ডেস্ক নিউজ:

নিরাপত্তার অজুহাতে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের অঘোষিত ধর্মঘট চলছেই। ধর্মঘটের কারণে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। বাস না পেয়ে নগরবাসীকে গন্তব্যে যেতে রিকশা, অটোরিকশায় দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া গুনতে হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় কম হওয়ায় এসব পরিবহনও সহজে পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া আজ থেকে শুরু হওয়া ট্রাফিক সপ্তাহের কারণেও কাগজপত্র না থাকায় রাস্তায় থাকা যানবাহন আটকে রাখা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ২৯ জুলাই ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। এরপর বৃহস্পতিবার অঘোষিত ধর্মঘট শুরু করেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। এর আগের রাতে দূরপাল্লার যানবাহন চললেও শনিবার রাত থেকে তাও বন্ধ করে দেয়া হয়।

পরিবহন মালিকরা বলছেন, গাড়ি ভাঙচুরের কারণে নিরাপত্তা না থাকায় চালকরা বাস চালাতে চাচ্ছেন না।

রোববার সরকারি অফিস-আদালত খোলা থাকায় সকাল থেকে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় থাকলেও গণপরিবহন ছিল না। স্বল্পসংখ্যক বিআরটিসি বাস থাকলেও তাতে ওঠার কোনো উপায় ছিল না। বাধ্য হয়ে যাত্রীরা প্রাইভেটকার, বাইকে চেপে গন্তব্যে রওনা হন।

সকালে রাজধানীর, উত্তরা, বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর-১০ মগবাজারসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখে গেছে, এখন বাহন বলতে শুধু রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ভ্যানগাড়ি। তাও প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। ভাড়া নেয়া হচ্ছে চার/পাঁচগুণ বেশি। অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রাক, পিকআপ ভ্যানে করে যাচ্ছেন গন্তব্যে। তবে সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের রাস্তায় দেখা যায়নি।

নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের দুর্ভোগ অবর্ণনীয়
রোববার সকাল ৮টার দিকে যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগ, শনির আখড়া বাসস্ট্যান্ডে দেখা গেছে, হাজারও মানুষের ভিড়। শনির আখড়া থেকে যাত্রাবাড়ী মোড়ে ২০ টাকার ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। ভ্যানগাড়িতে জনপ্রতি ভাড়া ২০ টাকা। কিন্তু এ পথের বাস ভাড়া মাত্র ৫ টাকা।

রায়েরবাগ বাসস্ট্যান্ড থেকে সিএনজি অটোরিকশরায় জনপ্রতি ভাড়া নেয়া হচ্ছে ১৫০ টাকা। এই পথে বাসের ভাড়া ১৫ টাকা। কোনো উপায় না পেয়ে অনেকে হেঁটেই রওনা হন গন্তব্যে। অনেক মানুষকে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার দিয়ে হেঁটে গুলিস্তানের দিকে যেতে দেখা গেছে।

অপরদিকে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায়ও হাজারও মানুষকে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। যাত্রাবাড়ী থেকে গুলিস্তান যেতে রিকশা ভাড়া নেয়া হচ্ছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। অন্যসময় এই ভাড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকা। এখন থেকে ভ্যানগাড়িতে গুলিস্তান যেতে ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৫০ টাকা। এ পথের বাস ভাড়া ৫ থেকে ১০ টাকা।

রায়েরবাগের বাসিন্দা হাসান আল মাহমুদ বলেন, আমার অফিসে পল্টনে, গত কয়েক দিন ধরে ১৫ টাকার ভাড়া ২০০ টাকা খরচ করে গুলিস্তান যাচ্ছি। একদিন পুরো পথ হেঁটে এসেছি। এই দুর্ভোগ কবে কমবে। সরকার কি মানুষের এই কষ্ট দেখছে না। মানুষের দুর্ভোগ আর না বাড়িয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে মনে করি।

একই অবস্থ ছিল উত্তরা, বনানী সড়কের। উত্তরা থেকে মিরপুরগামী কয়েকটি বাস চলতে দেখা গেলেও ট্রাফিক সপ্তাহ চলার কারণে বিমানবন্দর পুলিশ ফাঁড়িতে আটকে দেয়া হয়। কাগজপত্র পরীক্ষার নামে যাত্রী নামিয়ে দেয়ার দৃশ্যও দেখা যায়। এছাড়া গণপরিবহন না পেয়ে পিকআপ ভ্যানে করে অনেককে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। কিন্তু উত্তর বাড্ডার লিংক রোডে বেশ কয়েকটি পিকআপ ভ্যান আটকে দেয় পুলিশ।

মিরপুর-১০ এর বাসিন্দা ব্যাংকার আবুল মোমেন চাকরি করেন মতিঝিলে। তিনি সকাল ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত চেষ্টা করেও কোনো পরিবহন পাননি। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, সরকারকে এ বিষয়ে অবশ্যই পদক্ষেপ নিতে হবে। এভাবে তো আর চলতে পারে না।

রাজধানীর কয়েকটি রাস্তায় বিআরটিসির বাস চললেও তা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। এ জন্য ঝুঁকি নিয়ে অনেককে বাদুড়ঝোলা হয়ে চলতে হয়েছে।

পরিবহন সংকটের এই সুযোগ রাজপথ দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে অসংখ্য রিকশা। আর এসুযোগ ভাড়াও বাড়িয়ে দিয়েছেন তারা। আর সিএনজি অটো থাকলেও ভাড়া হাকছেন তিনগুণ। পুরানা পল্টন থেকে উত্তর বাড্ডা পর্যন্ত সিএনজি ভাড়া মিটারে গেলে ২০০ টাকার মতো উঠলেও তারা চাচ্ছেন ৪০০ টাকা।

পল্টনের এক যাত্রী অভিযোগ করেন, পাঠাও ও উবারের মতো যানবাহনও বাড়তি ভাড়া চাইছে।

এদিকে গণপরিবহন সংকট থাকলেও জ্যাম থেকে নিস্তার পাচ্ছে না রাজধানীবাসী। সকালে টঙ্গী ব্রিজ থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত জ্যাম ছিল।