শাহেদ মিজান, সিবিএন:
ট্রাফিক সপ্তাহ উপলক্ষ্যে লাইসেন্স তল্লাশী ও ধরপাকড়ের কারণে কক্সবাজার শহর থেকে লাইসেন্সবিহীন, ফিটনেসবিহীন ও চোরাইগাড়িসহ সব ধরণের অবৈধ গাড়ি উধাও হয়ে গেছে। গত দিন ধরে ট্রাফিকের অভিযান চলছে। এসব অবৈধ গাড়ি উধাও হওয়ায় যানজট কমে গিয়ে ঘিঞ্জির শহরে অনেক দিন পর অনেকটা স্বস্তি ফিরেছে। এতে শহরবাসী সহজে চলাফেরা করতে পারছে না।

জেলা ট্রাফিক পুলিশ বিভাগ জানায়, সারাদেশে চলমান ট্রাফিক সপ্তাহের অংশ হিসেবে কক্সবাজার শহরে তল্লাশী চৌকি বসিয়ে অবৈধ গাড়ি জব্দ করা হচ্ছে। লাইসেন্সবিহীন, ফিটনেসবিহীন এসব গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হচ্ছে। গত তিন দিনে প্রায় দু’শ গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। এই অভিযানের জন্য শহরের ছয়টি মোড়ে ২৭ জন পুলিশ ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছেন। শহরের ছয়টি ট্রাফিক মোড়ে ১০ জন অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। কক্সবাজারের মতো চকরিয়া, টেকনাফসহ আরো বিভিন্ন স্থানে ট্রাফিক পুলিশ অবৈধ যানবাহন তল্লাশী চালাচ্ছে।

অবৈধ গাড়ি উধাও হয়ে যাওয়ায় কক্সবাজার শহরের সকাল রাত পর্যন্ত যানজট হচ্ছে না। অতিরিক্ত গাড়ির চাপ কমে যাওয়ায় বৈধ গাড়িগুলো নিবির্ঘেœ স্বাভাবিক ভাবে চলাচল করছে। এতে যাত্রীসহ সাধারণ মানুষ দারুণ স্বস্তি পাচ্ছে। বহু বছরের তীব্র যানজট কমে যাওয়ায় যাত্রীরা অতি সহজে চলাচল করতে পারছে।

শহর ট্রাফিক পুলিশের পরির্শক বিনয় কুমার বড়ুয়া জানান, ট্রাফিক সপ্তাহ উপলক্ষ্যে জেলা ট্রাফিক অত্যন্ত হার্ডলাইনে রয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত পর্যন্ত তল্লাশী চলছে। টমটম, হাইয়েস মাইক্রো, প্রাইভেট কার, ট্রাক, মোটরসাইকেলসহ সব ধরণের গাড়ির তল্লাশী করা হচ্ছে। গাড়ির লাইসেন্স ও চালকের লাইসেন্স দুটো তল্লাশী করা হচ্ছে। লাইসেন্স না থাকলেও কোনোভাবে ছাড় দেয়া হচ্ছে না। সাথে সাথে দেয়া হচ্ছে মামলা। লাইসেন্স ছাড়াও গাড়ি চলাচলেও শৃঙ্খলা আনতে কাজ করা হচ্ছে। সঠিক লেনে গাড়ি চালানো, ট্রাফিক আইন মেনে চলার জন্য প্রতিটি চালককে সতর্ক করা হচ্ছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ভোলা বাবুর পেট্রোল পাম্পে অঘোষিত সিএনজি অটোরিক্সা স্টেশনে আগের মতো সিএনজি অটোরিক্সা নেই। পার্ক করা যা আছে তার সংখ্যা আগের তিনগুণের একগুণ।ওই চালকেরা জানিয়েছেন গাড়ি ও চালকের লাইসেন্স না থাকায় অনেক সিএনজি অটোরিক্সা চলাচল করছে না। আগে এসব অবৈধ সিএনজি অটোরিক্সা ট্রাফিক পুলিশকে মাসিক ভিত্তিতে উৎকোচ দিয়ে চলাচল করতো বলে জানায় তারা।

একইভাবে টমটমের সংখ্যা আগের সময়ের চেয়ে অর্ধেক মতো চলাচল করছে। লাইসেন্সবিহীন, ভুয়া লাইসেন্সধারী ও চালকের লাইসেন্স না থাকা টমটমগুলো উধাও হয়ে গেছে। এর ফলে বাজারঘাটা, পানবাজার এলাকা ও বার্মিজ মার্কেট এলাকা নিত্যচেনা যানজট আর হচ্ছে না।
শহরের লোকজনের অভিমত, সব নষ্টের গোড়া হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। ট্রাফিক পুলিশ উৎকোচ নিয়ে অবৈধ গাড়ি চলাচল করতে দেয়। রাত আটটার আগে বড় গাড়ি শহরে ঢুকতে না দেয়ার নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ট্রাফিক পুলিশেক উৎকোচ দিয়ে দিনের বেলায় ওষুধ কোম্পানিসহ বিভিন্ন কোম্পানির মালবাহী কাভার্ড ভ্যানসহ অন্যান্য মালবাহী গাড়ি শহরে ঢুকে। একই সাথে অবৈধ সিএনজি অটোরিক্সা, টমটম, নোহাসহ বিভিন্ন গাড়ি অনায়সে চলাচল করছে। এক কথায় ট্রাফিক পুলিশ উৎকোচ না খেলেই ট্রাফিকে শৃঙ্খলা ফিরবে।

কক্সবাজার সোসাইটির সভাপতি কমরেড গিয়াস উদ্দীন বলেন, ‘ঢাকায় দু’শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে ট্রাফিক সপ্তাহ ঘোষণা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সড়ক যোগাযোগে অনেক শৃঙ্খলা ফিরেছে। কিন্তু ট্রাফিক সপ্তাহ শেষ হলে এই শৃঙ্খলা আবার ভেঙে পড়বে নিশ্চিত। সাধারণ মানুষের চাওয়া ট্রাফিক সপ্তাহের মতো সারাবছর ট্রাফিক নিষ্ঠা ও সততার সাথে দায়িত্ব পালন করুক। তবে মানুষ নিরাপদে চলাচল করতে পারবে।’

কক্সবাজারের সহকারী পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) বাবুল চন্দ্র বণিক বলেন, ‘কক্সবাজারে ট্রাফিক সপ্তাহ অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পালন করা হচ্ছে। এই উপলক্ষ্যে আইন মেনে আমরা অবৈধ যানবাহন ও চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। ট্রাফিক সপ্তাহ শেষ হলেও আমরা এই কঠোরতা অব্যাহত রাখবো।’