ডেস্ক নিউজ:

বিএনপির হাইকমান্ডকে ছয় দফা পরামর্শ দিয়েছেন দলটির তৃণমূল নেতারা। পরামর্শগুলো হলো—দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারামুক্তি আন্দোলন জোরদার, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি, জামায়াতের সঙ্গত্যাগ, জাতীয় ঐক্য ও নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবি এবং সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে কাজ শুরু করা। দলের তৃণমূলের এই নেতাদের মতে, একাদশ জাতীয় নির্বাচনের সময় আর বেশি বাকি নেই। এ কারণেই এই ছয়টি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে সিনিয়র নেতাদের এখন থেকেই কাজ শুরুর পরামর্শ দিয়েছেন তারা। শনিবার (৪ আগস্ট) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে হাইকমান্ডের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে তারা এই পরামর্শ দেন।

শনিবার মতবিনিময় সভার প্রথম সেশনে সিলেট ও চট্টগ্রাম, কুমিল্লা এবং দ্বিতীয় সেশনে ঢাকা, ফরিদপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের দলের সাংগঠনিক জেলার শতাধিক নেতা বক্তব্য রাখেন।

বৈঠকের আলোচনা ও সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা সিনিয়র নেতাদের কয়েকটি বিষয় নিয়ে পরামর্শ দিয়েছি। আমরা বলেছি, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। এরপর নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের আদায় করে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে সঙ্গে নিয়ে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। আর এসব দাবি আদায় করতে হলে আন্দোলনের কোনও বিকল্প নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি বৈঠকে বলেছি, যেসব জায়গায় দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব-কোন্দল লেগে রয়েছে, সেসব জায়গায় তা নিরসনের করতে হবে। এছাড়া যেসব জায়গায় কমিটি নেই বা আহ্বায়ক কমিটি আছে, সেসব জায়গায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছি।’

সিলেট বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন জীবন বলেন, ‘দলের পক্ষ থেকে সিলেট সিটি নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী জয়লাভ করায় আমাদের অভিনন্দন জানানো হয়েছে। এরপর আমি খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনকে জোরদার করাসহ জাতীয় ঐক্যের কথা বলেছি। জবাবে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিষয়টি সিরিয়াসলি নেওয়া হয়েছে।’

বৈঠক সূত্র জানায়, ২০ দলীয় জোটে জামায়াতে ইসলামীকে না রাখতে বিএনপির হাইকমান্ডকে পরামর্শ দিয়েছে সিলেট ও কক্সবাজার জেলা বিএনপির নেতারা। এই দুই জেলার নেতারা বিএনপির হাইকমান্ডের কাছ জোট থেকে জামায়াতকে বাদ দেওয়ার পক্ষে তাদের যুক্তি তুলে ধরনে। তারা বলেন, সিলেট সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপি প্রার্থী দেওয়ার পর জামায়াত প্রার্থী দিয়েছে। একই কাজ করেছে কক্সবাজার পৌরসভায় নির্বাচনে মেয়র পদেও। সেখানেও বিএনপি প্রার্থী দেওয়ার পর জামায়াত প্রার্থী দিয়েছে। তাই জামায়াতের সঙ্গত্যাগ করার বিষয়ে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে বিএনপির হাইকমান্ডকে।

এই প্রসঙ্গে বিএনপির সিলেট বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন আহমেদ মিলন বলেন, ‘সিলেট সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী দেওয়ার পরই জামায়াত প্রার্থী দিয়েছে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য ২০ দলীয় জোটের পক্ষ জামায়াতকে অনুরোধ করা হয়েছে। তারা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেনি। এসব কারণেই জামায়াতকে জোটে না রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।’

বিষয়টি নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কক্সবাজার জেলা বিএনপির এক নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী দেওয়ার পর জামায়াত প্রার্থী দিয়েছে। তারা আমাদের জোটসঙ্গী হওয়ার পরও যদি এই কাজ করে, তাহলে তাদের জোটে রেখে লাভ কী? তাই জামায়াতের বিষয়ে এখনই সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।’

বিএনপির মহাসচিব মির্জার ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আব্দুল মঈন খান, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ।