প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন
গত বছরের ফেব্রুয়ারীর কথা। দীর্ঘ তিন যুগ পরে আবার ফিরলাম সঙ্গীত জগতে। তবে গীতিকার নয়, গায়ক হয়ে। ঢাকা এবং চট্টগ্রামে সাফল্যের সাথে আমার অডিও এলবাম প্রকাশনা শেষ করেছি। এর আগে দেশের বাইরে কাতার, লন্ডন ও অস্ট্রেলিয়ার সিডনী শহরেও প্রকাশনা উৎসব করেছি। কিন্তু এতো কিছুর পরও কেনো জানিনা, প্রাপ্তির রং ফিকে মনে হচ্ছিল। কোথায় জানি একটু অপূর্ণতা রয়ে গেছে।
কক্সবাজারের প্রাচীনতম সঙ্গীতবিদ্যাপীঠ সঙ্গীতায়তন-এ মরহুম ওস্তাদ আবু বকর স্যারের কাছেই হয় আমার সত্যিকারের সঙ্গীত শিক্ষার হাতেখড়ি। সময় অসময়ে স্যারের বাড়ী গিয়ে বারান্দায় রাখা হারমোনিয়াম বাজাতাম। স্যার কখনোই বিরক্ত হতেন না। মাঝে মধ্যে ভেতর থেকে এসে উৎসাহ দিয়ে বলতেন, কিছু ভুল-ত্রুটি আছে, তবে তুমি খুব ভালো গাইছো। শুনে ভীষণ উজ্জ্বীবিত হতাম। মনে পড়ে, স্বাধীনতার পর পর কক্সবাজার হাই স্কুলের এসেম্বলিতে গাইবার জন্য জাতীয় সঙ্গীতের ট্রেনিং আমরা তাঁর কাছেই নিয়েছিলাম।
হৃদয়ে প্রোথিত শিকড়ের টান বড়ই গভীর। মাতৃভ’মি থেকে আমরা যতই দূরে থাকিনা কেনো, এই টান উপেক্ষা করা যায়না। বিশেষ করে জীবনের পড়ন্ত বেলায় হারানো দিনের নস্টালজিক স্মৃতি আমাদের ব্যাকুল করে তোলে। সিদ্ধান্ত নিলাম, কক্সবাজারে আরেকটি এলবাম প্রকাশনা উৎসবের আয়োজন করবো, তা হবে স্যারের এই সঙ্গীতবিদ্যাপীঠ-এর মিলনায়তনে। আর সেই জন্যেই শৈশবের বেলাভ’মি কক্সবাজারে ফিরে আসা।
কক্সবাজার হাই স্কুলের সহপাঠি বন্ধু মঞ্জুরুল হাসানকে আমার এই স্বপ্নপূরণের কথাটা জানাতেই বললো, “ বন্ধু, টেনশান নিওনা। চলে এসো, বাকি সব আমরাই করবো”। কয়েক যুগ পর সঙ্গীতায়তনে স্কুলের বন্ধুদের সাথে আড্ডায় বসে মনে হচ্ছিল যেনো স্বপ্নের ঘোরে আছি। এতোদিন পরও আমার জন্য শৈশবের বন্ধুদের অদম্য ভালোবাসা দেখে খুবই আবেগপ্রবন হয়ে পড়েছিলাম। সে এক ভিন্ন অনুভূতি। যা বলে বোঝাতে পারবোনা।
এর মধ্যে টেলিফোনে কথা হল বন্ধু মুজিবের সাথে। ও বললো, “দোস্ত, আমি এক্ষুণি চলে আসছি”। ভাবছিলাম, মুজিব হল রাজনীতিবিদ, খুব ব্যস্ত মানুষ। চাইলেই কি হুট করে আসতে পারবে ? কিন্তু আমাকে চম্কে দিয়ে কুড়ি মিনিটের মধ্যেই আড্ডায় হাজির হল মুজিব। এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো, “দু’টি অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা। তুমি এসেছো, অথচ মুজিব আসবেনা, তা কি হয় ? ওদের বুঝিয়ে সুজিয়ে আসতে একটু দেরী হয়ে গেলো”। এই হচ্ছে আমার বাল্যবন্ধু মুজিব। সবাই ভালোবেসে ডাকে মুজিব চেয়ারম্যান বলে।
মুজিব এখন একজন জননন্দিত নেতা, কক্সবাজার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এতো ব্যস্ততার মধ্যেও মুজিব, এলবাম প্রকাশনা থেকে শুরু করে প্রায় প্রতিটি অনুষ্ঠানেই আমার সাথে ছিল। খুব অল্প সময়ের মধ্যে লক্ষ্য করলাম সাধারণ মানুষের কাছে মুজিবের তুমুল জনপ্রিয়তা। কক্সবাজারের মাটি ও মানুষের খুব কাছাকাছি হচ্ছে মুজিবের বসবাস। সে নিজেও একজন সাদা মনের মানুষ, তাই মুজিব সাধারণ মানুষের প্রিয় হবে, এটাইতো স্বাভাবিক !
তবে কক্সবাজারের ভাগ্যাকাশে মুজিবের উত্থান একদিনে হয়নি। সেই ছাত্রজীবন থেকে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির পথে ধরে ধীরে ধীরে মানুষের আস্থা অর্জন করেছে মুজিব। বাল্যকাল থেকেই তার মধ্যে সাংগঠনিক দক্ষতা ও নেতৃত্বের অসাধারণ গুণাবলি আমরা লক্ষ্য করেছি। ১৯৮০ সালে কক্সবাজার সরকারি কলেজে অধ্যয়নকালে কলেজ ছাত্র সংসদে ছাত্রলীগের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক হিসাবে ছাত্র নেতৃত্বে আসে মুজিব। ১৯৯৫ সাল থেকে কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসাবে দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালন করে। নব্বই দশকের শেষের দিক থেকে কক্সবাজার সদর ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদের পরপর নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসাবে একাধারে ১৪ বছর দায়িত্ব পালন করে কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র পদে নির্বাচনে অংশ নিতে মুজিব স্বেচ্ছায় ইউপি চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে। ২০১৬ সালে মুজিব দলীয় কাউন্সিল অধিবেশনে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়। যা এখনও চলমান রয়েছে।
পৌরসভা নির্বাচনঃ কে হবেন নগরপিতা ?
পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।