ডেস্ক নিউজ:

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। এ লক্ষ্যে শতাধিক আসনে প্রাথমিক প্রার্থী বাছাই চূড়ান্ত করেছে দলটি। একইসঙ্গে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট থেকেই নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত এখনপর্যন্ত ঠিক থাকলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ার পক্ষেই দলটির অবস্থান। জোটগতভাবে নির্বাচনে গেলে ২০০৮ সালের চেয়ে বেশি আসন দাবি করার পরিকল্পনা রয়েছে জামায়াতের। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে জামায়াতের প্রভাবশালী নায়েবে আমির অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। সব দলই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। নির্বাচন জোটগতভাবেই করবো। তবে দলীয় প্রতীক কী হবে, এ নিয়ে কাজ চলছে।’

এদিকে জামায়াতের নীতিনির্ধারকদের একটি সূত্র জানায়, হাইকোর্টের আদেশে দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নিষিদ্ধ। ফলে, দলীয় প্রতীক নির্ধারণ ও এ সংক্রান্ত বিষয়ে কাজ করতে একটি আইনি বিশেষজ্ঞ কমিটি (আইন বিভাগ আছে) কাজ করছে। এ কমিটি হাইকোর্টের আদেশে স্থগিত নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন ও প্রতীক বিষয়ে পর্যালোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবে। পরে এ বিষয়ে আদালতে যেতে পারে জামায়াত। তবে এর সম্ভাবনা খুব কম।

নায়েবে আমির গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘প্রতীক আমাদের জন্য এখন কোনও বড় প্রবলেম নয়। এখন সবাই জামায়াতকে চেনে এবং পছন্দ করে।’

দলের পার্লামেন্টারি বোর্ডের একাধিক সদস্য জানান, জামায়াত শতাধিক আসনে পরিচর্চার আওতায় আছে। এরমধ্যে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে অন্তত ৫০টি আসন। তবে জোটভিত্তিক নির্বাচনের সম্ভাবনা এখনও থাকায় শেষপর্যন্ত কত আসন চূড়ান্ত হবে, তা এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়ে বেশি আসন চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে জামায়াত।

দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের একজন সদস্য বলেন, ‘যেহেতু আসন ভাগাভাগির বিষয়টি এখনও টেবিলে আসেনি, সে কারণে সুনির্দিষ্ট করে আমরা এখনই কথা বলবো না। জোটের টেবিলে ওঠার পর বিষয়টি নিয়ে আমরা আমাদের অবস্থান জানাবো।’

প্রসঙ্গত, ২০০১ সালে চারদলীয় জোটের ব্যানারে ৩১টি, এরমধ্যে জোটবদ্ধভাবে ৩০টি এবং এককভাবে একটিতে নির্বাচন করে জামায়াত। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৩৯টি আসনে জোটগত সমর্থন পেলেও চারটি থেকে দলীয়ভাবে করে।

২০১৭ সালের অক্টোবরে ৫২টি আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি ছিল জামায়াতের। ওই বছরের নভেম্বরে তৃণমূলের অভিমতের ভিত্তিতে বেড়ে দাঁড়ায় ৬২-তে। এরমধ্যে শুধু বৃহত্তর কুমিল্লা অঞ্চলে ৮টি আসনে প্রার্থিতা দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সূত্রটি জানায়, নির্বাহী পরিষদ দলের পার্লামেন্টারি বোর্ডের দায়িত্ব পালন করে। জামায়াতের আমির এই কমিটির প্রধান। এরপর নির্বাচন পরিচালনা কমিটি আছে, এই কমিটির প্রধান সেক্রেটারি জেনারেল। সংসদীয় নির্বাচনের প্রার্থী নির্ধারণ করতে দলের একটি কেন্দ্রীয় কমিটি আছে। সে কমিটি আরও আগেই শতাধিক আসনে জরিপসহ নেতাকর্মীদের অভিমত নিয়েছে।

প্রার্থী নির্ধারণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে পার্লামেন্টারি কমিটির একজন সদস্য জানান, ‘প্রার্থী বাছাই করতে কেন্দ্রীয় একটি বিভাগ আছে। সে কমিটি প্রত্যেকটি এলাকায় তৃণমূলে যায়। ছাত্র-ছাত্রী, নারী, পুরুষসহ স্তরভিত্তিক জনশক্তির গোপন অভিমত নেওয়া হয়। গোপন ব্যালটে তারা প্রত্যেকটি স্তরের লিখিত অভিমত কেন্দ্রে আনেন। এরপর বাছাই শেষে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি আবারও বাছাই করে। এক বা একাধিক নাম সাজিয়ে কে কত ভোট পেলেন, তা হিসাব করা হয়। এই কমিটি পার্লামেন্টারি কমিটির কাছে প্রস্তাব পেশ করে। এরপর পার্লামেন্টারি বোর্ড এই অভিমতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত দেয়।’

এই দায়িত্বশীল নেতা জানান, ইতোমধ্যে আমাদের টার্গেট করা আসনের প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া শেষ। এটাকে দুটো ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হবে। প্রথম তালিকায় থাকবে নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা ৮০ শতাংশের ওপর আছেন, এমন প্রার্থীদের নাম। যেখানে দলীয় ভোট বেশি। এর মধ্যে বিজয়ী উপজেলাগুলো রয়েছে।

নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত এই দায়িত্বশীল আরও জানান, পুরো প্রক্রিয়া শেষ হলেও এখনপর্যন্ত কয়েকটি আসনে প্রার্থী নির্ধারণ বাকি আছে। এর মধ্যে কেউ হয়তো মারা গেছেন বা কেউ হয়তো অবস্থার পরিবর্তন করেছেন।

জামায়াতের প্রভাবশালী আরেক নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জোটভিত্তিক নির্বাচন করলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে প্রতীক হবে আলাদা। ধানের শীষ নেবে না জামায়াত।’ তবে বিএনপির একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘ধানের শীষে ভোট করলেও আসন সংখ্যা অর্ধেকে নেমে যেতে পারে।’

১৯৮৬ সালের ৭ই মে জাতীয় সংসদের তৃতীয় নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী ৭৬টি আসনে মনোনয়ন দিয়েছিল। এই নির্বাচনে দলটি ১০টি বিজয়ী হয়। ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে দলটি। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ১৮টি আসনে বিজয়ী হয়। এই নির্বাচনে দলটি ২২২ জন প্রার্থী দিয়েছিল। ১৯৯৬ সনের ১২ই জুন অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াত ৩টি আসনে জয়ী হয়। ২০০১ সনের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াত ১৭টি আসন পায়। মহিলা আসনগুলো থেকে ৪টি আসনে জয়ী হয় দলটি। ২০০৮ সনের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াত ২টি আসনে বিজয়ী হয়। ওই নির্বাচনে দলটি জোটগতভাবে ৩৯টি ও ৪টিতে এককভাবে নির্বাচন করে। এছাড়া ১ম ও দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগের ব্যানারে নির্বাচন করেছিলো জামায়াত।

জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের কিছু আসন মার্কিং হচ্ছে। নির্বাচন তো জোটভিত্তিক করবো, এখনপর্যন্ত এটাই সিদ্ধান্ত। আর প্রার্থী স্বতন্ত্র থাকবে। ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করার কোনও চিন্তা নেই।’

প্রার্থী নির্ধারণের বিষয়ে এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, ‘সংখ্যা হুবহু বলা সম্ভব না এখন। প্রার্থীর অবস্থা ও আসনে সাংগঠনিক অবস্থাকে সামনে রেখে কাজ করছি আমরা।’ জোটের কাছে প্রত্যাশার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই সংখ্যাটা গতবারের চেয়ে বাড়বে। তবে জোটে নির্বাচন হলে তো আলোচনা হবে।’

এদিকে, বিএনপির তৃণমূল ইতোমধ্যে হাইকমান্ডকে জানিয়েছে, নির্বাচনের আগে জামায়াতকে বাদ দিতে হবে। গত ৩০ জুলাই সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জোটের বাইরে গিয়ে প্রার্থিতা দেওয়ার কারণে এই আলোচনা এখন জোরেসোরে হচ্ছে বিএনপিতে ও জোটে।