মোঃ নিজাম উদ্দিন, চকরিয়া‌‌:
কখনো দেশ থেকে দুর্নীতি বন্ধ হবে না যদি আমরা নিজে নিজদের সুধরাতে না পারি। দেশ ও দশের কল্যাণে বানানো প্রচলিত আইনগুলোকে মেনে না চলি। আর এ আইন অমান্য করছে একজন দিনমজুর নয় আমি, আপনি নতুবা বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করা কোন কর্মকর্তা। সরকার নিয়োগ দিয়েছে আমাকে জনস্বার্থে কাজ করার, জনগণের সেবা করার। এবং গেল কয়েক বছরে বেতনটাও কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তারপরও আমি উপরি কামাইয়ের জন্য লালকে সাদা আর সাদাকে লাল বানাচ্ছি। বৃদ্ধ বাবার ফাইলটি মাসের পর মাস, বছরের পর বছর আটকিয়ে রাখছি। এটি কি দুর্নীতি নয় ? আবার দুর্নীতি না করে উপায়ও কোথায়। বড় স্যারের যে মাসিক টার্গেট পূরণ করতে হয়। একবারও কি ভেবে দেখেছেন আপনার বেতন বা বেতন বৃদ্ধির টাকাটি আসছে কোথায় থেকে! নিশ্চয়ই জনগণের ঘাম ঝরা কামাই থেকে। আর সে অসহায় জনগণ প্রতিনিয়ত আটকে যাচ্ছে দুর্নীতির বেড়াজালে। কর্তা বাবুর ক্ষমতার ভয়ে দুর্নীতির কথাগুলো মনখুলে কাউকে বলতেও পারছে না মানুষ। সে যদি প্রতিবেদনটি উল্টা করে দেয় বা অন্য দিকে আটকিয়ে দেয়! এখানে কর্তা বাবুর দোষও কোথায়! চাকরিটা নিতে গিয়ে তার গুনতে হলো লক্ষলক্ষ টাকার ঘুষের বান্ডেল। ধারকর্জে জমি বন্ধক দিয়ে চাকরির জন্য জোগাড় করা এ টাকা পরিশোধ করবে কে? কর্তা বাবুর বড় স্যার! কিছুতেই নয় নিশ্চয়ই জনগণ পিঠের উপর থেকে। এ কর্তা বাবু কাজে যোগদানের আগে ওয়াদাও করেছিল- জনগণের সেবা করিব, দেশের সেবা করিব, অন্যায় করিব না, রাষ্ট্রদ্রোহী কাজ করিব না ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু বাস্তবে হলো তার উল্টো। আবার আট হাজার টাকা বেতনের চাকরি করছে কর্তা বাবুর সহকারী। পনের হাজার টাকা গুনে সে শুধু তার আলিশান বাসা ভাড়া। দেশের বাড়িতে কয়েক বছরে বানালেন ইয়া বড় ভবন। তার ছেলে কয়েক লক্ষ টাকা দামের একেক দিন ভিন্নভিন্ন মড়েলের মোটর বাইক পাছায় লাগিয়ে ঘুরছে। প্রতিদিন খাবার তালিকায় বাজার সেরা বড় মাছ আর দেশি মোরগটির কথা বাদই দিলাম। তবে একবারও কি ভেবে দেখেছেন রোদে পুড়া ঝলসানো চেহারার লোকটি আপনাকে দেওয়া টাকাটি কি ভাবে জোগাড় করেছে ? প্রশ্ন রয়ে গেল।
অপরদিকে আমার অর্থ আছে আমি চাই অর্থের প্রাচুর্য বাড়াতে। আর ক্ষমতা আছে যাচ্ছি অপব্যবহার করতে। অথচ সেমিনারে গিয়ে নীতি-নৈতিকতার কথা বলছি অহরহ। বাস্তব ক্ষেত্রে এসে আমার দ্বারা ঘটছে অন্যটা। সাধারণ মানুষের অগোচরে দেশের প্রচলিত আইন বিরোধী কাজে লিপ্ত রয়েছি প্রতিনিয়ত। মানুষের সামনে এক ছটাক উন্নয়নের কাজ দেখিয়ে, সংগোপনে এক সের পরিমান অপকর্মে পকেট ভারী করে যাচ্ছি। সমস্যা নাইতো বশি করণ তাবিজ দিয়ে আইনের মানুষগুলোকেও হাতে রাখছি। যদি এক্ষেত্র হয় তাহলে কি দুর্নীতি বন্ধ হওয়া সম্ভব ? তারও প্রশ্ন রয়ে গেল।
এবার চলুন ফিরে যাই সেই আগের কথায়। আমরা নিজে নিজকে যতক্ষণ স্বাভাবিক পথে পরিচালিত করতে পারব না ততক্ষণ পর্যন্ত দুর্নীতি বন্ধ হবে না। সকল পেশাদার যদি দেশ ও মানুষকে ভালবেসে প্রচলিত আইনকানুন মেনে চলে দৈনন্দিন কাজকর্ম পরিচালনা করে তাহলেই হয়তো দুর্নীতি বন্ধ হওয়া সম্ভব।