দীপন বিশ্বাস, কক্সবাজার :
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার ৪ টি ইউনিয়নের ১৬০টি ভূমিহীন পরিবার সরকারী খাস জমি বরাদ্ধ পেয়েছে। এদের প্রত্যেককে ৪/৫ শতক করে জমি বরাদ্ধ দেয়া হয়। ইতোমধ্যে ভূমিহীন পরিবারগুলোকে তাদের জমির দলিল, দখল ও খতিয়ান বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
উপজেলা ভূমি অফিস সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার হলদিয়া পালং ইউনিয়নের বনরূপা আশ্রয়ণ প্রকল্পে এক’শ পরিবার, জালিয়াপালং ইউনিয়নের ডেইলপাড়া আশ্রয়ণে ৩০ পরিবার, পালংখালী ইউনিয়নের পালংখালী আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১০ পরিবার ও সদর রাজাপালং ইউনিয়নের টিএন্ডটি আশ্রয়ণে ২০ ভূমিহীন পরিবারকে এই জমি বরাদ্ধ দেয়া হয়। এছাড়াও উপজেলার ৫ ইউনিয়নের মধ্যে বাকী ইউনিয়ন রতœাপালংয়ের একটি প্রকল্প প্রস্তাব আকারে জেলা থেকে ইতোমধ্যে ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি খুব শ্রীঘই অনুমোদিত হয়ে আলোর মুখ দেখবে।
উখিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) একরামুল ছিদ্দিক জানিয়েছেন, বর্তমান সরকারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য দেশে কোন ভূমিহীন পরিবার থাকবে না। একে একে সব ভূমিহীন পরিবারের আশ্রয় হবে। তারই ধারাবাহিকতায় উপজেলার ১৬০ টি ভূমিহীন পরিবারকে সরকারী খাস জমি বরাদ্ধ দেয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, ভূমিহীন পরিবারগুলো খাস জমির দলিল ও খতিয়ান গ্রহণ করার সময় খুবই উৎফুল্ল দেখা গেছে। তাদের বরাত দিয়ে এই কর্মকর্তা জানান, দীর্ঘদিন পর নিজের নামে এক খন্ড জমি পাওয়ায় তারা মহাখুশি। সরকারের গৃহীত নানা কর্মকান্ডের তারা ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। পর্যায়ক্রমে উক্ত উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে যেসব খাস জমিগুলো আছে সবগুলোই একে একে অসহায় ভূমিহীনদের মধ্যে বরাদ্ধ দেয়া হবে। ইতোমধ্যে পালংখালী ইউনিয়নে ভূমিহীনদের যাচাই-বাছাই পক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। অচিরেই তাদেরকে এসব জমি বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
হলদিয়াপালং ইউনিয়নের খাস জমি বরাদ্ধ পাওয়া উপকারভোগি বনরূপা আশ্রয়ণের ফরিদ আলম বলেন, ‘আই দিনমজুরী হাম গরিয়েনে দিনে আনি দিনে খায়, আই সরকাররতুন জমিন পাইয়ুম হ-নদিন চিন্তা ন-গরি। অর্থাৎ (আমার পেশা দিনমজুর, আমি প্রতিদিন যা উপার্জন করি তা নিয়ে আমার সংসার চলে, আমি যে সরকার থেকে খাস জমি বরাদ্ধ পাব, তা কোনদিন চিন্তা করিনি’।
উপকূলীয় ইউনিয়ন জালিয়াপালংয়ের ডেইল পাড়া আশ্রয়ণের উপকারভোগি আবুল হাশেম জানান, ভোর হলে সাগরে মাছ আহরণে যায়। মাছ মিললে তা বিক্রি করে সংসার চালায়। অনেক সময় মাছ পাওয়া যায় আবার অনেক সময় মিলে না। না মিললে দশ জনের সংসার চালাতে খুবই কষ্ট হয়। দাদনের টাকার কিস্তি নিয়ে মাঝে মধ্যে খুব বিপাকে পড়ে যায়। এখন নিজের নামে একখন্ড জমি খুবই ভাল লাগছে।
উপজেলা সদর রাজাপালং ইউনিয়নের টিএন্ডটি আশ্রয়ণের আবদুস সালাম ও পালংখালী আশ্রয়ণের মো:হাশেমও একই অভিমত ব্যক্ত করেন। তারা বলেন, নিজের নামে এক খন্ড জমি পাওয়া খুবই ভাগ্যের ব্যাপার। আমরা খাস জমি বরাদ্ধ পেয়ে খুব খুশি। সরকারের এই পদক্ষেপ গরীব ও অসহায় মানুষের কল্যাণের জন্য ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
ভূমি কর্মকর্তা একরামুল ছিদ্দিক বলেন, আমি উখিয়ায় যোগদানের পর বিভিন্ন সময়ে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জনকল্যাণে অনেক কাজ করেছি। এছাড়াও দীর্ঘদিন অবৈধ দখলে থাকা উখিয়া সদর ভূমি অফিসের পুকুর ও জালিয়াপালং ইউনিয়নের সোনারপাড়া ভূমি অফিসের পুকুরসহ উখিয়া বাজার, সোনারপাড়া বাজার, পালংখালী বাজারসহ একাধিক অবৈধ দখলে থাকা খাস জমি উদ্ধার করেছি।
আমার আবেদন থাকবে উখিয়ার প্রকৃত ভূমিহীনরা যেন খাস জমি বন্দোবস্তের জন্য আমার কাছে আবেদন করেন। চেষ্টা করছি মানুষের কল্যাণে নিজেকে সপে দিতে।