বিশেষ প্রতিবেদক:
২৬ জুলাই ২০১৮, দিনভর বৃষ্টি, চারদিকে পানি এমনকি লিংক রোড থেকে উখিয়া রোড পানিতে তলিয়ে গেছে, দূর্বিষহ জন-জীবন, এমন একটি দিনে চেইন্দা, মিঠাছড়িতে অবস্থিত হোপ ফাউন্ডেশন ফর উইমেন এন্ড চিলড্রেন ব্যাপক সফলতা দেখিয়েছে। দূর্যোগপূর্ন দিনে হোপ হসপিটাল দিনভর ব্যস্ত ছিল চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য। সকাল ১০টা পর্যন্ত খুব একটা রোগীর দেখা মেলেনি কিন্তু এরপর থেকেই শুরু হয় রোগীদের আসা। ঐ দিন মোট পাচঁটি সিজারিয়ান অপারেশন সম্পন্ন হয় চেইন্দায় অবস্থিত এই হাসপাতালে। দিনভর কর্মব্যস্ততায় কাটে দায়িত্বপ্রাপ্ত ডাক্তার-নার্সদের। এখানে উল্লেখ্য যে, হোপ হসপিটাল অত্র এলাকায় নরমাল ডেলিভারীর জন্য অত্যন্ত বিশ্বস্ত একটি প্রতিষ্ঠান। স্বল্পমূল্য ও কোন কোন ক্ষেত্রে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান এবং এত্র এলাকায় একমাত্র রেফারেল হসপিটাল হওয়ার কারনে প্রচুর ইমারজেন্সি/জরুরী পরিস্থিতিতে পড়া রোগী আসে আর সে কারণে অনেক সময় বাধ্য হয়েই সিজারিয়ান (সি-সেকশান) অপারেশন করাতে হয়।
দিন-রাত অঝোরে বৃষ্টির কারনে উখিয়া রোডে বাংলাদেশ বেতার কক্সবাজার অফিসের সামনে, বসুন্ধরার সামনের রাস্তা এমনকি হোপ হসপিটালের চারদিক পানিতে ডুবে গিয়েছিল। চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না কি কষ্টে রোগীরা হসপিটালে এসেছে! কেউ কেউ ডুবো রিক্সা করে আবার কোন কোন গর্ভবতী মাকে কোলে করে হাসপাতালে আনতে হয়েছিল। এভাবেই চলেছে দিনভর স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রমসমূহ। দূর্যোগপূর্ন এমন দিনে সেবা কার্যক্রম যাতে বিঘœ না ঘটে সেজন্যই হোপ হসপিটাল কর্তৃপক্ষ হাসপাতাল স্টাফদের নন-স্টপ কার্যক্রম চালিয়ে যেতে অনুরোধ করেন। প্রতিকূল আবহাওয়া সত্ত্বেও একাধিক ডেলিভারী সম্পন্নকারী হোপ হসপিটালের চিকিৎসক ডা. ফাহমিদা আক্তার বলেন, ‘‘চিকিৎসা পেশায় এসেছি মানুষের সেবা করার জন্য, ঝড়-বৃষ্টি কোন বাধা নয় বরং অসহায় মানুষের জন্য কিছু করতে পারলেই চিকিৎসা বিষয়ে যে পড়েছি সেটা সার্থক হবে বলে মনে করছি।”
এই দিনে চেইন্দা, মিঠাছড়িতে অবস্থিত হোপ হসপিটাল ছাড়াও কক্সবাজারের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেমন খুরুসকূল, ঈদগড়, পোকখালী, ভারুয়াখালীতে অবস্থিত হোপ বার্থ সেন্টারসমুহেও গর্ভবতী মায়ের ডেলিভারী সম্পন্ন হয়েছে। অন্যদিকে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ক্যাম্পেও হোপ মেডিকেল টীম স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছিল। মোটকথা ২৪/৭ (সার্বক্ষনিক) স্বাস্থ্য সেবা চালু ছিল এবং বৃষ্টি-বর্ষা-বাদল দিনেও সেবা প্রদানে কোন প্রকার বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।
রোগীদের বিশেষকরে গর্ভবতী মায়েদের অনেক কষ্টে সেবা কেন্দ্রে আসতে হয়েছে। আর এ প্রসঙ্গেই হোপ ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি ডাইরেক্টর কমান্ডার (অবঃ) এস এম ফেরদৌসুজ্জামান বলেন, উপকূলবর্তী এলাকার দূর্যোগ মোকাবেলায় বিভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি থাকে যেমন, উচু বিল্ডিং/সাইক্লোন সেন্টার স্থাপন ইত্যাদি, ঠিক তেমনীভাবেই সরকারীভাবে কিছু সংখ্যক উচু যানবাহন যেমন, ট্রাক/ট্রাকটর জাতীয় এ্যাম্বুলেন্স গাড়ীর ব্যবস্থা রাখা যাতে প্রয়োজনে বর্ষার পানিতে ডুবে যাওয়া এলাকা থেকে রোগী বহন করে স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে নির্বিগ্নে পৌঁছানো যায়।
হোপ ফাউন্ডেশনের এমন প্রতিকূল আবহাওয়ায় নজিরবিহীন স্বাস্থ্য সেবা প্রদান বিষয়ে জানতে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট ডা. ইফতেখার মাহমুদ মিনার এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মুঠোফোনে জানান, ‘‘আবহাওয়া কোন ব্যাপার না, সেটা অনুকূল কিংবা প্রতিকূল থাকতে পারে কিন্তু হোপ ফাউন্ডেশন সব ধরনের অবস্থাতেই মানুষের স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত ছিল এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত রাখবে। কক্সবাজার জেলার দূর্গম, পিছিয়ে পড়া এবং প্রত্যন্ত এলাকায় গরীব ও অসহায় মানুষের স¦াস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতেই ১৯৯৯ সালে হোপ হসপিটাল চালু করেছি। আর এই কার্যক্রমসমূহ সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে যারা সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন আমি সেই সকল দেশী-বিদেশী দাতা ব্যক্তিবর্গ এবং সংস্থাসমূহের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।”