নিউ ইয়র্ক থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে, কবে নাগাদ রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা যাবে, তা গত বৃহস্পতিবার রাতে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জানতে চেয়েছিলেন সাংবাদিকরা। প্রত্যাবাসনের জন্য রাখাইন রাজ্যে কবে পরিবেশ সৃষ্টি হবে, তাও জানতে চাওয়া হয়েছিল। জবাবে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফান ডুজারিক বলেছেন, ‘ফিরে যাওয়ার বিষয়টি অবশ্যই রোহিঙ্গাদের ব্যক্তিগত ইচ্ছার ওপর নির্ভর করছে। লোকজনের এমনভাবে ফেরার সুযোগ থাকা উচিত, যাতে তাদের অধিকারকে সম্মান জানানো হয় এবং একই সঙ্গে তারা নিজেদের বাড়িঘরে গিয়ে ওঠার সুযোগ পায়।’ তিনি বলেন, ‘দুই সরকার (বাংলাদেশ ও মিয়ানমার) এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে একটি কাঠামো সৃষ্টির বিষয়ে আলোচনা চলছে। তবে এই মুহূর্তে আমার আর নতুন কিছু ঘোষণা করার নেই।’

কূটনৈতিক সূত্রগুলোর মতে, জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র ভুল কিছু বলেননি। রোহিঙ্গাদের জোর করে ফেরত পাঠানোর কোনো সুযোগ নেই বাংলাদেশ বা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের। ফিরে যাওয়ার বিষয়টি তাদের ইচ্ছার ওপরই নির্ভর করছে। এ কারণেই মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তিতে ‘প্রত্যাবাসন’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কূটনীতিক কালের কণ্ঠকে বলেন, গত ২৫ আগস্ট থেকে আট লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে। এর আগে বিভিন্ন সময়ে আসা কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। তাদের সবাই ফেরত যাবে, এমনটি কেউ মনে করছে না। তিনি বলেন, মিয়ানমারও গত নভেম্বর মাসে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তির সময় বলেছে যে রোহিঙ্গারা অপরাধের সঙ্গে জড়িত তাদের তারা ফেরত নেবে না।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ এরই মধ্যে প্রায় আট হাজার রোহিঙ্গার যে তালিকা মিয়ানমারের কাছে পাঠিয়েছে তাদেরও ফেরত যাওয়ার বিষয়ে মতামত নেওয়া হয়নি। ওই তালিকা থেকে মিয়ানমার যাদের পরিচয় যাচাই করে রাখাইনের বাসিন্দা ছিল বলে নিশ্চিত করবে তারা ফিরতে চাইলে ফেরার সুযোগ থাকবে।

জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের এখনই মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর কথা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বলছে না। বরং ভবিষ্যতে কোনো দিন ফেরার মতো অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হলে তারা যদি নিজ বসতভূমিতে ফিরতে চায় এবং সে সময় যাতে ফিরতে পারে, সেই সুযোগ রাখা হচ্ছে। ঢাকায় সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারা বলছেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার মতো অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির ক্ষেত্রে বড় উদ্যোগ হতে পারে সেখানে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা। যে কারণে রোহিঙ্গারা রাখাইন রাজ্য ছেড়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে সেগুলোর সুরাহা হতে হবে। কয়েক দশকের পুরনো সমস্যা খুব সহজে বা রাতারাতি সম্ভব হবে বলে তারা মনে করেন না। ওই কর্মকর্তারা বলেন, রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফিরে যেতে উদ্বুদ্ধ করার জন্য সেখানে এমন পরিবেশ এবং জীবিকার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে, যা কক্সবাজারের আশ্রয় শিবিরের চেয়ে ভালো। এটি ছাড়া রোহিঙ্গাদের ফেরানো কঠিন হবে।

ঢাকাস্থ কূটনৈতিক সূত্রে জানা যায়, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে গত নভেম্বর মাসে বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে যে চুক্তি করেছে তাতে গত বছরের আগস্ট থেকে আসা ব্যক্তিদের ফেরানোকেই প্রথম লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। সেখানে কৌশলে বলা হয়েছে, গত বছরের আগস্ট থেকে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পর তারও আগে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বিবেচনায় নেওয়া হবে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, গত বছরের আগস্ট থেকে আসা রোহিঙ্গাদের পরিচয় যাচাইয়ের ক্ষেত্রে নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। এটি সমাধান হতে হতে আগস্টেরও আগে আসা রোহিঙ্গাদের পরিচয় যাচাই করা যে কত কঠিন হবে, তা অনুমান করাও কষ্টকর। কর্মকর্তারা বলেন, বাংলাদেশ এ সংকট দ্রুত সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এর বিকল্পও বাংলাদেশের নেই। তবে কবে নাগাদ এ সংকট সমাধান হবে বা আদৌ হবে কি না, সে বিষয়ে কারো কোনো ধারণা নেই।