এম আবু হেনা সাগর,ঈদগাঁও :

দখল আর দূষণের কবলে পড়েছে ঈদগাঁওর গ্রামাঞ্চলের ছড়া কিংবা খাল। সে সাথে খালের উপর পাকা দালান ও দোকান পাঠ নির্মাণের হিড়িক অব্যাহত রয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থার দাবী জানিয়েছে এলাকাবাসী। এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে খালের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে বলেও শংকা প্রকাশ করছেন লোকজন। এদেশ নদী-মাতৃক দেশ। কথায় আছে মাছে-ভাতে বাঙালী। আর সে মাছ জোগান দিতে গ্রাম-গঞ্জের বুক চিরে প্রবাহিত হওয়া ছোট-বড় নদী, খাল-বিল। তবে গ্রাম্য প্রবীণদের মতে, এ সমস্ত নদী-খাল দিয়ে এক সময় পাল তোলা নৌকা চলাচল করত। কিন্তু সময় ও সুযোগে কালো থাবায় জেলা সদরের অধিকাংশ নদীর অস্তিত্ব বিলুপ্তির পথে। এমনকি চলছে একের পর এক নদী ও খাল দখলের মহোৎসব। কালের পরিক্রমায় সেই নদীর বুকে এখন পাকা-আধাপাকা দালানের মহাসমারোহ। অনেক ক্ষেত্রে দেখে বোঝার উপায় নেই যে, এটি এক সময় নদী বা খাল ছিল। একের পর এক দখলের কারণে এসব খাল এখন নিজস্ব স্বকীয়তা হারিয়ে মরা খাল উপাধি লাভ করেছে। অধিকাংশ নদী-খাল দখল করে দূ-তীর ভরাট করে বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ চলছে। যেন দেখার কেউ নেই। এ অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যত প্রজন্ম জানতেই পারবে না এখানে একটি নদী বা খাল ছিল। দেখা যায়, ঈদগাঁও মেহের ঘোনা জলনাসী যেটি উত্তর, মধ্যম ও দক্ষিন মাইজ পাড়া হয়ে চৌফলদন্ডীর বুক চিরে মহেশখালী চ্যানেল দিয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিলিত হয়েছে। এলাকার মুরব্বীদের মতে, দীর্ঘ বছর পূর্বেও এসব খালের বুকে মাল বোঝাই বড় বড় পাল তোলা নৌকা চলাচল করত। এক সময় এসব খালে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। এখন খাল বেদখল, পানি ও মাছ শুন্য। ক্ষীণ ধারা বয়ে যাওয়া খালের দু-ধারে এখন গড়া দোকান পাট ও পাকা দালান। প্রাপ্ত তথ্য মতে, ঈদগাঁওর বৃহত্তর মাইজ পাড়ার খালটি সম্পূর্ণ ভরাট হয়ে গেছে। কেউ করেছে খালের পাশঘেঁষে দালান, আবার কেউ করেছে দোকানঘর। ফলে ঐ খালের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া এখন মহা মুশকিল হয়ে দাড়িঁয়েছে। এছাড়াও অনেকে এ ভরা খালের উপর বা কাছাকাছিতে সবজি চাষাবাদ করার আড়ালে টিনের বেঁড়া দিয়ে ঢেকে ফেলেছে খালের একটি অংশ। যাতে করে খালের মূল অংশটি সংকুচিত হয়ে পড়েছে। যাতে করে, বর্ষা মৌসুমে পানি সুষ্টভাবে চলাচল করতে না পারায় দু কুলে পানি চষে বেড়ায়।
তেমনি করে, জেলা সদরের ঐতিহ্যবাহী ঈদগাঁও নদীসহ ছোট-বড় অসংখ্য নদী খাল দখলের থাবায় গড়ে উঠছে নতুন নতুন স্থাপনা। অন্যদিকে এসব খালের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাওয়ায় প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে দূ-কুল ছাপিয়ে পুরো গ্রাম প্লাবিত হয়ে হাটাচলাতো দুরের কথা,ফসল ও ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়ে থাকে। ঈদগাঁওর কজন বয়োবৃদ্ধের মতে, এই খালে এক সময় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। বাজার থেকে গ্রামবাসীকে মাছ কিনতে হতো না। এখন মাছ তো দুরের কথা সেচের পানিও খুঁজে পাওয়া যায় না। নদী ভরাট ও দখল হয়ে যাওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে অনেক ফসলি জমি সেচের অভাবে অনাবাদী পড়ে থাকতে দেখা যায়। দ্রুত দখলের থাবা থেকে নদী-খালগুলো দখলমুক্ত করে খনন করা না হলে আগামীতে এসব খালের কোন স্মৃতি চিহ্নও খোঁজে পাওয়া যাবে না বলে মনে করেন তারা। অন্যদিকে দখল দারিত্বের কবলে পড়েছে কক্সবাজার সদর উপজেলার বৃহত্তর ঈদগাঁওর ছড়া-খাল। স্বেচ্চাচারিভাবে নদীতীরে দোকান পাঠ,কৃষি খামার এমনকি ঘর বাড়ী ও নির্মাণ করা হয়েছে নদীর মধ্যে। পানির প্রবাহ হারিয়ে এ সমস্ত ছড়া খাল মুমুর্ষ দশায় এবং দখলদারিত্ব নদীর অস্থিত্বকে হারিয়ে দিয়েছে। ঈদগাঁও নদী এখন আর সেই ঐতিহ্যময় নদী নেই। এ নদীর বুকেই গড়ে উঠেছে পাড়া গ্রাম। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের তেমন কোন ভূমিকা না থাকায় দখলদারিত্ব স্থায়ী হয়ে পড়েছে। এইসব ছড়া খালের উপর অবৈধ দখল উচ্ছেদের বিষয়ে এলাকার সচেতন লোকজনের পক্ষ থেকে জোর দাবী উঠেছে। অন্যথায় ঈদগাঁওর ছোট বড় সকল নদী,খাল,ছড়া গুলো অস্থিত্ব সংকটে পড়েছে। নানামূখী অব্যবস্থাপনার কারণে পানি প্রবাহ হারানো নদীগুলো এভাবে দখলে চলে যাচ্ছে। অবৈধ দখলে চলে যাওয়া ছড়া বা খাল উদ্ধারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তড়িৎ পদক্ষেপ গ্রহণ এখন সময়ের দাবী বলে মনে করেন অভিজ্ঞ মহল।
উল্লেখ্য যে, বিগত ২/৩ বছর পূর্বেও ঈদগাঁওর মাইজ পাড়ার খালটি অর্ধ খনন করে চলে যায় সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ।