জে.জাহেদ, চট্টগ্রাম :
ঢাকায় আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদের সাথে সংহতি জানিয়ে নিরাপদ সড়কের দাবিতে চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। রোববার বিকালে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেনের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ঢাকার আন্দোলন থেকে ওঠা নয় দফার সঙ্গে চট্টগ্রামের জন্য কিছু দাবি-দাওয়া উপস্থাপন করেন শিক্ষার্থীরা। জেলা প্রশাসক তাদের দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দেওয়ার পর তারা সোমবার থেকে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত জানান।
বৈঠকে সরকারি কমার্স কলেজ, হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ, চট্টগ্রাম কলেজ, সরকারি সিটি কলেজ, ইসলামীয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, ওমরগণি এমইএস কলেজ, মুসিলম হাই স্কুল, কলেজিয়েট হাই স্কুলসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। ঢাকার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সংহতি জানিয়ে চট্টগ্রামেও গত বৃহস্পতিবার থেকে রাস্তায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। শনিবার পর্যন্ত আন্দোলনে থেকে রোববার চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের সাথে বৈঠকে বসেন শিক্ষার্থী।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে গড়ে উঠা দেশব্যাপী ছাত্র আন্দোলন যৌক্তিক ও দাবির প্রতি সমর্থন আছে মন্তব্য চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আন্দোলনে কিছু অনুপ্রবেশকারী ঢুকে গেছে। তোমাদের সঠিক আন্দোলনকে তারা নস্যাৎ করে দিচ্ছে।” জেলা প্রশাসক আন্দোলনের কিছু ব্যানার-ফেস্টুনেরও সমালোচনা করেন। এসময় শিক্ষার্থীদের পক্ষে সরকারি কমার্স কলেজের শিক্ষার্থী মিনহাজ চৌধুরী ও মহসিন কলেজ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সোহেল কিছু দাবি তুলে ধরেন শিক্ষার্থীদের পক্ষে।
এসময় জেলা প্রশাসক তাদের জানান, প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের অনেক দাবি মেনে নিয়েছেন। অচিরেই তা বাস্তবায়ন হবে।
তিনি বলেন, “সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর নয়। তা সংশোধনের দাবি তুলেছ তোমরা। আইন প্রণয়নের কিছু নিয়ম আছে। সংসদ অধিবেশনের মাধ্যমে তা করতে হয়।” শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে ফুট ওভার ব্রিজ অথবা আন্ডার পাস নির্মাণের দাবি জানান। পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে স্পিড ব্রেকার ও জেব্রা ক্রসিং দেওয়ারও দাবি জানানো হয়।
এছাড়া শিক্ষার্থীরা নগরীতে সকাল ছয়টার পর ট্রাক কভার্ড ভ্যান চলাচল বন্ধ করা, ২০টি বিআরটিসির বাসে স্কুল ছুটির সময় হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান তারা। বৈঠকে শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রাম মহানগরের ছয়টি সরকারি কলেজে দুইটি করে বাস দেওয়ারও দাবি জানান।
জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেন শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়ে বলেন, “আমার ওপর বিশ্বাস রাখ। দাবিগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবিগুলো তুলে ধরা হবে।”
তিনি বলেন, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট কোথায় স্পিড ব্রেকার হবে, কোথায় হবে না তা ঠিক করে। সব জায়গায় স্পিড ব্রেকার তৈরি করলে দুর্ঘটনা বাড়বে।
“আমার সাথে মেয়র ও সড়ক বিভাগের সাথে কথা হয়েছে। যেসব স্থানে স্পিড ব্রেকার করা যায় সেখানে করা হবে।
আর অন্য জায়গায় জেব্রা ক্রসিং করা হবে। পাশাপাশি ছুটির সময় ট্রাফিক পুলিশ রাখা। ইতোমধ্যে অনেক স্থানে জেব্রা ক্রসিং দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে বলেও জানান জেলা প্রশাসক। ফুটওভার ব্রিজ তৈরির আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, ফুটওভার ব্রিজ করা না গেলে আন্ডারপাস করার চেষ্টা করা হবে। একই স্থানে চট্টগ্রাম কলেজ, মহসিন কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারি স্কুল, কাজেম আলী হাই স্কুল থাকলেও সেখানে কোনো যাত্রী ছাউনি নেই বলেও জানান শিক্ষার্থীরা।
এতে বিস্ময় প্রকাশ করে জেলা প্রশাসক যাত্রী ছাউনি নির্মাণ, দিনের বেলা ট্রাক চলাচল বন্ধ করার বিষয় নিয়ে সিটি করপোরেশন ও মেট্রোপলিটন পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানান। সরকারি কলেজে বাস দেওয়ার বিষয়ে তার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেওয়ার পরামর্শ দেন শিক্ষার্থীদের। বৈঠকে জেলা প্রশাসক নগরী ও বাইরে ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসানোর ঘোষণা দিয়ে জানান, পাশাপাশি অপ্রাপ্ত বয়স্ক কোনো চালক দেখলে তাদের ধরার পাশাপাশি গাড়ির মালিককে শাস্তির আওতায় আনা হবে। এছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে রোভার স্কাউটের মাধ্যমে যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা আনারও কথা জানান। বৈঠকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) হাবীবুর রহমানসহ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা উপস্থিত ছিলেন।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।