এম.মনছুর আলম, চকরিয়া:

মাতামুহুরী নদী কেড়ে নিলো বাবা-মা’র স্বপ্ন। প্রিয় সন্তানকে ঘিরে তাদের নানা রঙ্গিন স্বপ্ন ছিল। ছেলে একদিন বড় হবে, সুশিক্ষায় শিক্ষিত হবে।উচ্চ শিক্ষার জীবন শেষ করে তাদের বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করবে সে আশাতেই বুক বেঁধেছিল প্রতিটি ছাত্রের পরিবার। সন্তানকে জড়িয়ে বাবা-মা’র স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেলো । কিন্তু সৃষ্টিকর্তার নিয়তির একি করুণ পরিণতি, স্কুল জীবন থেকে বিদায় দেওয়ার আগেই এ পৃথিবী থেকে  বিদায় নিতে হলো দুরন্তপনা মনা একে একে পাঁচ  শিক্ষার্থীকে। হঠাৎ একটি দূর্ঘটনায় সবাইকে কাঁদিয়ে এভাবে নীরবে চলে যাওয়া কেউ মেনে নিতে পারছে না।

গত ১৪ জুলাই চকরিয়ায়  মাতামুহুরী নদীতে সদ্য জেগে উঠা বালুর চরে স্কুল বন্ধুদের সাথে ফুটবল খেলে নদীতে গোসল করতে গিয়ে চোরাবালিতে আটকে নিহত হয় চকরিয়া গ্রামার স্কুলের পাঁচ ছাত্র সাঈদ জাওয়াদ অরভি, আমিরুল হোছাইন এমশাদ ও তার আদরের প্রিয় ছোট ভাই ৮ম শ্রেণীতে পড়ুয়া আফতাব হোছাইন মেহরাব, দশম শ্রেণী পড়ুয়া তূর্ণ ভট্টাচার্য্য ও একই শ্রেণীর ফারহান বিন শওকত।ওইদিন স্থানীয় প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, ডুবুরীদল ও স্থানীয় লোকজন বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে মাতামুহুরী নদী থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করে। নিহত হওয়া ৫ মেধাবী ছাত্রের মধ্যে চার ছাত্র ২০১৯ সালে চকরিয়া গ্রামার স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। চারজনই ছিল বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যায়নরত। তৎমধ্যে মেহেরাব ছিল অষ্টম শ্রেণীতে পড়ুয়া ছাত্র। সবাইকে কাঁদিয়ে নিরবে চলে যাওয়ার মৃত্যুতে শোকাহত পরিবার চলছে স্বজনদের আর্তনাদ।

পুরো উপজেলা জুড়ে মর্মান্তিক এ নিহতের ঘটনায় এখনো শোকে কাতর। নিহত সন্তানদের হারিয়ে পরিবারের স্বজন ও স্কুলের শিক্ষকরা এখনো বাকরুদ্ধ। একই স্কুলের পাঁচ ছাত্র অকালে চলে যাওয়ার ঘটনায় ব্যাথায় ব্যাথিত প্রিয় সহপাঠীরা।অকালে প্রিয় সন্তান হারিয়ে অভিভাবকদের ঘটেছে স্বপ্নের মৃত্যু। মেধাবী সন্তানদের হারিয়ে তাদের মা-বাবার চোখের পানি যেন ফুরায় না। নিহত ছাত্রদের বাড়িতে তাদের ছেলের স্মৃতিচারণা করছেন আর কাঁদছেন।

সোমবার রাত ৯টার দিকে চকরিয়া পৌরশহরে ৮নম্বর ওয়ার্ডের ষ্টেশন পাড়া এলাকায় মাতামুহুরী নদীতে নিহত এমশাদ ও মেহেরাবের পরিবারকে সমবেদনা জানাতে ছুটে আসেন জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেন।এ সময় উপস্থিত ছিলেন, চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) খোন্দকার মো: ইখতিয়ার উদ্দিন আরাফাত, চকরিয়া পৌরসভার ৮নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মুজিবুল হক মুজিব, পৌরসভা ২নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজাউল করিমসহ বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ।

জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেন এ সময় মাতামুহুরী নদীতে নিহত হওয়া এমশাদ ও মেহেরাবের পিতা আলহাজ্ব আনোয়ার হোছাইন ও তার সহধর্মীনিসহ পরিবারের স্বজনদের সান্তনা দিয়ে সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।এ ছাড়াও নিহত হওয়া অপর ছাত্রদের পরিবার সদস্যদেরও খোঁজ খবর নেন।

তিনি সমবদনা জানাতে গিয়ে বলেন, সকল মৃত্যুই আমাদের কাঁদায়। সেই মৃত্যু যদি হয় পানিতে ডুবে দুর্ঘটনায় তবে তা আমাদের আরও বেশি ব্যথিত করে। উপজেলার প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ে ছাত্রদেরকে ক্রীড়া প্রশিক্ষক কর্তৃক সাঁতার শেখানোর ব্যবস্থা করা হবে।

এছাড়াও চকরিয়া সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠটি ছাত্রদের খেলাধুলা জন্য সংস্কার, পুকুর সংস্করণ করে সাঁতার শেখানোর উপযোগী করার ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নির্দেশ দেন।নিহত ছাত্রদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ করার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে তিনি জানান।