এম.জিয়াবুল হক,চকরিয়া:
চকরিয়া থানা পুলিশের অভিযানে আবারও গ্রেফতার হয়েছেন উপকূলীয় অঞ্চলের সেই আলোচিত সালাহ উদ্দিন ওরফে টাইগার সালাহ উদ্দিন। একটি মারামারি মামলায় পরোয়ানা থাকাবস্থায় বুধবার রাতে থানার এসআই জুয়েল চৌধুরীসহ পুলিশের একটিদল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে উপজেলার ইলিশিয়া বাজার থেকে তাকে গ্রেফতার করেছে। ২০১৭ সালের ৮ মে পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার হয়েছিলেন সালাহউদ্দিন।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, চকরিয়া উপজেলার উপকূলীয় পশ্চিম বড় ভেওলা ইউনিয়নের দরবেশ কাটা এলাকার এলাকার মৃত বশির আহমদের ছেলে সালাহ উদ্দিন একসময় ছাত্রদলের রাজনীতি করতেন। বিএনপি জোট সরকার আমলে উপজেলার উপকুলীয় অঞ্চলে সালাহউদ্দিন ছিলেন জনগনের মাঝে আতঙ্কের নাম। বর্তমানে ভোল্ড পাল্টিয়ে বাস্তুহারালীগের আহবায়ক পরিচয়ে সালাহউদ্দিন আগের মতো এলাকায় আওয়ামীলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে তার নিজস্ব গড়ে তোলা বাহিনী দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় একের পর এক অপরাধ মূলক কর্মকান্ড সংগঠিত করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগীরা।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ মতে, সালাহউদ্দিন ও তাঁর বাহিনীর কাছে এলাকার ৪ হাজার মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক, ব্যবসায়ী, চিংড়ী চাষী থেকে শুরু করে নানা পেশার মানুষ সালাহউদ্দিনের অত্যাচার চাঁদাবাজির কারণে অসহায় হয়ে পড়েছে।
অভিযোগে জানা যায়, তার অবৈধ কর্মকান্ডের প্রতিবাদ জানালে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক পশ্চিম বড়ভেওলা এলাকার সর্বজনশ্রদ্ধেয় মুরব্বি মুক্তিযুদ্ধা মুহিবুল্লাহকে মোটরসাইকেল চাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে আলোচিত সাবেক ছাত্রদল ও যুবদল নেতা বর্তমানে আওয়ামী বাস্তুহারালীগের আহবায়ক দাবীদার টাইগার সালাহ উদ্দিন।
স্থানীয় এলাকাবাসী ও ভোক্তভোগীরা জানায়, ছাত্র রাজনীতির শুরুতে ছাত্রদলের হাতে খড়ি দিয়ে সালাহউদ্দিনের রাজনীতির পথচলা শুরু। ছাত্র থাকাবস্থায় দরবেশ কাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রদলের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। পরে একাধারে পশ্চিম বড় ভেওলা ইউনিয়নের ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। এবং বিগত ইউনিয়ন যুবদলের বেলাল-জকরিয়ার কমিটিতে সিনিয়র সদস্য পদেও অধিষ্টিত ছিলেন। ২০১৩ সালে ঘোষিত মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা যুবদলের কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘ পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন করেন।
উপজেলা যুবদলের দায়িত্ব থাকা কালীন টাইগার সালাহউদ্দিন ২০দলীয় জোটের ডাকা জ্বালা-পোড়াও আন্দোলন সংগ্রামে উপকূলীয় এলাকায় বদরখালী -মহেশখালীর সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে হরতাল, অবরোধ ও বিস্ফোরকের মতো নানা বড় ধরণের ঘটনার বিএনপির শীর্ষ ক্যাডার হিসেবে কাজ করেন।
এছাড়াও সালাহউদ্দিন ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি থাকাকালীন ২০০৯সালে ৪আগষ্ট এলাকায় ত্যাগী এক আওয়ামীলীগ পরিবারের জমি জবর-দখল করতে গিয়ে জনতার সামনে অবৈধ বন্দুক ও ধারালো কিরিচ দিয়ে প্রকাশ্যে দিবালোকে গুলি করে এবং কুপিয়ে গুরুতর জখম করেন। ওই ঘটনায় সালাহউদ্দিন গুলি করার সময় স্কুলে যাওয়ার পথে এক ছাত্রীর গায়ে লেগে গেলেও সে কোনমতে প্রাণে বেচেঁ যায়। যার মামলা নং-২৫৬/০৯। এছাড়া যুবদলের নেতৃত্বে থাকাকালীন দরবেশ কাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাজ্জাদকে তুচ্চ বিষয় নিয়ে জনসম্মুখে মারধর এবং টেনে হিছড়ে লাঞ্ছিত করেন। একের পর এক নানা ধরণের ঘটনা ঘটিয়ে টাইগার সালাহউদ্দিন নিজেকে এলাকায় শীর্ষ ক্যাডার হিসেবে প্রমান করেন। তার বিরুদ্ধে চাদাঁদাবী, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও ভুমিদস্যুতার অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, টাইগার সালাহউদ্দিন ২০১৫সালে আওয়ামীলীগ সরকারের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী বিএনপি-জামায়াতের জ্বালা পোড়াও আন্দোলনে চকরিয়া উপজেলার নলবিলা চেকপোষ্ট এলাকার চট্রগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে বিস্ফোরকের ঘটনায় জড়িত থাকায় বিস্ফোরক দ্রব্য (বিশেষ ক্ষমতা আইন) পুলিশের মামলায় এজাহার নামীয় তালিকাভুক্ত ১৯নম্বর আসামী হিসেবে অন্তভূক্ত রয়েছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, বর্তমান সালাহউদ্দিন আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে ভোল্ড পাল্টিয়ে বাস্তুহারা লীগের মাতামুহরী উপজেলা কমিটির সভাপতিও বনে যান। সেই সুযোগে তিনি আওয়ামীলীগে প্রভাব বিস্তার করে এলাকায় একের পর এক অপরাধ মূলক কর্মকান্ড সংগঠিত করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগীরা।
চকরিয়া থানার ওসি বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, টাইগার সালাহউদ্দিনের রিুদ্ধে পুলিশ এসল্ট, অস্ত্র, ডাকাতি, চাঁদাবাজী ও প্রতারণাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। সর্বশেষ একটি মারামারি মামলায় পরোয়ানা থাকাবস্থায় গতকাল বুধবার রাতে থানার এসআই জুয়েল চৌধুরীসহ পুলিশের একটিদল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে উপজেলার ইলিশিয়া বাজার থেকে তাকে গ্রেফতার করেছে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।