০১৮ ০৮:০০ , আপডেট: ২৯ আগস্ট, ২০১৮ ১১:৩২

পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে


শাহেদ মিজান, সিবিএন:
কক্সবাজার জেলাকে বিএনপির ঘাঁটি দাবি করা হলেও উখিয়া-টেকনাফ আসন তার থেকে ব্যতিক্রম! কেননা এই আসনে ঘুরেফিরে আওয়ামী লীগই বেশিবার জয় পেয়েছে। ২০০৮ এবং ২০১৪ সালে পর পর দু’বার আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবদুর রহমান বদি সাংসদ নির্বাচিত হয়েছে। আবদুর রহমান বদি সেখানে জনপ্রিয়তার পাশাপাশি সমান সমালোচিতও। ইয়াবা গড়ফাদারের অভিযোগ এবং নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারণে পুরো দেশজুড়ে সমালোচনার পাত্র তিনি। এরপরও তার জনপ্রিয়তা অটুট রয়েছে সাধারণ জনগণের কাছে। কিন্তু তা হয়তো আর কাজ দিবে না! আগামী সংসদ নির্বাচনে তারঁ আওয়ামী লীগের টিকিট পাওয়া নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে।

সম্প্রতি সময়ে জেলা যুবলীগের সভাপতি সোহেল আহামদ বাহাদুর আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাচ্ছেন বলে গুঞ্জন শুরু হয়। সেই থেকে সাধারণ জনগণের কাছে কৌতুল তৈরি হয়- আসলে কী বদি মাইনাস হতে যাচ্ছেন? কয়েকদিন আগে মন্ত্রী পরিষদ সচিব শফিউল আলমের ভাই হলদিয়াপালং ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আলম উখিয়া-টেকনাফের ৩৩টি পয়েন্টে গণসংযোগ করেছেন। তাঁর এই গণসংযোগের পর থেকে আবদুর রহমান বদির দলীয় মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে সন্দেহ আরো ঘনীভূতি হয়েছে!

স্থানীয় পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোনো পূর্ব ইঙ্গিত এবং ঘোষণাই ছাড়াই গত ২৫ আগস্ট হলদিয়াপালং ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আলম নিজেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী দাবি করে একটি বহর নিয়ে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি পয়েন্টে গণসংযোগ করেছেন। তাঁর এই হঠাৎ উত্থানে উখিয়া-টেকনাফ ছাড়িয়ে জেলা পর্যায় পর্যন্ত অনেকটা হইচই পড়ে গেছে। উখিয়া-টেকনাফের আওয়ামী লীগ রাজনীতে নতুন মেরুকরণ শুরু হয়েছে। বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য কক্সবাজার’-এ পরিণত হয়েছে।

কক্সবাজারের রাজনীতি সচেতন লোকজন বলছেন, জেলা যুবলীগের সভাপতি সোহেল আহামদ বাহাদুরের আগমণ যতটা না তাক লাগানো; শাহ আলম আগমণটা তার চেয়ে বহুগুণ তাক লাগানো। তিনি খুব অল্প সময়ে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়া একজন ইউপি চেয়ারম্যান মাত্র। এটা বড় কথা নয়। বড় কথা তিনি মন্ত্রী পরিষদ সচিব শফিউল আলমের ভাই! তাই বিষয়টি সব স্তরের মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে।

তারা বলছেন, কোনো সম্ভাবনা, নাম-গন্ধ না থাকা পিছনের সারির রাজনীতিবিদ শাহ আলমের আকস্মিক আগমণ অনেক গুরুত্ব বহন করছে। তার এই আগমণ অন্য কেউ হলে হাস্যকর ঠেকতো! কিন্তু তিনিতো মন্ত্রী পরিষদ সচিবের ভাই। এটাই এখন সব থেকে আলোচ্য। তাই উখিয়া-টেকনাফ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী নিয়ে নতুন হিসাব কষছে অনেকে!

স্থানীয় আওয়ামী ঘরানার লোকজনের ধারণা, আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড হয়তো আবদুর রহমান বদির বিকল্প নিয়ে ভাবছে! সে গুঞ্জন এবং ইঙ্গিতটা অনেকদিন ধরে বাতাসে ভাসছে। সম্প্রতি দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করে আসার জেলা যুবলীগের সভাপতি সোহেল আহামদ বাহাদুর উখিয়া-টেকনাফের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার পর থেকে বদির মাইনাস হওয়ার বিষয়টি আরো পোক্ত হতে শুরু করে। কিন্তু এবার মন্ত্রী পরিষদ সচিবের ভাই শাহ আলমের আগমণ সন্দেহটা আরো বাড়িয়ে দিলো। মনে করা হচ্ছে, বদিকে মাইনাস করার ব্যাপারে কেন্দ্র ফাইনাল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। সেই ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে মন্ত্রী পরিষদ সচিব শফিউল আলম ছোটভাই হলদিয়াপালং ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আলমকে মাঠে নামিয়েছেন।

উখিয়া-টেকনাফ আসনে শুরুতে আবদুর রহমান ছাড়াও পুরনো আরো কয়েকজন মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলো। তাদের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি উখিয়ার শাহ আলম (রাজা শাহ আলম) ও সাবেক সংসদ সদস্য টেকনাফের মোহাম্মদ আলী আলোচিত ছিলো। জেলা যুবলীগের সভাপতি হওয়ার এই তালিকায় নাম লেখান সোহেল আহামদ বাহাদুর। শেষ মুহূর্তে যুক্ত হলো চেয়াম্যান শাহ আলমের নাম। তবে তিনিই এখন আলোচনায়। শেষ মুহূর্তে হয়তো আবদুর রহমান বদিকে মাইনাস করে শাহ আলমই হতে যাচ্ছেন আগামীর উখিয়া-টেকনাফের আওয়ামী লীগের প্রার্থী- এমনটি ধারণা উখিয়া-টেকনাফের রাজনীতি বোদ্ধাদের। পাশপাাশি সোহেল আহামদ বাহাদুরের সম্ভাবনাও বেশি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা যুবলীগের সভাপতি সোহেল আহামদ বাহাদুর বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা যেখানে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে সেখানে মাদক সম্পৃক্ত কাউকে তিনি মনোনয়ন দিবেন না বলে আমি বিশ্বাস করি। পাশাপাশি আমার যোগ্যতা এবং পারিবারিক ঐতিহ্য বিবেচনা করে জননেত্রী শেখ হাসিনা অবশ্যই আমাকে মনোনয়ন দেবে আমি আশা করছি।’

হলদিয়া পালং ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আলম বলেন, ‘উখিয়া-টেকনাফের মানুষ পরিবর্তন চাচ্ছে। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে আমি আগামীতে উখিয়া-টেকনাফ আসনে নির্বাচন করার কথা ভাবছি। সে হিসেবে আমি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। ৩০ বছর ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছি। সে বিবেচনায় আমি মনোনয়ন পাওয়ার যোগ্যতা রাখি। ’ তবে মনোনয়ন পাওয়ার দলীয় সংকেত নিয়ে তিনি কিছু বলেননি।

সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি বলেন, ‘মনোনয়ন যে কেউ চাইতে পারে। এই নিয়ে আমি ভাবছি না। গত ১০ বছরে আমি উখিয়া-টেকনাফে অনেক উন্নয়ন করেছি। সুখ-দুঃখে সব সময় জনগণকে সহযোগিতা করেছি। আমি আশা করছি এসব বিবেচনা করে শেখ হাসিনা আমাকেই মনোনয়ন দেবেন।’