রফিক মাহমুদ,সিবিএন:
২৫ আগস্টকে ‘রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করার ঘোষণা দিয়েছে রোহিঙ্গারা। গত বছরের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সরকার ও সেদেশের সেনাবাহিনী ভয়াবহ নির্যাতন, গণহত্যা, ধর্ষণসহ ঘর-বাড়ীতে হামলা অগ্নিসংযোগ শুরু করে। এই ঘটনায় হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়।

গত শনিবার কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে বিক্ষোভ সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতারা এই ঘোষণা দেন। গত দুই দিন ধরে এই সংক্রান্ত কিছু লিফলেট,ফেস্টুন ও ব্যানার নিয়ে প্রচার করছে ফ্রি রোহিঙ্গা কোয়ালিশন (রোহিঙ্গা মুক্ত কর মোর্চা) নামের একটি সংগঠন।

ঘোষণাপত্রের প্রতি রোহিঙ্গাদের সবার সমর্থন আছে উল্লেখ করে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘মিয়ানমারের রাখাইনে নানা অজুহাতে সে দেশের সেনাবাহিনী হামলা ও নির্যাতন করে আসছে। বিশেষ করে গত বছরের ২৫ আগস্ট ভয়াবহ। এই সময় কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে। তাই,আমরা ২৫ আগস্ট এলেই গণহত্যা দিবস পালন করবো।’

ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, ৮০ দশকে মিয়ানমারের উত্তর প্রদেশ রাখাইনে সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গা নাগরিকদের নাগরিকত্ব বাতিল করে নিপীড়ন চালিয়ে আসছে মিয়ানমার সরকার। মুসলিমদের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী উল্লেখ করে ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবরের পর ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাতে রোহিঙ্গা মুসলিমদেন ওপর ভয়াবহ নির্যাতন, গণহত্যা, ধর্ষণ, হামলা ও অগ্নিসংযোগের মত নরকিয়তা শুরু করে। এরপর থেকে দিনের পর দিন হত্যা, ধর্ষণ ও আগুনে পুড়িয়ে মারাসহ গণহত্যা চালায় মিয়ানামার সরকার বাহিনী।

বিশ্বের অগ্রগণ্য পন্ডিত অধ্যাপক অমর্ত্য সেন ও হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত এবং অর্থনীতিতে নোবেল জয়ী জেসমন্ডু টুটু মিয়ানমারের রাখাইনে সংগঠিত ঘটনাকে গণহত্যা (জেনোসাইড) হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। এ কারণে আমরা (রোহিঙ্গারা) তাদের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে গণহত্যা দিবস হিসাবে সম্পূর্ণরূপে স্বীকৃতি দিয়েছি।

এছাড়াও ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল আইন ও নীতি সাময়িকী (স্প্রিং/বসন্ত-২০১৪), ইয়েল আইন অনুষদ মানবাধিকার ক্লিনিক (অক্টোবর-২০১৫), কুইন মেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রীয় অপরাধ উদ্যোগ (অক্টোবর-২০১৫) এবং মিয়ানমার সম্পর্কে পার্মানেন্ট পিপল ট্রাইব্যুনাল (স্থায়ী গণ আদালত/ সেপ্টেম্বর-২০১৭), প্রকাশিত ৪টি স্বাধীন অনুসন্ধানে গণ্যহত্যার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

উখিয়ার কুতুপালং বটতলী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ‘মিয়ানমারের রাখাইনে সে দেশের সেনাবাহিনী ও উগ্রপন্থী মগরা নির্বিচারে গুলি করে আমাদের মা-বাবা ও ভাই-বোনদের হত্যা করেছে। জ্বলন্ত আগুনে পুড়ে মারা ও মা-বোনদের ধর্ষণ করেছে। আমাদের বাড়ি-ঘর ও ভিটে ছাড়া করেছে। তাই আমরা প্রতি বছর ২৫ আগস্টকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করবো।’

উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আয়ুব আলী মাঝি বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশের ক্যাম্পে নয়, আমরা কোনও সময় রাখাইনে ফেরত গেলে সেখানেও ২৫ আগস্টকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করবো। আমরা নিজের জন্মস্থলে নিরাপদ ও সম্মানের সঙ্গে বসবাস করতে চাই।’