নিজস্ব প্রতিবেদক:
রামু উপজেলার চাঞ্চল্যকর গৃহবধূ রোজিনা আক্তার হত্যা মামলার আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরছে। তারা বাড়ি ও এলাকায় অবস্থান করে প্রকাশ্যে চলাফেরাসহ স্বাভাবিক জীবন যাপন করছে। প্রকাশ্যে ঘুরলেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না। এতে বেপরোয়া হয়ে উল্টো মামলা তুলে নিতে রোজিনার দিনমজুর বাবাসহ পরিবারের লোকজনকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। বুধবার (১১ জুলাই) কক্সবাজার শহরের এক হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে রোজিনার পিতা ও মামলার বাদি জাফর আলম এই অভিযোগ করেন। সেখানে আরো উপস্থিত ছিলেন রোজিনার মা হাজেরা বেগম, ছোটভাই মো. শাহজাহান ও রমিজ উদ্দীন। এসময় মা হাজেরা বেগম কান্নায় ভেঙে পড়েন।
জাফর আলম লিখিত বক্তব্যে আরো বলেন, ২০১৭ সালে জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের নূরপাড়া রাবার বাগান এলাকায় মৃত আবদুল ওয়াহিদের পুত্র ইয়াবা ব্যবসায়ী ও মাদকাসক্ত জাহাঙ্গীর আলম মিঠু রোজিনা আকতারকে তুলে নিয়ে গিয়ে জোর করে বিয়ে করেন। জাফর আলম দরিদ্র হওয়ায় তাতে কোনো বাধা দিতে না পেরে সামাজিকভাবে মেনে নেন। কিন্তু বিয়ের কিছু দিন যেতেই ইয়াবা বিক্রির পুঁজির জন্য রোজিনাকে বাপের কাছ থেকে টাকা এনে দিতে চাপ দেয়। টাকা এনে না দেয়ায় রোজিনার উপর নির্যাতন শুরু করে। এভাবে দীর্ঘ দিন ধারাবাহিকভাবে ব্যাপক মারধরসহ নানাভাবে নির্যাতন করা হয় রোজিনাকে। এমনকি জাহাঙ্গীর আলম মিঠুর ভাইয়েরাও মারধর করতো।
এর অংশ হিসেবে গত ৪ জুলাই দুপুরে স্বামী জাহাঙ্গীর আলম মিঠু আট মাসের অন্ত:স্বত্তা রোজিনাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মারাত্মকভাবে আঘাত করে। এসময় জাহাঙ্গীরের ভাই শহিদুল আলম, লোকমান হাকিম, মো. আয়াছ ও জানে আলম ভুট্টোও মারধর করে। এতে রোজিনা নির্মমভাবে মৃত্যু বরণ করে। মৃত্যুর পর তার লাশ বাড়ির অদূরে পাহাড়ের ঢালুতে ফেলে দেয়।
তিনি জানান, রোজিনার হত্যার ঘটনায় তিনি বাদি হয়ে জাহাঙ্গীর আলম মিঠুকে প্রধান আসামী করে ও ভাইদের আসামী করে রামু থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। হত্যার সাত দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। এমনকি আসামী ধরতে অভিযানও পরিচালনা করেনি। এতে বেপরোয়া হয়ে জাহাঙ্গীর আলম মিঠুসহ সব আসামী প্রকাশ্যে ঘুরছে এবং বাড়িতেই অবস্থান করছে। এই খবর মামলার বাদি পুলিশকে জানালেও পুলিশ অভিযানে যায়নি।
অন্যদিকে পুলিশের অভিযান না হওয়ায় আসামীরা বীরদর্পে চলাফেরা করেও ক্ষান্ত হচ্ছে না। উল্টো মামলা তুলে নিতে বাদিসহ রোজিনার পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি দিচ্ছে। আরো দু’জনকে হত্যা করা হবে হুমকি দিচ্ছে। এই অবস্থায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে রোজিনার পরিবার। তাই তারা জাহাঙ্গীর আলম মিঠুসহ অন্য আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জন্য পুেিলশ কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রোজিনার খুনি স্বামী জাহাঙ্গীর আলম মিঠু একজন ইয়াবা ব্যবসায়ী ও ইয়াবাসহ মাদকাসক্ত। তার বিরুদ্ধে তিনটি ইয়াবার মামলা রয়েছে। অন্যদিকে রোজিনা ছিলো তার তৃতীয় স্ত্রী। আগে দু’স্ত্রীও তার নির্মম নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে চলে গেছে। দ্বিতীয় স্ত্রীর দায়ের করা নির্যাতনের মামলার ফেরারী আসামী জাহাঙ্গীর আলম মিঠু। তারপরও রহস্যজনকভাবে সে এলাকায় বীরদর্পে থেকে ইয়াবা ব্যবসার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হয়ে রামু থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি মিজানুর রহমান বলেন, ‘রোজিনা হত্যা মামলাটি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখছি। আসামীদের ধরবে আমরা তৎপর রয়েছি। সুযোগ বুঝে অভিযান চালানো হবে।’
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।