চকরিয়ায় মায়ের কোলে শিশু জান্নাতুল মেহেরাজ। পাশে গ্রেফতার হওয়া বাবা রেজাউল

এম.জিয়াবুল হক,চকরিয়া :

চকরিয়ায় মাদকের টাকা যোগাড় করতে গিয়ে তাঁর দেড় বছর বয়সের শিশু কন্যাকে বিক্রি করে দেন ওই পিতা। বিক্রির আট দিন পর মহেশখালী উপজেলার শাপলাপুর ইউনিয়নের বারিয়া পাড়ার এক ব্যক্তির কাছ থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। উদ্ধারের পর শিশু জান্নাতুল মেহেরাজকে চকরিয়া থানার ওসি বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী অবশেষে মা রাবেয়া বেগমের কোলে তুলে দিয়েছেন।

নিজের শিশু মেয়েকে বিক্রির ঘটনায় অভিযোগ পেয়ে চকরিয়া থানা পুলিশ ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে বাবা রেজাউল করিমকে (৩২)। শুক্রবার তার বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে সন্তান বিক্রির ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। রেজাউল চকরিয়া পৌরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের বাটাখালী ফুলতলা গ্রামের মৃত রশিদ আহমদের ছেলে। তার স্ত্রী রাবেয়া বেগমের বাড়ি পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের বাজার পাড়ায়।

থানা পুলিশ জানায়, মাদকাসক্ত স্বামী রেজাউল করিম যৌতুকের দাবিতে প্রায়ই শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতেন স্ত্রী রাবেয়া বেগমকে। এমনকি বিয়ের পর থেকে স্ত্রীকে ভরণ–পোষণ দেন না। দু মুঠো ভাতের জন্য স্ত্রী অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। এভাবে প্রায় দুই বছর কেটে যায়। এরপরও মাদক সেবনের টাকার জন্য বাড়িতে এসে স্ত্রীকে নির্যাতন করেন রেজাউল। সর্বশেষ মাদকের টাকা যোগাড় করতে স্ত্রীর অজান্তে নিজের দেড় বছরের মেয়ে জান্নাতুল মেহেরাজকে সামান্য টাকায় বিক্রি করে দেন।

চকরিয়া পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. বশিরুল আইয়ুব জানান, নিজের সন্তানকে কোনো বাবা এভাবে অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার ঘটনা নজিরবিহীন। বিষয়টি জানার পর তাৎক্ষণিক পুলিশের সহায়তা নিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার এবং মাদকাসক্ত রেজাউলকে গ্রেপ্তারে পুলিশকে সহায়তা করি।

মহেশখালী থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করেন থানার এসআই গাজী মঈন উদ্দিন। তিনি জানান, শিশু মেয়েকে বিক্রির অভিযোগ পাওয়ার পর প্রথমে বাবা রেজাউলকে আটক করা হয়। এ সময় তার কাছে পাওয়া যায় ৩৩ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে স্বীকার করে, মাদকের টাকা জোগাড় করতেই তার মেয়েকে মহেশখালীর শাপলাপুরে এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করেছে। এই তথ্য পাওয়ার পর শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মাদকাসক্ত রেজাউল নিজের সন্তান চুরি করে বিক্রির ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত শিশুটিকে তার মায়ের কোলে তুলে দেয়া হয়েছে।