মোঃ নাজমুল সাঈদ সোহেল, চকরিয়া:
চকরিয়া বিদ্যুৎ সরবরাহ বিভাগের আবাসিক প্রকৌশলী ফয়জুল আলীম আলোকে শাস্তিমূলক বদলী করা হয়েছে। মঙ্গলবার বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মচারী পরিদপ্তর (বিউবো’র) উপ-পরিচালক-১ মেহেরুন নেছা খানম স্বাক্ষরিত এক আদেশে এ বদলীর আদেশ দেওয়া হয়। তার বদলীর আদেশের খবর চকরিয়ায় জানাজানি হলে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। এদিন সন্ধ্যায় চকরিয়া পৌরশহরের চিরিঙ্গা এলাকায় সাধারণ বিদ্যুৎ গ্রাহকরা মিষ্টি বিতরণ করে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
কক্সবাজার বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নিয়ন্ত্রনাধীন চকরিয়া বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও সরেজমিনে সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়,চকরিয়া আবাসিক প্রকৌশলীর কার্যালয়টি এখন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘুষ বাণিজ্য, দালালচক্রের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এ অফিসে বিদ্যুৎ গ্রাহকরা দূর্নীতিবাজ আবাসিক প্রকৌশলীর হাতে প্রায় সময় তার অফিসে ঘুষ বানিজ্যের প্রতিবাদ করায় চরমভাবে লাঞ্চিত হয়রানির শিকার হতে হয়ে আসছিল প্রতিনিয়ত। এ উপজেলার আভ্যান্তরিণ সড়ক গুলোতে চলাচলরত সহস্রাধিক ব্যাটারী চালিত রিক্সা ও টমটম গাড়ির চার্জ দেওয়ার জন্য গড়ে উঠা প্রায় অর্ধশতাধি গ্যারেজ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠে আসছে বেশ কিছুদিন ধরে ওই দূর্নীতিবাজ আবাসিক প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। এসব টমটম গ্যারেজে ব্যবহার করা বিদ্যুতের ঘাটতি পুরণ করতে সাধারণ গ্রাহকদেরকে অতিরিক্ত বিলের বোঝা বহন করতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত ।
এ অফিসটিকে ঘিরে দালালচক্র কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন বিদ্যুৎ সংযোগের নামে মিটার, বৈদ্যুতিক তার ও খুঁটি বাণিজ্য। প্রকৌশলী ফয়জুল প্রতিটি এলাকায় কিছু সংখ্যক দালাল নিয়োগ করে আবাসিক ও বাণিজ্যিকসহ বিভিন্ন সংযোগের জন্য মিটার প্রতি ২০ হাজার টাকা থেকে লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ঘুষের টাকা না দিলে মিটার ও তার সংকটের অজুহাত দেখিয়ে সময় পার করেছেন মাসের পর মাস। এমন কি লাখ টাকা আদায়ের এক বছর পরও মিটার সরবরাহ দেওয়া হয়নি।ইতিপূর্বে ১৫ মার্চ আবাসিক প্রকৌশলীর নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির ব্যাপারে অভিযোগ তুলে অবিলম্বে তার অপসারণ ও শাস্তির দাবী জানিয়ে পৌরসদরে মানব বন্ধন কর্মসূচীও পালন করেছে এলাকাবাসী।
ভুক্তভোগীরা জানান, চকরিয়া পৌরশহরে নির্মাণাধীন ‘চকরিয়া জনতা শপিং টাওয়ার’র প্রকৌশলী তারা শংকর ভাদুড়ী জানান, তিনি ওই মার্কেটের ব্যবহৃত বিদ্যুৎ বিল বাবদ দেড় লাখ টাকা করে তিন লাখ টাকা জমা দেন। কিন্তু মিটারে রিডিং কমানো হয়নি। এ ঘটনায় তিনি বিষয়টি জানার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ গেলে আবাসিক প্রকৌশলী ফয়জুল আলীম আলো তাকে অপমান করে বের করে দেন।এছাড়াও বৈদ্যুতিক খুঁটি ও ট্রান্সফর্মার পরিবর্তন করতেও তাকে মোটা অঙ্কের ঘুষ দিতে হয়। ঘুষ বাণিজ্যের বিষয় নিয়ে সাধারণ গ্রাহকের সাথে তার মাঝে মধ্যেই বাকবিতন্ডার ঘটনাও ঘটে। এসব ঘটনায় তার অপসারণ ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবীতে মিছিল ও মানববন্ধন চালিয়ে যাচ্ছে গ্রাহকরা। ভুক্তভোগী গ্রাহকদের এসব আন্দোলন ঠেকাতে আবাসিক প্রকৌশলী তার সৃষ্ট দালালদের দিয়ে পাল্টা কর্মসূচী পালন করছে।
উল্লেখ্য যে,পিডিবির গণশুনানিকালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার ড. নাসির উদ্দিন আহমেদের কাছে চকরিয়া পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের শমসের পাড়ার ছৈয়দ আলমের ছেলে মনসুর আলম মিন্টু অভিযোগ করে বলেন, ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে চেকের মাধ্যমে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা দিয়ে এখনোও বিদ্যুৎ সংযোগ ও মিটার পাইনি। পরবর্তীতে আরও ৫০ হাজার টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় উল্টো আমার বৃদ্ধ বাবাকে গলা ধাক্কা দিয়ে বিদ্যুৎ অফিস থেকে বের করে দিয়েছেন পিডিবির চকরিয়া উপজেলার আবাসিক ফয়জুল আলীম।এসময় অভিযোগকারী বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে ছৈয়দ আলমের মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের অ্যাকাউন্ড থেকে পিডিবি কর্মকর্তাকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা দেওয়া (চেক নং-৩৪৬৬৪৫৭)ও উত্তোলনে ব্যাংকের হিসাব বিবরণী কপি এবং সংশ্লিষ্ট কাজগপত্রও দুদক কমিশনারের হাতে দেন।
এবিষয়ে মনসুর আলম মিন্টু বলেন, বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে ২০১৭ সালের ৮ জানুয়ারি বাবার (ছৈয়দ আলম) অ্যাকাউন্ড থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা দিই। টাকা নিয়ে এক বছর ধরে বিদ্যুৎ সংযোগ দিবে দিবে বলে কালক্ষেপন করতে থাকেন। পরবর্তীতে চলতি বছরের ৭ মার্চ আমার বাবা চকরিয়া বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে প্রকৌশলী ফয়জুল আলীম আলোর কাছে সংযোগ দিতে দেরি হওয়ার কারণ জানতে চান। এসময় তাড়াতাড়ি সংযোগ পেতে হলে তিনি আরও ৫০ হাজার টাকা দাবি করলে বাবা রাজি হননি। তখন বাবা আগের টাকাগুলো ফেরত চান। তখন প্রকৌশলী ফয়জুল উল্টো বিদ্যুৎ অফিস থেকে আমার ৬৫ বছর বয়সী বৃদ্ধ বাবাকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছিলেন।
তিনি আরও বলেন, টাকা দেওয়ার বিষয়, বাবাকে গলা ধাক্কা দিয়ে অপমানের বিষয়গুলো স্থানীয় চেয়ারম্যানকে জানানো হলেও কোনো সুরাহা পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে ২২ মার্চ চকরিয়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে পিডিবির প্রকৌশলী ফয়জুল আলীম, দেবানন্দ দত্তসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে আমার বাবা একটি ফৌজদারী মামলা দায়ের করেন। মামলার খবর পেয়ে পরদিন বিকেলের দিকে ফয়জুলসহ আরও বেশ কয়েকজন আমাদের বাড়িতে গিয়ে বাবাকে আবারো অপমান করেন। এমনকি মামলা তুলে নিতে নানা ধরনের হুমকি দেন, তখন বাবা রাজি হননি। পরে বাড়ি থেকে ফিরে গিয়ে সরকারি কাজে বাঁধা দিয়েছে বলে বাবার বিরুদ্ধে মামলা করেন পিডিবির ওই প্রকৌশলী। এ মামলায় আমার বাবাকে থানায় ধরে নিয়ে যায়।
এসময় কান্না জড়িত কণ্ঠে মনসুর আলম মিন্টু আরও বলেন, আমার বৃদ্ধ বাবা এখনো জেলহাজতে। ওরা মিথ্যে মামলা দিয়ে বাবাকে জেল খাটাচ্ছে। সংযোগ পেতে টাকা দিয়ে হয়রানি কিনে নিয়েছি! তবে আমি আজ এর সু–বিচার পেয়েছি।যত বড়ই দূর্নীতিবাজ হউক না কেন দেশে যে এখন আইন আছে তা সাধারণ জনসমাজে প্রমাণীত হল দূর্নীতিবাজ আবাসিক বিদ্যুৎ প্রকৌশলী ফয়জুল আলীম আলোকে শাস্তিমূলক বদলী করার মধ্য দিয়ে।