এম.মনছুর আলম, চকরিয়া :
টার্কি মুরগি পালনে ভাগ্য বদলাতে শুরু করেছে কক্সবাজারের চকরিয়ার উপজেলার খুটাখালী চড়িবিল এলাকার নুরুল আলম সওদাগর নামের এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।নানা ধরণের ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করলেও স্বচ্ছলতা আসেনি তার জীবনে। তিনি পরিবারের অভাব মেটাতে ও স্বচ্ছলতা মধ্যে জীবন-যাপন করতে এলাকায় দীর্ঘসময় ধরে ক্ষুদ্র কাঠ ব্যবসা করে আসছিল। তার কাঠ ব্যবসার মাধ্যমে পরিবারের মাঝে স্বচ্ছলতা ফিরে না আসায় উদ্যোগ নেয় টার্কি মুরগী পালন। টার্কি মুরগী পালনের পর থেকে দিন দিন বেড়ে চলেছে তার খামারে অতিথীদের সংখ্যা। একজন সফল খামারী হিসাবে রাত দিন শ্রম দিয়ে চলেছেন।তার খামারে সাদা-কালো এবং ব্রোঞ্জ রং এর টার্কি রয়েছে। টার্কি মুরগীর পাশাপাশি দেশীয় মুরগী ও পালন করছেন। বর্তমানে টার্কি মুরগী পালন করে স্বাভলম্বী হিসেবে নিজেকে দাবী করেন টার্কির খামারী নুরুল আলম। পরিবারের মাঝে ফিরে আসছে আর্থিক স্বচ্ছলতা, কেটে গেছে নানা আর্থিক সংকটও ।
টার্কি মুরগী খামারী নুরুল আলম বলেন, নিজের পরিবারের অভাব গোছাতে ও স্বাভলম্বী হিসেবে প্রতিষ্টিত করতে দশ মাস পূর্বে চট্রগ্রাম শহর থেকে দুইজোড়া (চারটি) টার্কি মুরগি কিনে আনেন। কিনে আনা টার্কির মুরগীর মধ্যে তিনটি মা মাদার ও একটি পুরুষ মাদার ছিল।এ টার্কি মাদার ভালো ভাবে যত্নসহকারে লালন-পালন করে টার্কির বয়স ছয় সাত মাস যেতে না যেতেই ডিম দেয়া শুরু হয়। এরপর তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সেই দুই জোড়া টার্কি মুরগি থেকে এখন তিনি কয়েকশ টার্কির মালিক ও প্রকৃত একজন টার্কি খামারী। শুধুমাত্র ২১হাজার টাকা (টার্কি ক্রয়) বিনিয়োগ করে তিনি এখন লক্ষ টাকার মালিক। প্রথম পর্যায়ে টার্কি মুরগী বিক্রি করে ৭০হাজার টাকা আয় করে খামারী আলম। তিনি এ টার্কি খামারীর নাম দেন “আলম টার্কির খামার “।প্রতি মাসে ডিম ও টার্কি মুরগি বিক্রয় করে ভালোই আয় খামারী আলমের। এখন বাণিজ্যিক ভাবে টার্কির খামার করছেন তিনি। এ মুরগির সাধারণ মুরগির মতো রোগ বালাই হলেও বড় ধরণের কোনো অসুখ এখন পর্যন্ত হয়নি।টার্কি মুরগীর পাশাপাশি দেশীয় জাতি মুরগী রয়েছে বেশ কয়েক জোড়া মুরগীও।
তিনি আরো জানান, টার্কির রোগবালাই প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব বেশী। ছয় মাসের একটি পুরুষ টার্কির ওজন হয় পাঁচ থেকে ছয় কেজি এবং স্ত্রী টার্কির ওজন হয় তিন থেকে চার কেজি।বর্তমানে দেশীয় জাতি মুরগীর মাধ্যমে ২৮ দিনেই টার্কির এ ডিম ফুটানো যায়।তিনি এক মাসের টার্কির বাচ্চা জোড়া হিসেবে বিক্রি করেন তিন হাজার টাকায়। এক থেকে পনের দিনের বাচ্চা জোড়া হিসেবে বিক্রি করে ১হাজার-১২শত টাকায়।এছাড়াও প্রতিটি টার্কি মুরগীর ডিম বিক্রি করেন ২০০ টাকায়। টার্কি মুরগী পালনে যে সব সুবিধা রয়েছে তা হলো, টার্কি মুরগী দেশী মুরগীর মতো লালন পালন করা যায়। ব্রয়লারের মুরগীর চেয়ে দ্রুত বাড়ে এবং টার্কির ওজন দশ থেকে বার কেজি পর্যন্ত হয়। টার্কি মুরগীর প্রধান খাদ্য হচ্ছে ঘাস, লতাপাতা ও সবজি জাতীয় খাবার।টার্কি মুরগীর মাংসের প্রোটিনের পরিমাণ বেশি।এ মুরগীর মধ্যে কোন ধরণের চর্বি নেই। প্রতিটি স্ত্রী (মা মাদার) টার্কি মুরগী বছরে ১২০ থেকে ১৬০টির মতো ডিম দিয়ে থাকে।
এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা: ফেরদৌসী আকতার দ্বীপ্তির কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, টার্কি আমাদের প্রাণিসম্পদ, এটি একটি নতুন প্রজাতি।ঢাকা, চট্রগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় টার্কি পালন করা হচ্ছে অনেক দিন ধরে। টার্কি পালন একটি লাভজনক ব্যবসা। এ কারণে খামারিরা এ ব্যবসার প্রতি ঝুঁকছেন। প্রাণীসম্পদ বিভাগ থেকে টার্কি খামারিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হবে বলে তিনি জানান।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।