শাহিদ মোস্তফা শাহিদ, কক্সবাজার সদর :
সরকার ঘোষিত শতভাগ বিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতায় কক্সবাজার সদর,রামু ও পার্বত্য জেলার বাইশারীসহ অধিকাংশ এলাকা-ই এখন বিদ্যুতের আওতাভুক্ত। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই বিদ্যুতের আওতায় আসবে রামু গর্জনিয়া ও বাইশারী ইউনিয়নের ৬টি গ্রামীণ জনপদ। এরই মধ্যে সদরের ৭, রামুর ৩, নাইক্ষ্যংছড়ির এক ইউনিয়নে শতভাগ বিদ্যুতায়ন সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া গর্জনিয়ার আংশিক ও বাইশারীর ৬ গ্রাম শতভাগ বিদ্যুতায়নের কাজ সমাপ্ত করে উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। অধিকাংশ এলাকা বিদ্যুতায়নের আওতায় এসেছে। জালালাবাদ, ঈদগাঁও, ইসলামাবাদ, ইসলামপুর, পোকখালী, চৌফলদন্ডী, ভারুয়াখালী, রশিদনগর, ঈদগড়, বাইশারীতে ৯৮ শতাংশ বিদ্যুতায়িত হয়েছে। বাকি কাজ ডিসেম্বর মাসের মধ্যে শেষ করে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাবে। ঈদগড়, বাইশারীতে শতভাগ বিদ্যুতায়ন সম্পন্ন হবে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই। ২০১৯ সালের জানুয়ারী মাসের মধ্যেই অসমাপ্ত কাজ শেষ করে শতভাগ বিদ্যুতায়ন সম্ভব হবে সদর, রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ির উপজেলার আংশিক এলাকা। ২০১৩ থেকে ২০১৮ সালের আগষ্ট পর্যন্ত ঈদগাঁও সাব জোনাল অফিসের আওতায় সদর, রামু, নাইক্যংছড়ি উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে নতুনভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়েছেন প্রায় ২৩ হাজার গ্রাহক। ঈদগাঁও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির তথ্যমতে, গেল ৫ বছরে প্রায় ৯৮ শতাংশ এলাকায় বিদ্যুৎতায়ন সম্ভব হয়েছে। অবশিষ্ট ২ শতাংশ কাজ সরকারের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার আগেই শেষ হয়ে যাবে। ২০১৭ সালের জুন মাসে বৃহত্তর ঈদগাঁওকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষণার অপেক্ষায় আছে বাইশারী, ঈদগড়, গর্জনিয়ার আংশিক এলাকা। ৩০২ বর্গ কিঃমিঃ এলাকায় এ ৬৮৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইনের স্থলে ৬৮৫ কিলোমিটার লাইন নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে ১১ ইউনিয়নে। বাকি মফস্বল এলাকায় সাইড লাইনে আনুমানিক ১০ কিলোমিটার মত সঞ্চালন লাইনের নির্মাণ কাজ চলছে, যা আগামী ৩/৪ মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে দৈনিক সকালের কক্সবাজারকে জানান ঈদগাঁও পল্লী বিদ্যুৎ সাব জোনাল অফিসের ইনচার্জ শিমুল মল্লিক। তিনি জানান, ঈদগড়, বাইশারী, গর্জনিয়ার আংশিক এলাকায় সঞ্চালন লাইন নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে। একটু ধীরগতি হলেও আমাদের অফিসের আওতাভুক্ত ৬ এলাকায় ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় আনা সম্ভব হবে। ঈদগাঁও পল্লী বিদ্যুৎ সাব জোনাল অফিসের আওতাভুক্ত ৩ উপজেলার ৩১১ গ্রামকে বিদ্যুতের আওতায় আনতে মোট ৬৮৫ কিলোমিটার লাইন নির্মাণ করা হয়েছে, এতে প্রায় ৯০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এ পর্যন্ত নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়েছেন ২৩ হাজার গ্রাহক। এতে ঈদগাঁও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গ্রাহক সংখ্যা ৩৮ হাজারে দাঁড়িয়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির তথ্যমতে, ২০১৩ সালের জানুয়ারি হতে এ পর্যন্ত পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাভুক্ত ৩টি উপজেলায় প্রায় ১৩ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১২০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ১৩০টি গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে, এর আওতায় নতুন গ্রাহক হয়েছেন প্রায় ৭ হাজার। ২০১৭ সালে বৃহত্তর ঈদগাঁও এলাকাকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত ঘোষণা করা হয়েছে। কক্সবাজার সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি হুমায়ন তাহের চৌধুরী হিমু বলেন, আমাদের ঈদগাঁওতে আগে বিদ্যুতের অবস্থা ছিল ভয়াবহ। কিন্তু সদর রামু আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের নির্বাচনী এলাকা হিসেবে এবং তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মাত্র ৫ বছরেই শতভাগ বিদ্যুতায়ন সম্ভব হয়েছে। ফলে এ অঞ্চলে সেচ সুবিধা বৃদ্ধি এবং উৎপাদনমুখী নতুন নতুন কলকারখানা স্থাপনের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। গ্রামীণ এলাকার শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার মানোন্নয়ন হয়েছে। আগে যেখানে বিদ্যুতের জন্য সন্ধ্যার পর পড়তে বসা যেত না, এখন সেখানে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সুবিধার কারণে শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। বাইশারীর থোইঙ্গাকাটা এলাকার কৃষক মোজাম্মেল হক, ইদ্রিস মিয়া বলেন, মাত্র কিছুদিন আগে আমাদের গ্রামে নতুন বিদ্যুৎ এসেছে। এখন আমরা আগের চেয়ে অনেক ভালো আছি। বিদ্যুৎ আসায় কৃষি ক্ষেতে যথা সময়ে সেচ দেওয়া সম্ভব হবে। ফসলের উৎপাদন ভালো হবে। ছেলেমেয়েরা রাতে পড়ালেখা করতে পারছে। এজন্য তিনি সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। বাইশারী, ঈদগড়, গর্জনিয়ার আংশিক এলাকায় ১২০ কিলোমিটার নতুন লাইন স্থাপনের মাধ্যমে ১৩০টি গ্রামে নতুন করে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। আরও ১০/১২ কিলোমিটার লাইন স্থাপনের কাজ চলমান আছে। এছাড়া ঈদগাঁও কলেজ গেইট এলাকায় ১৫ কোটি টাকার ব্যয়ে আরো ১০ এমভিএ সাব ষ্টেশন স্থাপনের অপেক্ষায় আছে। ইতিমধ্যে উক্ত সাব ষ্টেশনের জন্য জমি অধিগ্রহন, নকসা ও পরিমাপ শেষ হয়েছে। ৪/৫ মাসের মধ্যে এটির কাজ শুরু হবে বলে জানায় সাব জোনাল অফিসের প্রকৌশলী পুর্ণ দে। তিনি আরো জানান, ১০ কেভির মধ্যে প্রতিদিন ৮.৫ মেঃও বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়ে আসছে। সাব জোনাল অফিসের আওতায় ৮.৫ কেভির মধ্যে পড়েছে ৫৪৮ টি সেচ, বানিজ্যিক ৪২০১, আবাসিক ৩১৩৩৬, মোবাইল টাওয়ার ৬০টি, দাতব্য প্রতিষ্টান ৬৩৮ টি, রাস্তার বাতি ৩১ টি, লবন মিল ৭২টি, বড় শিল্প ৯টি রাইচমিল ১০৮টি ওয়ার্কসপ ৪৩টি, মুরগীর খামার ১৯টি, লাকড়ীর মিল ১২টি, বরফকল ১০টি, করাতকল ১৩টি, মৎস্য খামার ৬টি, চিড়াকল ১টি, প্লাস্টিক মিল ২টি, রাবারড্যাম ১টি, অন্যান্য ১০২ টিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়ে আসছে। আমরা শতভাগ চেষ্টা করে যাচ্ছি নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে। পবিত্র রমজান মাসেও আমরা নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিয়েছি। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই শতভাগ বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন নির্মাণ সম্পন্ন করে সরকারের লক্ষমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন সংশ্লিষ্টরা।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।