মোহিব্বুল মোক্তাদীর তানিম :

ছবি দুটি আপনাকে নাড়া দিবেই।
বামের ছবিতে দেখা যাচ্ছে- জেরুজালেমে আমেরিকান দূতাবাসের উদ্বোধন করছে ট্রাম্পকন্যা ইভানকা। প্রস্তরফলক উন্মোচিত হচ্ছে যাতে বড় করে লেখা ডোনাল্ড ট্রাম্প যদিও ট্রাম্প স্বশরীরে সেখানে উপস্থিত থাকেননি।
ডানের ছবিতে- হুইল চেয়ারে বসে হাতে বানানো গুলতি নিয়ে ছুঁড়ছেন ফিলিস্তিনি তরুণ ফাদি আবু সালাহ। দেশমাতৃকার পক্ষে স্লোগান দিতেন তিনি। ইসরাইলের টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেটের প্রতিরোধে হাতে বানানো গুলতি দিয়ে ছুঁড়তেন পাথর।গত সোমবার ৫০ হাজার ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভে সকাল থেকেই হুইল চেয়ারে প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন সালাহ। একটা পর্যায়ে শান্তিপূর্ণ এ বিক্ষোভে ইসরাইলি সেনারা নির্বিচারে গুলি চালালে তিনিও প্রতিরোধ করা শুরু করেন। দুপুরের পরেই ইসরাইলি সেনাদের গুলিতে নিহত হন এই বীর। শেষ সময়েও হাতে ছিল গুলতি, পাশে ছিল হুইল চেয়ার।
বামের ছবি’র হাসোজ্জল হাততালি’র আড়ালে লুকিয়ে আছে পবিত্র শহর জেরুজালেম নিয়ে অপবিত্র কূট-কৌশল ও দখলদারি রাজনীতি।
অপরদিকে ডানের ছবি বার্তা দিচ্ছে- দাসত্ব নয় স্পর্ধাই জীবন, প্রতিরোধেই মুক্তি। মানুষকে বাঁচতে হবে মর্যাদার সাথে। যেন জানান দিচ্ছে- মানুষ মানে অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা নত না করা।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত বছর ডিসেম্বরে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসাবে স্বীকৃতি দেন। একইসাথে তিনি ঘোষণা করেছিলেন – আমেরিকার দূতাবাস তেল আবিব থেকে সরিয়ে জেরুজালেমে নিয়ে আসা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে শুধুমাত্র ফিলিস্তিনরাই আপত্তি করেনি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সিংহভাগই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের বক্তব্য – জেরুজালেমের সার্বভৌমত্ব-বিতর্কের সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এই শহরকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া ঠিক নয়। এ কারণে, ইসরায়েলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে এমন সব দেশই এখনও তেল আবিবেই তাদের দূতাবাস রেখে দিয়েছে।
জেরুজালেম নিয়ে ইসরাইল-আমেরিকা’র এই আগ্রাসনের রয়েছে কূট-কৌশলময় ইতিহাস।
ফিলিস্তিনের গাজা থেকে দুই মাইল উত্তরে কিবুটস এলাকায় ১৯৩০’র দশকে পোল্যান্ড থেকে আসা ইহুদীরা কৃষি খামার গড়ে তুলেছিল। ইহুদিদের পাশেই ছিল ফিলিস্তিনী আরবদের বসবাস। সেখানে আরবদের কৃষি খামার ছিল। তারা কয়েক শতাব্দী ধরে সেখানে বসবাস করছিল।
সে সময় মুসলমান এবং ইহুদীদের মধ্যে সম্পর্ক মোটামুটি বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল।
১৯১৭ সালে থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত ফিলিস্তিনের ভূমি ব্রিটেনের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ১৯১৭ সালের নভেম্বর মাসে তুরস্কের সেনাদের হাত থেকে জেরুজালেম দখল করে ব্রিটেন। তখন ব্রিটিশ সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে ফিলিস্তিনের মাটিতে ইহুদিদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্র গঠনের জন্য সহায়তা করবে।
১৯৩৩ সালের পর থেকে জার্মানির শাসক হিটলার ইহুদিদের প্রতি কঠোর হতে শুরু করেন। ইতোমধ্যে জাহাজে করে হাজার হাজার ইহুদি অভিবাসী ফিলিস্তিনী ভূখণ্ডে আসতে থাকে। তখন ফিলিস্তিনী আরবরা বুঝতে পারে যে তাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ছে।
১৯৩০’র দশকের শেষের দিকে ব্রিটেন চেয়েছিল হিটলারের নাৎসি বাহিনীর বিরুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের অবস্থান জোরালো করতে। সেজন্য আরব এবং ইহুদী- দু’পক্ষকেই হাতে রাখতে চেয়েছিল ব্রিটেন। ১৯৩৯ সালের মাঝামাঝি ব্রিটেনের সরকার একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করে যেখানে বলা হয়েছিল পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য পঁচাত্তর হাজার ইহুদি অভিবাসী আসবে ফিলিস্তিনী ভূখণ্ডে। অর্থাৎ সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছিল।

ব্রিটেনের এ ধরনের পরিকল্পনাকে ভালোভাবে নেয়নি ইহুদিরা। তারা একই সাথে ব্রিটেন এবং হিটলারের বিরুদ্ধে লড়াই করার পরিকল্পনা করে। তখন ৩২ হাজার ইহুদি ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়। সেখান থেকে সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়ে ইহুদি সৈন্যরা ব্রিটেন এবং আরবদের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের বাহিনীর দ্বারা লাখ-লাখ ইহুদি হত্যাকাণ্ডের পর নতুন আরেক বাস্তবতা তৈরি হয়। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার পর যেসব ইহুদি বেঁচে ছিলেন তাদের জন্য জন্য কী করা যায় সেটি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।

তখন ফিলিস্তিনী ভূখণ্ডে ইহুদীদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্র গঠনের চিন্তা আরো জোরালো হয়। আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান ইসরায়েল রাষ্ট্রের পক্ষে জোরালো অবস্থান তুলে ধরেন। ট্রুম্যান চেয়েছিলেন হিটলারের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া এক লক্ষ ইহুদিকে অতি দ্রুত ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডে জায়গা দেয়া হোক।
কিন্তু ব্রিটেন বুঝতে পারছিল যে এতো বিপুল সংখ্যক ইহুদিদের ফিলিস্তিনী ভূখণ্ডে নিয়ে গেলে সেখানে গৃহযুদ্ধ হবে।
এ সময় ইহুদিদের সশস্ত্র দলগুলো ব্রিটিশ সৈন্যদের উপর ফিলিস্তিনের বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালানো শুরু করে।
ইহুদি সশস্ত্র দলগুলো ব্রিটিশ বাহিনীর উপর তাদের আক্রমণের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল এমন একটি পরিস্থিতির তৈরি করা যাতে ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের জন্য ব্রিটেন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়। তখন সমাধানের জন্য ব্রিটেনের উপর চাপ বাড়তে থাকে।
এরপর বাধ্য হয়ে ব্রিটেন বিষয়টিকে জাতিসংঘে নিয়ে যায়। ১৯৪৭ সালের নভেম্বর মাসে ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডে দু’টি রাষ্ট্র গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় জাতিসংঘ। একটি ইহুদিদের জন্য এবং অন্যটি আরবদের জন্য।
ইহুদিরা মোট ভূখণ্ডের ১০ শতাংশের মালিক হলেও তাদের দেয়া হয় মোট জমির অর্ধেক। কিন্তু আরবদের জনসংখ্যা এবং জমির মালিকানা ছিল আরবদের দ্বিগুণ। স্বভাবতই আরবরা এ সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি। তারা জাতিসংঘের এ সিদ্ধান্ত খারিজ করে দেয়।
কিন্তু ফিলিস্তিনীদের ভূখণ্ডে তখন ইহুদিরা বিজয় উল্লাস শুরু করে। অবশেষে ইহুদিরা একটি স্বাধীন ভূখণ্ড পেল। কিন্তু আরবরা অনুধাবন করেছিল যে কূটনীতি দিয়ে এ সমস্যার সমাধান হবে না।
জাতিসংঘের এ সিদ্ধান্তের পর আরব এবং ইহুদিদের মধ্যে দাঙ্গা শুরু হয়ে যায়। তখন ফিলিস্তিনী ভূখণ্ড ছেড়ে যাবার জন্য ব্রিটিশ সৈন্যরা দিন গণনা করছিল। তখন ইহুদিদের সশস্ত্র দলগুলো প্রকাশ্যে আসা শুরু করে। তাদের গোপন অস্ত্র কারখানাও ছিল। কিন্তু ইহুদিদের সবচেয়ে বড় সুবিধা ছিল তাদের বিচক্ষণ নেতৃত্ব।
এর বিপরীতে আরবদের কোন নেতৃত্ব ছিলনা। ইহুদীরা বুঝতে পেরেছিল যে নতুন রাষ্ট্র গঠনের পর আরবরা তাদের ছেড়ে কথা বলবে না। সম্ভাব্য যুদ্ধের জন্য আগে থেকেই তৈরি ছিল ইহুদিরা।
সবার দৃষ্টি ছিল জেরুজালেম শহরের দিকে। মুসলমান, ইহুদি এবং খ্রিস্টানদের জন্য পবিত্র এ জায়গা। জাতিসংঘ যে সিদ্ধান্ত দিয়েছিল সেখানে জেরুজালেম আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণে থাকার কথা ছিল।
কিন্তু আরব কিংবা ইহুদি- কোন পক্ষই সেটি মেনে নেয়নি। ফলে জেরুজালেম শহরের নিয়ন্ত্রণের জন্য দু’পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। জেরুজালেমে বসবাসরত ইহুদীদের অবরুদ্ধ করে রেখেছিল আরবরা।
১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে ইহুদীরা আরবদের উপর পাল্টা আক্রমণ শুরু করে।
যেহেতু আরবদের মধ্যে কোন সমন্বয় ছিল না সেজন্য ইহুদিরা একের পর এক কৌশলগত জায়গা দখল করে নেয়। তখন ফিলিস্তিনের একজন নেতা আল-হুসেইনি সিরিয়া গিয়েছিলেন অস্ত্র সহায়তার জন্য। কিন্তু সিরিয়া সরকার ফিলিস্তিনদের সে সহায়তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। সেখান থেকে ফিরে এসে আল হুসেইনি আবারো যুদ্ধে নামেন। এর কয়েকদিন পরেই তিনি নিহত হন।

ইহুদিরা যখন তাদের আক্রমণের মাত্রা বাড়িয়ে দিলে ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাস নাগাদ বহু ফিলিস্তিনী আরব তাদের বাড়ি ঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু ইহুদিদের ক্রমাগত এবং জোরালো হামলার মুখে ভেঙ্গে পড়তে শুরু করে ফিলিস্তিনীরা। তারা বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়। অন্যদিকে জর্ডানের বাদশাহ আব্দুল্লাহ এবং অন্য আরব দেশগুলোর সরকার তাদের নিজ দেশের ভেতরে চাপে পড়ে যায়।
১৯৪৮ সালের ১৪ই মে ফিলিস্তিন ছেড়ে চলে যায় ব্রিটেন। একই দিন তৎকালীন ইহুদি নেতারা ঘোষণা করেন যে সেদিন রাতেই ইহুদি রাষ্ট্রের জন্ম হবে। ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্মের এক ঘন্টার মধ্যেই আরবরা আক্রমণ শুরু করে। একসাথে পাঁচটি আরব দেশ ইসরায়েলকে আক্রমণ করে।
যেসব দেশ একযোগে ইসরায়েলকে আক্রমণ করেছিল তারা হচ্ছে – মিশর, ইরাক, লেবানন, জর্ডান এবং সিরিয়া। তাদের সৈন্য সংখ্যা ছিল প্রায় ত্রিশ হাজারের মতো। অন্যদিকে ইসরায়েলের সৈন্য সংখ্যা ছিল প্রায় ৩৫ হাজার। কিন্তু আরব দেশগুলোর মধ্যে কোন সমন্বয় ছিলনা। তাছাড়া আরব নেতৃত্ব একে অপরকে বিশ্বাস করতো না।

জেরুজালেম দখলের জন্য আরব এবং ইসরায়েলের মধ্যে চলছিল তীব্র লড়াই। ইহুদিরা ভাবছিল জেরুজালেম ছাড়া ইহুদি রাষ্ট্রের কোন অর্থ নেই। অন্যদিকে মুসলমানদের জন্যও জেরুজালেম পবিত্র জায়গা। তীব্র লড়াইয়ের এক পর্যায়ে ইসরায়েলি বাহিনী পিছু হটতে থাকে। তাদের অস্ত্রের মজুত শেষ হয়ে যায়।
সম্ভাব্য পরাজয় আঁচ করতে পেরে ইহুদিরা নিজেদের শক্তি সঞ্চয়ের জন্য সময় নেয়। আর কিছুদূর অগ্রসর হলেই মিশরীয় বাহিনী তেল আবিবের দিকে অগ্রসর হতে পারতো। তখন জাতিসংঘের মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। যুদ্ধবিরতির সময় দু’পক্ষই শক্তি সঞ্চয় করে। কিন্তু ইসরায়েল বেশি সুবিধা পেয়েছিল। তখন চেকোস্লোভাকিয়ার কাছ থেকে আধুনিক অস্ত্রের চালান আসে ইসরায়েলের হাতে।
যুদ্ধ বিরতী শেষ হলে নতুন করে আরবদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ইসরায়েলি বাহিনী। একর পর এক গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে নেয় ইহুদিরা। তেল আবিব এবং জেরুজালেমের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতিসংঘের মাধ্যমে আরেকটি যুদ্ধ বিরতির মাধ্যমে সে সংঘাত থামে। ইসরায়েলী বাহিনী বুঝতে পরে তারা স্বাধীনতা লাভ করছে ঠিকই কিন্তু লড়াই এখনো থামেনি।

আরব দেশগুলোর মধ্যে পারষ্পরিক আস্থা না থাকার কারণেই ১৯৪৮ সালের যুদ্ধে তারা পরাজিত হয়েছে এবং ইসরায়েল দেশটির জন্ম হয়ে সেটি স্থায়ী হতে পেরেছে। অনেক ঐতিহাসিক বিষয়টিকে এভাবেই দেখেন।
১৯৪৮ সালের পর থেকে সামরিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে অতি দ্রুত উন্নতি লাভ করে ইসরায়েল। তারা সুপার পাওয়ার হিসেবে আবির্ভূত হয়। ১৯৬৭ সাল নাগাদ ইসরায়েল একটি দক্ষ সেনাবাহিনী গড়ে তোলে এবং পরমাণু শক্তি অর্জনের কাছাকাছি চলে যায়। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ও আরব নেতৃত্বের ভুল ও অনৈক্যের সুযোগে ইসরাইল যুদ্ধে জয়লাভ করে।
ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়- পাশ্চাত্যের কূট-রাজনীতির ফাঁদে আরব দেশসমূহের অনৈক্যের সুযোগকে দফায় দফায় কাজে লাগিয়েছে ইসরাইল। এভাবেই বছরের পর বছর ধরে আরবদের ভূমিকে দখল করে নিয়েছে তারা।
মাহাথির মোহাম্মদ একবার ওআইসির একটা সম্মেলনে একটা কথা বলে আমেরিকানদের বিরাগভাজন হয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ইসরায়েলের অতি অল্প সংখ্যক নাগরিকের চেয়ে অনেক অনেক বেশি জনসংখ্যা নিয়ে মুসলিম দেশগুলো পেরে ওঠে না, কারণ ইসরায়েলিরা জ্ঞানে-বিজ্ঞানে এগিয়ে, তারা বিজ্ঞানের নোবেল পুরস্কার পেয়েছে বহুগুণ বেশি। আর মুসলিমদের প্রতিক্রিয়া হলো ক্রোধ। ক্রোধের বশে তারা যা করে, তাতে আরও ক্ষতি হয়, তখন তারা আরও ক্রোধান্বিত হয়, আরও নিজেদের ক্ষতি করে ফেলে। মাহাথির মুসলিম বিশ্বকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা করতে পরামর্শ দিয়েছিলেন।
এতদিন তলে তলে ইসরায়েলকে প্রচ্ছন্ন পৃষ্ঠপোষকতা দিলেও সৌদি আরবের নতুন উত্তরসূরি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান অনেকটা প্রকাশ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন, ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া উচিত ইসরায়েলের। একই পথে হেঁটেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতও। যা ক্ষুব্ধ করেছে অনেক মুসলিম দেশকে।
সমগ্র জেরুজালেমসহ ফিলিস্তিন দখল করে মধ্যপ্রাচ্যে একটি শক্তিশালী ইহুদি রাষ্ট্র গড়ে তোলার ইসরায়েলি নীলনকশা বহুদিনের। ভূমধ্য সাগরের তীর থেকে জর্ডান নদীর পশ্চিম সীমানা পর্যন্ত সে রাষ্ট্রের বিস্তৃতির লক্ষ্যে ইহুদিবাদীরা অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। তারা মনে করে,এ নীলনকশা বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সঙ্গে থাকলেই যথেষ্ট। ইসরায়েলের বাইরে বিশ্বে ইহুদিদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঘাঁটি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
ট্রাম্পের মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তর ফিলিস্তিনিদের জন্য লজ্জার ও শোকের। কিন্তু একই সাথে এই ঘটনা ইসরাইলের জন্য হুঁশিয়ারিও যে, তরুণ ফিলিস্তিনিরা এই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেবে ফিলিস্তিনিরা তাদের অধিকার ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত, নিজের মাতৃভূমিতে বসবাসের অধিকার অর্জন না করা পর্যন্ত এবং ঔপনিবেশিক শকুনের হাত থেকে জেরুসালেম মুক্ত না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবে।
হয়ত- এভাবে রক্তপাত চলতে থাকবে, ফাদি আবু সালাহ’র মত লড়াকুরা শহীদ হবে আরো, শত-শত শিশু মারা যাবে; বিশ্ব বিবেক ঘুমাবে। জাতিসংঘ, ওআইসি রা বিবৃতি দিতে থাকবে।
আরব দেশসমূহের ঐক্যই পারে পবিত্র জেরুজালেমকে স্ব-সম্মানে বহাল করতে।

মোহিব্বুল মোক্তাদীর তানিম
তথ্যপ্রযুক্তিবিদ
mmtanim@gmail.com