আবদুর রাজ্জাক,কক্সবাজার :
কক্সবাজার জেলার টেকনাফ নাজিরপাড়ার এজাহার মিয়ার ছেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভূক্ত জেলার শীর্ষ ইয়াবা গডফাদার ও ১৮ মামলার আসামী ভূট্টো বাহিনীর প্রধান নুরুল হক ভূট্টো (৩৫) ওরফে ইয়াবা ভুট্টো ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা জামিনে বেরিয়ে এসে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে সূত্রে জানা গেছে। সে এলাকায় এসে  স্হানীয় জনপ্রতিনিধিদের ভিজিএফ কার্ড বিতরণে প্রকাশ্যে বাধা প্রদান,নিরীহ লোকজনের ব্যবসা প্রতিষ্টানে হামলা ও লুটপাট, জমির জবর দখলসহ বিভিন্ন অপরাধ মূলক কর্মকান্ড চালিয়ে গেলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন তা দেখেও না দেখার ভান  করায় এলাকার সচেতন মহলের মাঝে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা টেকনাফের ইয়াবাপাড়া খ্যাত নাজিরপাড়ার এজাহার মিয়ার ছেলে। তবে মানুষের কাছে তিনি পরিচিত ‘ইয়াবা ভুট্টো’ হিসেবে। কেননা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভূক্ত একজন শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী এই নুরুল হক ভূট্টো (৩৫)। টেকনাফের ইয়াবাপাড়া খ্যাত নাজিরপাড়ার এজাহার মিয়ার ছেলে। তবে মানুষের কাছে তিনি পরিচিত ‘ইয়াবা ভুট্টো’ হিসেবে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ইয়াবা ব্যবসার সুবাদে আজ কোটিপতি ভুট্টো। তবে শুধু ইয়াবা ব্যবসাতেই তার অপরাধ সাম্রাজ্য সীমাবদ্ধ নয়। রীতিমতো নিজের নামে বাহিনী গড়ে তুলে অন্যের জমিদখল, লোকজনকে জিম্মি করে টাকা আদায়, ভাড়াটে সন্ত্রাসী লালন ও মানবপাচারসহ বিভিন্ন অপরাধকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন নির্বিঘ্নে। তার লালিত সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে এসব নিয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। হত্যা, অপহরণ, অস্ত্র, জমিদখল ও প্রতিপক্ষের লোকজনের ওপর সশস্ত্র হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগে টেকনাফ থানায় দেড় ডজনেরও অধিক মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসব মামলায় একাধিকবার জেলে গেলেও জামিনে বেরিয়ে এসে আবারও জড়িয়ে পড়েন পুরনো অপরাধ জগতে। প্রভাবশালীদের সঙ্গে তার রয়েছে গভীর সখ্যতা। ফলে দিনের পর দিন অপরাধের মাত্রা বেড়েই চলছে। বরাবরই দুর্ধর্ষ এ অপরাধী থেকে যাচ্ছে আইনের ধরাছোঁয়ার বাইরে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৫ সালে টেকনাফ সদরের শিলবুনিয়া পাড়ায় বসতবাড়িতে হামলা চালিয়ে প্রতিপক্ষের লোকজনকে কুপিয়ে জখম করে শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান নুরুল হক ভূট্টো। এছাড়া একই এলাকার কালু নামের এক ব্যক্তির বসতবাড়ি-মোটর ভাংচুর এবং হাতের এক আঙ্গুল কেটে নেন তিনি। সাবরাং এলাকার এক ব্যক্তির হাতের কব্জি কেটে নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে তার দ্বারা। একই এলাকার জাফর নামের দু’ব্যক্তির একজনের মাথার চুল ন্যাড়া করে দেয়া এবং আরেকজনের কান কেটে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে ভূট্টোর বিরুদ্ধে।
গত ৩ বছর আগে সেপ্টেম্বর মাসে কক্সবাজারে বেড়াতে আসা দুই পর্যটক অপহরণের শিকার হন ভূট্টোর সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে। ওইবছর ২৪ সেপ্টেম্বর ভূট্টোর আস্তানা থেকে উদ্ধার করা হয় দুই পর্যটক ঢাকার আশুলিয়ার হাসান আলীর ছেলে মোহাম্মদ আকিব ও সিরাজগঞ্জ জেলার শাহদাতপুর থানার তৈয়ুজাল মোল্লার ছেলে মোহাম্মদ মজনুকে। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় অপহরণ মামলা রয়েছে। এছাড়া ২০১৪ সালে তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে টেকনাফের দক্ষিণ জালিয়াপাড়ার মো. পুতুইন্যার ছেলে মো. ইসমাইলকে মাথায় ছুরিকাঘাত করে গুরুতর জখম করার ঘটনা ঘটে। ২০১৫ সালের ২১ মার্চ জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষকে হুমকির ঘটনায় তার বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় জিডি করা হয়।
টেকনাফ থানা সূত্র জানায়, গত ঈদের নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে ভূট্টো বাহিনীর সন্ত্রাসীদের ছোড়া এলোপাতাড়ি গুলিতে আহত হয় টেকনাফ সদর ইউনিয়নের নাজিরপাড়ার দুদু মিয়ার কন্যা নিহা মনি (৪)। এতে শিশুটির একটি চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঘটনায় টেকনাফ থানায় ১৯/৪২৫ নং মামলা, ২০ হাজারের বেশি ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় বিজিবির দায়ের করা ১৩১/৪২ নং মামলা করা হয়। নাজিরপাড়ার মৃত শেখ আহমদ সিকদারের ছেলে নজির আহমদকে হত্যার উদ্দ্যেশে ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে হামলার ঘটনায় ২০১৫ সালের ২১মে ৫৩/৩৬০ নং মামলা, অপহরণের অভিযোগে ২০১৩ সালের ৬ নভেম্বর ১৩নং মামলাসহ অসংখ্য মামলা ও অভিযোগ রয়েছে। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, নুরুল হক ভূট্টোর সন্ত্রাসী বাহিনীতে সহযোগীর ভূমিকা পালন করছে তার ভাগিনা নুরুল আবছার ও হেলাল উদ্দিনে। তাদের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি ২০১৬ সালে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের নাজিরপাড়ায় খবর সংগ্রহ করতে গেলে ভূট্টোর নেতৃত্বে হামলা চালিয়ে জেলার ৬ জন সাংবাদিককে কুপিয়ে জখম করে সন্ত্রাসীরা।এদিন দুপুরে নাজিরপাড়ার পূর্ব মাঠ এলাকায় বিজিবি অভিযান চালিয়ে ১ লাখ ২০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করে । সর্বশেষ গত ৯ জুলাই সন্ধ্যায় টেকনাফ সদর ইউনিয়নের চকবাজারে অবস্হিত টেকনাফ সদর ইউপি মেম্বার ও জনপ্রিয় ফুটবল খেলোয়াড় এনামুল হক এনাম মেম্বারের ব্যবসায়িক প্রতিষ্টানে হামলা, ভাংচুর ও ব্যাপক লুটপাট চালায়। এই ঘটনায় ৩ জন গুরুতর আহত হয়েছে। আহতরা হলেন নাজিরপাড়া গ্রামের হাজী রফিকুল ইসলামের পুত্র ছৈয়দুল্লাহ (৩৭), শীলবনিয়াপাড়ার মৃত আলী আহমদের পুত্র মীর কাসেম (৪৫), নাজিরপাড়া গ্রামের মৃত নজির আহমদের পুত্র রেজাউল করিম (২৮)। আহতদের মধ্যে ছৈয়দুল্লাহর অবস্থা গুরুতর। খবর পেয়ে টেকনাফ মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এই ব্যাপারে টেকনাফ সদর ইউপির ৮নং ওয়ার্ডের এনামুল হক এনাম মেম্বার বলেন ‘৯ জুলাই সকাল ১১টায় বড় হাবিরপাড়া সরকারী প্রাইমারী স্কুলে উন্নয়ন বিষয়ক একটি অনুষ্টানে যোগদান করেছিলাম। সেখানে শিক্ষার্থী-শিক্ষক-অভিভাবক সমাবেশে স্কুলের উন্নয়নের পাশাপাশি মাদকের কুফল ও ভয়াবহতা সম্পর্কে বক্তব্য রাখি। এ অনুষ্টানে শিক্ষা অফিসারও উপস্থিত ছিলেন। বক্তব্যে আমি কারও নাম উল্লেখ করিনি। কিন্ত সন্ধ্যায় কুখ্যাত ইয়াবা গডফাদার বহু মামলার পলাতক আসামী, র‌্যাব ও সাংবাদিকদের উপর হামলাকারী নুরুল হক ভুট্রোর নেতৃত্বে ভুট্রো বাহিনীর কামাল প্রকাশ বুলেট কামাল, আফসার প্রকাশ খোকন, ডাকাত হেলাল, কুপা আফসারসহ আরও কয়েকজন হঠাৎ আমার ব্যবসায়িক প্রতিষ্টান মেসার্স আল-মক্কা ট্রেডার্স, এনাম স্টোরসহ ৩টি দোকানে হামলা চালায়। এসময় তারা দোকানে ভাংচুর, লুটপাট ও মারধর করে। স্কুলের অনুষ্টানে মাদকের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখায় ক্ষুদ্ধ হয়ে হামলা করেছে বলে আমার ধারণা। আহতদের মধ্যে ছৈয়দুল্লাহর হদিস পাওয়া যাচ্ছেনা। মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান সত্বেও বহুল আলোচিত ভুট্রো প্রকাশ্যে এলাকায় ঘুরছে’।
এব্যাপারে টেকনাফ থানার অফিসার ইনচার্জ রনজিত কুমার বড়ুয়া ব্যবসা প্রতিষ্টানে হামলার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন,স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভূক্ত শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ীদের অচিরেই গ্রেফতার করা হবে।