মোয়াজ্জেম হোসাইন সাকিল


প্রথমেই বলে রাখি- প্রতিটি আন্দোলনের সফল হওয়া ও ব্যর্থ হওয়ার পেছনে পুলিশ এবং সাংবাদিক তথা মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
শিশুদের আন্দোলন পুলিশের বিরুদ্ধে নয়। সরকারের বিরুদ্ধেও নয়। নিরাপদ সড়কের দাবিতে। তাহলে শিশুরা কেন পুলিশকে গালি দিচ্ছে? কোটি টাকার প্রশ্ন এটি।
দেশে যখনই কোন আন্দোলন হয়, সেটি দমাতে সরকার পুলিশকে ব্যবহার করে। শিশুদের দমাতেও প্রথমে পুলিশকে ব্যবহার করা হয়েছিল। এতে ক্ষেপে গেছে শিশুরা। তারা বুঝেছে প্রাথমিকভাবে পুলিশকে থামানো না গেলে অন্যান্য আন্দোলনের মতো এটিও পুলিশের লাঠিতে থেমে যাবে। তাই তারা “লাঠি একেবারে ভরে দেবো” থেকে শুরু করে আপডেট ভার্সনের গালিগুলো শুরু করেছে। পাশে পুলিশ দাড়িয়ে দাড়িয়ে এসব গালি হজম করেছে। দূর্নীতিতে নিমজ্জিত পুলিশ সদস্যরা এসব গালি গায়ে না মাখলেও সৎ এবং ভালো পুলিশ সদস্যদের ব্যক্তিত্বে খুবই লেগেছে গালিগুলো। আমি নিজেও বিব্রতকর অবস্থায়। এসব কি বলছে শিশুরা! আবার ভাবছি কতোটুকু পর্যায়ে গেলে এই ধরণের গালি দিতে বাধ্য হয় শিশুগুলো।
“আমরা এমন এক সময়ে বাস করছি, চেঁচিয়ে না বল্লে কারো কথা কেউ শোনছি না।” -মহাত্মা আহমদ ছফার এই উপলব্ধির চেয়েও ঢের ভালো বুঝার ক্ষমতা বাচ্চাদের। ব্যাপারটা যেন এমন এক পর্যায়ে এসে ঠেঁকেছে, গালি দিয়ে না বললে কারো কথা কেউ শুনছিনা। তাই বাচ্চারা তাদের কথা শুনাতে সময়োপযোগী পন্থাটাই বেছে নিয়েছে। এটা কাজও দিয়েছে।
এবার আসি আরো আপডেট ভার্সন নিয়ে।
শুরুতেই বলেছি, “প্রতিটি আন্দোলনের সফল হওয়া ও ব্যর্থ হওয়ার পেছনে পুলিশ এবং সাংবাদিক তথা মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।” এক্ষেত্রে যখনই মিডিয়ার ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হবে, ভবিষ্যতে হয়তো পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রদের গালি হবে সাংবাদিক তথা মিডিয়ার বিরুদ্ধে। “মিডিয়া কিসের …… ” এরকম। ছাত্রলীগ ব্যবহার হলে, ছাত্রলীগও গালি শুনবে।
প্রতিটি স্মার্টফোন এখন একেকটি শক্তিশালী টিভি স্টেশন। শিশুরা নিজেদের সংবাদ নিজেরাই সম্প্রচার করছে। তারা সাংবাদিক কিংবা মিডিয়ার উপর পুরোপুরি নির্ভরশীলতা দেখায়নি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমই ছিল এই আন্দোলনের শক্তি।
এখানে সাংবাদিক তথা মিডিয়া যদি সাংবাদিকতা চর্চা না করে, কারো লেজুড়বৃত্তি করে, তাহলে আপডেট ভার্সনের গালি শুনতে প্রস্তুত থাকতে হবে। আজকে সৎ এবং ভালো পুলিশ সদস্যদের যেমন ব্যক্তিত্বে লাগছে, তখন আমারও ব্যক্তিত্বে লাগবে।
পরিশেষে, কবি সরকার আমিনের ভাষায় যদি বলি, “ক্ষত ভালবাসে মাছি। মৌমাছি ভালবাসে ফুল।” তাহলে বলতে হয় আমাদের দেশে বিরোধী দল সবসময় রক্ত চায়। (আওয়ামীলীগ বিরোধী দলে গেলে তারাও একই)। আর সরকার চায় রাষ্ট্র সুন্দর করে চলুক। (সরকার গঠন করার পর রাষ্ট্র পরিচালনায় বিরোধী দলের অংশগ্রহণ থেকে বঞ্চিত করার কারণে আমাদের দেশে এরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।) শিশুদের আন্দোলনেও বিরোধী দল রক্ত চাইবে। এটাই স্বাভাবিক। রাজপথ রক্তে রঞ্জিত করতে না পারলেও আন্দোলনের কিছুটা হলেও সুফল ঘরে তুলতে মরিয়া তারা। তাই সরকারের উচিত পুলিশ, কিংবা ছাত্রলীগকে ব্যবহার না করে শিশুদের ক্ষোভ নিরসনে আরো এক পা এগিয়ে আসা। ইতোমধ্যে অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সরকার। ইতিবাচক সবগুলো পদক্ষেপই প্রসংশনীয়।
বিরোধী দলের উচিত হবে শিশুদের আন্দোলনে নাক না গলানো। ফায়দা লুটার জন্য জিহ্বা বের না করা। বিরোধী দল যখন সরকারে থাকে, তখনও দেশের একই অবস্থা থাকে। তারা এর কোন সমাধানে এগিয়ে আসেনি।
ইলিয়াছ কাঞ্চন ১৯৯৩ সাল থেকে “নিরাপদ সড়ক চাই” আন্দোলন করে আসছে। ২০০৫ সালে নিজেও সম্পৃক্ত হয়ে কাঞ্চন ভাইয়ের সাথে আজ অবধি কাজ করে যাচ্ছি। কোন সরকার আমাদের কিভাবে দেখেছে, তা মনে আছে। কেবল আওয়ামীলীগ সরকারই এটাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তাই এই সরকারের দৃষ্টিভঙ্গিকে নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়নে ইতিবাচক হিসেবেই মূল্যায়ন করি।
শিশুদের আন্দোলনেও সরকারের ভূমিকা পজেটিভ। তবে অনেকেই শিশুদের গালিগুলোকে নিয়ে নানান কথা বলেছেন। এক্ষেত্রে কিছু পুলিশ কিংবা সাংবাদিকরা বেশ এগিয়ে। এটা সরকার এবং পুলিশের লেজুড়বৃত্তি করার জন্যই শিশুদের গালিগুলোকে নিয়ে নেতিবাচক সব বিশ্লেষণ তুলে ধরেছেন। নিজেদের দোষগুলোর দিকে আমরা তাকাচ্ছিনা। একবার নিজের দিকে তাকাই। আমাদের আরো গালি শুনা বাকি আছে বলে মনে হবে।
আজকে যদি আমরা সংশোধন না হই। বিশেষ করে সাংবাদিকরা যদি সংশোধন না হই। তাহলে আপডেট ভার্সনের গালি সাংবাদিক তথা মিডিয়াকেই শুনতে হবে। “মিডিয়া….”।
আমি নিজেকে সৎ মনে করি, কারো লেজুড়বৃত্তি করিনা। তাই এই গালি আমার ব্যক্তিত্বে বেশি লাগবে। আপনার অপকর্মের জন্য আমি গালি শুনতে চাইনা।
“লাঠি একদম ভরে দেবো” এর মতো একদিন আমাদের লেজুড় সাংবাদিকতাও ভরে দেবে শিশুরা। তারা সাংবাদিকতার উপর আস্থা হারাবে। নিজস্ব সোর্স থেকে তারা সংবাদ সংগ্রহ করবে। সোস্যাল মিডিয়া এবং ইন্টারনেট তাদের সেই সুযোগ সৃষ্টি করে দেবে।
সাংবাদিকতার নীতি হারালে মিডিয়া অকার্যকর হয়ে যেতে বেশিদিন নেই।
আজকে যে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন শিশুরা করছে আমি অন্তত এক যুগ ধরে কাঞ্চন ভাইয়ের সাথে সেই আন্দোলন করে আসছি। কাজেই শিশুদের সাথে একসাথে আমিও নিরাপদ সড়ক চাই।