অনলাইন পোর্টাল কক্সবাজার নিউজ.কম-এ গত ১০/০৫/২০১৮ ইং তারিখ “পরকীয়ায় আসক্ত স্ত্রীকে তালাক দেয়ায় হয়রানির অভিযোগ” শীর্ষক সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদটি আমার ও আমার পরিবারবর্গের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। সংবাদে বিবৃত তথ্যাদি মিথ্যা, আপত্তিকর ও একজন কর্মজীবি নারীর প্রতি চরম নিষ্ঠুরতা এবং মানহানির শামিল। আমি পারিবারিক জীবনে দীর্ঘ ১৮ বছর যাবৎ স্বামী কর্তৃক ধারাবাহিকভাবে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন-নিগ্রহের শিকারের পর গত ফেব্রুয়ারি মাসে একান্ত নিরূপায় ও বাধ্য হয়ে আইনের আশ্রয় গ্রহণ করি। এ নিয়ে দৈনিক পূর্বকোণে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ইং তারিখ “আলীকদমে স্ত্রীকে নির্যাতন যৌতুকলোভী দুই সহোদরের বিরুদ্ধে মামলা” দৈনিক যুগান্তরে ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ইং তারিখ “আলীকদমে শিক্ষিকা স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগে মামলা”, দৈনিক নয়াদিগন্তের ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ইং তারিখ “স্ত্রী নির্যাতন আলীকদমে দুই শিক্ষকের মামলা”, শীর্ষক সংবাদ প্রকাশিত হয়।

উপরোক্ত মামলা ও পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের জেরে গত ১০/০৫/২০১৮ ইং তারিখ আপনার অনলাইন পোর্টল কক্সবাজার নিউজ.কমে কথিত সংবাদ সম্মেলনের অজুহাতে “পরকীয়ায় আসক্ত স্ত্রীকে তালাক দেয়ায় হয়রানির অভিযোগ” শীর্ষক সংবাদটি প্রকাশিত হয়, যা সর্বৈব মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। প্রকাশিত এ সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়ে মহোদয়ের নিকট নিম্নোক্ত আমার বক্তব্য পেশ করলাম।

১। আলীকদম উপজেলার থোয়াইচিং হেডম্যান পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বরখাস্ত হওয়া শিক্ষক শফিকুল ইসলাম এর সাথে বিগত ২০০১ সালের ১৩ এপ্রিল বিয়ের পর থেকে আমার পিতার বাড়ি থেকে যৌতুক এনে দেওয়ার জন্য শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন করে আসছিলেন। আমার পিতার টাকা খরচ করে তিনি (শফিকুল ইসলাম) সরকারি চাকুরী লাভ করেন। ২০০৬ সালে আমার পিতার টাকায় আলীকদম উপজেলার পান বাজার এলাকায় জমি কিনে সেখানে বসবাস করতে থাকি। ২০১৫ সালে আমার পিতার আর্থিক সহযোগিতা ও আমার চাকুরীর টাকায় উক্ত জমিতে পাকা বাড়ি নির্মাণ করি। এতে শফিকুল ইসলামের কোন অর্থনৈতিক সহযোগিতা ছিল না। শফিকুল ইসলামের পিতার কোন বাড়ি আলীকদম উপজেলায় নেই। অথচ ‘দীর্ঘদিন পূর্বে আমার বাবা বান্দরবানের আলীকদমে বাড়ি করার সুবাদে আমরা সেখানে বসবাস শুরু করি’ মর্মে সংবাদ মাধ্যমকে মিথ্যা তথ্য দিয়েছে শফিকুল।

সংবাদে আমার চরিত্রহনন করে বলা হয়েছে, ‘…একাধিক ব্যক্তির সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়লে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়’। এটি একটি অমানবিক ও একজন কর্মজীবি নারীর প্রতি চরম অশ্রদ্ধা ও মানসিক নির্যাতনমূলক উক্তি। শফিকুল ইসলাম মূলত: তার ছোট ভাই জহিরুলকে আলীকদমে একটি বিদ্যালয়ের দপ্তরী পদে চাকুরী পাইয়ে দিতে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে আমার পিতার কাছ থেকে ৩ লক্ষ টাকা যৌতুক এনে দিতে আমার ওপর চাপ প্রয়োগ করে। আমি এতে আপত্তি জানালে শফিকুল ইসলাম তার অপর দুইভাই জহিরুল ও মনিরুল মিলে আমার ওপর গত ২৮/১২/২০১৭ ইং ও ০৫/০১/২০১৮ ইং তারিখ আমাকে নিষ্ঠুরভাবে শারিরীক নির্যাতন করেন। এ নিয়ে আমি আলীকদম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা গ্রহণ ও মেডিকেল সনদ গ্রহণ করি।

দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিকভাবে সমঝোতা চেষ্টা চালানোর পরও শফিকুল ইসলামের উগ্রতা-অবাধ্যতা-হঠকারিতা ও লাগামহীন মিথ্যাচারীতার কারণে কারণে আমি, আমার পিতা-মাতা, ভাই-বোনসহ আত্মীয়-স্বজন অতীষ্ট হয়ে পড়ি। একপর্যায়ে আমি বাধ্য হয়ে পারিবারিক সিদ্ধান্তে গত ০৭/০২/২০১৮ ইং তারিখ চকরিয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ১৯৮০ সালের যৌতুক নিরোধ আইনের ৪ ধারা এবং ১৮৬০ সালের পেনাল কোডের ধারা ৩২৩/৩০৭/৩৭৭/৫০৬(২) দ-বিধিতে মামলা রুজু করি।

উক্ত মামলার করার জেরে শফিকুল ইসলাম ও তার ভাইয়েরা গত ১৫/০২/২০১৮ ইং তারিখ যৌতুক দাবী করে আমাকে আবারো শারিরীক নির্যাতন করলে আমি নিরূপায় হয়ে আলীকদম থানায় ফোন করি। তখন পুলিশের আশ্রয় নিয়ে আমি হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করি এবং পারিবারিক সিদ্ধান্তে শফিকুল ইসলামসহ তার দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে আলীকদম থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী ২০০৩) এর ১১(গ)/৩০ ধারায় মামলা রুজু করি। এসব মামলা করার পেছনে আমার কথিত কোন ‘পরকীয়া প্রেমিকরা’ কিংবা আলীকদম থানার ওসির কোনরূপ যোগসাজশ নেই। আলীকদম থানার মামলা হতে শফিকুল ইসলাম গত ০১/০৩/২০১৮ ইং তারিখ জামিনে আসার পর গত ০৬/০৩/২০১৮ ইং তারিখ সকাল ৬.৩০ ঘটিকায় আমার বাড়িতে এসে পুনরায় আমার ওপর আক্রমণ করেন। আমি এ ঘটনা আত্মীয়-স্বজন ও আলীকদম থানায় ফোনে জানালে পুলিশ আমার বাসায় এসে শফিকুল ইসলামের কবল থেকে আমাকে উদ্ধার করেন। এ ঘটনায় আলীকদম থানায় জিডি নং- ২৫২ তারিখ: ০৬/০৩/২০১৮ ইং অন্তর্ভূক্ত হয়।

শফিকুল ইসলাম নিজের অপকর্ম ঢাকতে কথিত সংবাদ সম্মেলনে আমার বিরুদ্ধে কুরুচিকর ও মানহানিকর শব্দ ব্যবহার করেছেন। অথচ তার বিরুদ্ধেই কলেজ ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগে বান্দরবান নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে মামলা নং- ১৩/২০১৮ ইং রুজু হয়েছে। যা বিজ্ঞ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এর তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে মর্মে ম্যাজিস্ট্রেট মহোদয় নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে ইতোমধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।

২। আমি পারিবারিক জীবনে স্বামী কর্তৃক চরম নির্যাতনের শিকার হয়ে দীর্ঘ ১৮ বছরের সংসার জীবনের শেষে আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছি। কিন্তু আমার মামলা দায়ের করার পর শফিকুল ইসলাম নিজের অপকর্ম ঢাকতে আমাকে কথিত তালাক প্রদান করেছেন মর্মে রটনা করে বেড়াচ্ছেন। এমনকি তার ঔরষজাত একমাত্র কন্যা সন্তান আমার মেয়েটিও তার নোংরামি থেকে রক্ষা পায়নি।

৩। কথিত সংবাদ সম্মেলনে শফিকুল ইসলাম আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করার অভিযোগ এনেছেন। অথচ তিনি নিজে বাদী হয়ে ঘটনাসমুহকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত, আমাকে ন্যায়বিচার, সামাজিক নিরাপত্তা ও ভরণ পোষণ থেকে বঞ্চিত করার উদ্দেশ্যে আমিসহ আমার ২ সহোদর ভাই, মামা এবং আমার মামলার সাক্ষীদেরকে আসামী করে বান্দরবানে বিজ্ঞ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পিটিশন মামলা নং-

৩৯/২০১৮, তারিখ: ২৫/০৩/২০১৮ ইং দায়ের করেন। বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে আলীকদম উপজেলা শিক্ষা অফিসারের তদন্তে সাক্ষীদের সাক্ষ্যে উক্ত মামলার ঘটনা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়াও শফিকুল ইসলাম কিছু কুচক্রী মহল ও সরকার বিরোধী প্রভাবশালী লোকদের ইন্ধনে আমার নামে এবং মামলা নেওয়ার কারণে অফিসার ইনচার্জ (ওসি)’র নামে এবং স্থানীয় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মানহানিকর ও আপত্তিকর আবেদন সরকারের উর্ধতন মহলে পেশ করে আমাদের সামাজিক ও পেশাগত সুনাম ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। যা সর্বশেষ কথিত সংবাদ সম্মেলনে তার লিখিত বক্তব্যই প্রমাণ করে। মামলা তুলে না নিলে অপহরণ করে হত্যা, এসিড নিক্ষেপ করে ক্ষতিসাধন, আলীকদমস্থ আমার বাড়ি থেকে আমাকে উচ্ছেদ করাসহ বিভিন্ন ধরণের ভয়ভীতি দিয়ে যাচ্ছেন শফিকুল ইসলাম।

৪। দীর্ঘ চাকুরীজীবনে আমার অর্জিত সুনামকে ভূলুণ্ঠিত করতে শফিকুল ইসলাম হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে আমার চরিত্রের ওপর উদ্দেশ্যমূলকভাবে কালিমালেপন করছেন। উল্লেখ্য যে, আমি নিজের প্রচেষ্টা, মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে বান্দরবান জেলায় চারবার জেলা শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হই। আমার পেশাগত উৎকর্ষতার কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পরিচালতি একসেস টু ইনফরমেশন (অ২র) এর আওতায় মাল্টিমিডিয়া ডিজিটাল কনটেন্ট প্রতিযোগিতায় ২০১৪ সালে এবং ২০১৭ সালে সমগ্র বাংলাদেশে সেরা দশজন শিক্ষকের মধ্যে আমি স্থান পাই। আমার এই অর্জনের স্বীকৃতিস্বরূপ ৫ জুন ২০১৪ ইং তারিখে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়, ২১ ডিসেম্বর ২০১৭ ইং তারিখ মাননীয় শিক্ষা সচিব মহোদয় আমাকে ‘সেরা শিক্ষক এ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করেন। এ সময় আমি সরকারিভাবে দুইটি লেপটপ পুরস্কার পাই। এ অর্জনের সুত্র ধরে ২০১৫ সালের ‘স্কুলস্ অনলাইন পার্টনারশীপ (কানেক্টিং ক্লাসরূম) এর ওপর ইংল্যা- সফর করি। এ সময় ল-নের হেভারিং এর মেয়র ব্রায়ান ইগলিং আমাকে মেয়র ভবনে ইংল্যা-ের ঐতিহ্যবাহি রাণীর পোষাক পরিয়ে সম্মাননা ও এ্যাওয়ার্ড প্রদান করেন। তার ধারাবাহিকতায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থানুকুল্যে আমি ২০১৭ সালে শিক্ষা সফরে মালয়েশিয়া ভ্রমণ করি।

বর্তমানে শফিকুল ইসলাম, তার ভাই মনিরুল ইসলাম ও জহিরুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে ৩টি মামলা বিচারাধীন আছে। মামলা বিচারাধীন থাকাকালীন বাদীর চরিত্র হনন করে এ ধরণের সংবাদ সম্মেলন করে বক্তব্য প্রদান ও প্রচার করা আদালত অবমাননার শামিল।

আমি উপরোক্ত শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি।

বিনীত

জয়নব আরা বেগম

সহকারি শিক্ষক

আলীকদম আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

আলীকদম, বান্দরবান।

তারিখ: ১৩/০৫/২০১৮ ইং।